এখনো মেলেনি গুপ্তধন, চলছে উদ্ধার কাজ
রাজধানীর মিরপুরের একটি বাড়িতে গুপ্তধন আছে- এমন তথ্যের ভিত্তিতে বাড়িটিতে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। শনিবার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে খনন কাজ শুরু করে মিরপুর থানা পুলিশ।
জানা গেছে, গুপ্তধন উদ্ধারে মিরপুরের বাড়িটির দুটি ঘরে চার ফিট খনন করা হলেও এখনো কিছুর সন্ধান মেলেনি। তবে, বিকেল নাগাদ আট ফিট পর্যন্ত মাটি খনন করা হবে। এরপরও কিছু না পাওয়া গেলে উদ্ধার কাজের সমাপ্তি ঘোষণা করা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন দায়িত্বরত ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ারুজ্জামান।
আনোয়ারুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, মিরপুর ১০ নম্বরের সি ব্লকের ১৬ নম্বর রোডের ১৬ নম্বর বাড়ির মাটির নিচে গুপ্তধন রয়েছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে বাড়িটিতে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ শুরু করা হয়েছে। বিকেল পর্যন্ত এ উদ্ধার কাজ চলবে। মাটির নিচে আট ফিট পর্যন্ত খনন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।
এদিকে, গুপ্তধন উদ্ধারে মিরপুরের দুই কাঠার এই বাড়ির বাম পাশের মাঝামাঝি দুটি ঘরের মাটির নিচে গুপ্তধন উদ্ধারের চেষ্টা চলানো হচ্ছে। ২০ জন শ্রমিক মাটি খনন কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। সকাল থেকে এ পর্যন্ত ঘরের ভেতরে চার ফিট পর্যন্ত খনন কাজ শেষ হলেও এখন পর্যন্ত গুপ্তধনের কোনো সন্ধান মেলেনি।
উদ্ধার কাজে ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের তত্ত্বাবধানে প্রায় ৩০ জন পুলিশ বাড়িটি ঘিরে রেখেছেন। পাশাপাশি উৎসুক জনতা নির্ধারিত সীমানার সামনে দাঁড়িয়ে ভিড় জমিয়েছেন। কখন গুপ্তধন উদ্ধার হবে সে অপেক্ষায় যেন সবাই অস্থির হয়ে রয়েছেন।
সন্ধানদাতা তৈয়ব জাগো নিউজকে বলেন, বাড়িটিতে দুই মণেরও বেশি স্বর্ণালংকার রয়েছে। এই বাড়ির মূল মালিক দিলশাদ খান। তিনি ১৯৭১ সালে পাকিস্তান চলে যান। তার দূর সম্পর্কের আত্মীয় সৈয়দ আলম ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আলমও পাকিস্তানে থাকেন। মাঝে মধ্যে দেশে আসেন। বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন।
তিনি জানান, আলম তাকে তথ্য দেন, মিরপুরের ওই বাড়িটির নিচে দুই মণের বেশি স্বর্ণালংকার ও দামি জিনিসপত্র রয়েছে। পাকিস্তানে থাকাকালে আলমকে ওই তথ্য দেন দিলশাদ। এরপর আলমকে নিয়ে তৈয়ব মাটির নিচে লুকিয়ে রাখা এ সম্পদ দখলে নিতে টেকনাফ থেকে ঢাকায় আসেন। ঢাকায় আসার পর তৈয়বকে আড়ালে রেখে গোপনে বাড়িটির বর্তমান মালিকের সঙ্গে আঁতাত করেন আলম। তারা মাটির নিচের সম্পদ হাতিয়ে নেয়ার পাঁয়তারা করেন। বিষয়টি টের পেয়ে তিনি তার পূর্বপরিচিত রাবেয়া চৌধুরী নামে এক নারীকে নিয়ে থানায় যান। তারা বিষয়টি জানিয়ে জিডি করার সিদ্ধান্ত নেন।
কীভাবে বিশ্বাস করলেন ওই বাড়ির নিচে গুপ্তধন রয়েছে? এমন প্রশ্নে তৈয়ব বলেন, আলম এমন কিছু তথ্য-উপাত্ত দেখিয়েছেন, তাতে আমার শতভাগ বিশ্বাস- ওই বাড়ির নিচে মহামূল্যবান ধন রয়েছে। যাতে কোনো ব্যক্তি এটা ভোগদখল করতে না পারে তাই পুলিশকে জানানো হয়েছে।
অন্যদিকে, এই বাড়ির বর্তমান মালিক ব্যবসায়ী মনিরুরল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, আমি গত আট বছর আগে এই বাড়িটি ক্রয় করেছি। বর্তমানে দুইজন কেয়ারটেকার বাড়িতে বাস করেন। মিরপুর পল্লবীতে আমার আরেকটি বাড়িতে পরিবার নিয়ে বসবার করি।
তিনি বলেন, আমার বাড়ির নিচে গুপ্তধন রয়েছে, কে বা কারা এ বিষয়ে থানায় জিডি করেন। এরপর গত ১২ জুলাই রাতে জোর করে কয়েকজন যুবক আমার বাড়ির ভেতরে ঢোকার চেষ্টা চালায়। পরদিন আমি মিরপুর মডেল থানায় গিয়ে এ সংক্রান্ত একটি সাধারণ ডায়েরি করি। পাশাপাশি আমার বাড়ির মাটির নিচে যদি কোনো ধরনের গুপ্তধন থাকে তবে তা উদ্ধারের আহ্বান জানাই। এ সংক্রান্ত সকল ব্যয়ভার বহন করারও আশ্বাস দেন বাড়ির মালিক।
মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দাদন ফফির জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাড়ির মালিক দাবিদার তৈয়বের দায়ের করা জিডির পরিপ্রেক্ষিতে বিজ্ঞ আদালতের আদেশে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। ওনাকে সঙ্গে নিয়ে ঘরের দুটি কক্ষে খনন কাজ চলছে। ঘরে বামপাশে চারটি কক্ষ রয়েছে। এর মধ্যে দুটিতে খনন চলছে। পর্যায়ক্রমে সবকটি কক্ষই খনন করা হবে। ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে বাড়িটি খোঁড়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত সবাইকে অপেক্ষা করতে হবে।’
এমএইচএম/এমআরএম/আরআইপি