ভারী বর্ষণে এডিস মশাবাহিত রোগের আশঙ্কা
চলতি বছর ভারী বর্ষণের কারণে এডিস মশাবাহিত রোগের আশঙ্কা করছেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। এডিস মশাবাহিত রোগের প্রতিরোধ ও বৃদ্ধি রোধকল্পে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা।
বুধবার প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। গত ১ জানুয়ারি ১৮ জুলাই পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতাল হতে ৬৮০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর তথ্য পাওয়া গেছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো হাসপাতাল থেকে চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত রোগীর তথ্য পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় এডিস মশাবাহিত রোগের প্রতিরোধ ও বৃদ্ধি রোধকল্পে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আইইডিসিআর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা, স্বাস্থ্যশিক্ষা ব্যুরোসহ স্বাস্থ্য অধিদফতর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগসমূহ বর্তমান পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
আইইডিসিআরের পক্ষ থেকে বিভিন্ন গৃহীত পদক্ষেপসমূহ
(১) ঢাকা শহরের সকল হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সকল হাসপাতালের বহিঃবিভাগ ও অন্তঃবিভাগের ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগের দৈনিক প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
(২) ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগের কারণ, লক্ষণসমূহ ও প্রতিরোধ সংক্রান্ত বিভিন্ন জনসচেতনতামূলক লিফলেট তৈরি ও বিতরণ করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত তথ্য ও শিক্ষামূলক উপকরণসমূহ আইইডিসিআর ওয়েবসাইটে হালনাগাদ করা হয়েছে।
(৩) ডেঙ্গুও চিকুনগুনিয়া রোগের চিকিৎসাসংক্রান্ত জাতীয় নির্দেশিকা আইইডিসিআরের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।
(৪) ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে মশকনিধন কার্যক্রম আরও জোরদার করার অনুরোধ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম এবং জনগণের অংশগ্রহণে মশক উৎসস্থল ও বংশবৃদ্ধির স্থানসমূহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার সমন্বিত কর্মসূচি গ্রহণ করার অনুরোধ করা হয়েছে।
(৫) ডেঙ্গু চিকিৎসার ন্যাশনাল গাইডলাইন আপডেট করা হচ্ছে।
(৬) ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল/প্রতিষ্ঠানে (ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল) ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ডাক্তারদেরকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।
(৭) ঢাকা উত্তর এবং দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় মৌসুমপূর্ব, মৌসুম ও মৌসুমউত্তর এডিস মশার তিনটি কীটতাত্ত্বিক জরিপ সম্পন্ন করা হয়েছে।
(৮) ঢাকা শহরে একটি ডেঙ্গু প্রিভেলেন্স সার্ভে সম্পন্ন করা হয়েছে।
(৯) স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা কর্তৃক হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এডিস মশা শনাক্তকরণে একটি জরিপ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।
(১০) ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরশনে এবং সিটি কর্পোরশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া বিষয়ে অবহিতকরণ সভা করা হয়েছে।
(১১) জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সর্তকতামূলক বার্তা, জাতীয়/স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রচার ইত্যাদি কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
(১২) ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় এডিস মশা নিধনে সামাজিক সচেতনতা আন্দোলন পরিচালনা করা হচ্ছে।
(১৩) ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালে দ্রুত ডেঙ্গু রোগ শনাক্তকরণে ডেঙ্গু টেস্ট কীট বিতরণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে ঢাকা মহানগরীতে চিকুনগুনিয়া রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছিল। ঢাকায় অবস্থিত বিভিন্ন হাসপাতাল হতে আইইডিসিআরে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী চিকিৎসা নেয়া সম্ভাব্য চিকুনগুনিয়া ও চিকুনগুনিয়া পরবর্তী আর্থ্রালজিয়া রোগীর সংখ্যা (১২.০৫.২০১৭ হতে ২৮.০৯.২০১৭) ১৩ হাজার ৮১৪ জন এবং আইইডিসিআরে রক্তপরীক্ষায় নিশ্চিত চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এক হাজার তিন জন।
এছাড়া প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে সম্ভাব্য ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছিল দুই হাজার ৭৬৯ জন। এ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য আইইডিসিআরের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এডিস মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে গণমাধ্যমের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অতীতেও জনস্বার্থবিষয়ক বিভিন্ন সমস্যায় গণমাধ্যম সহযোগিতা করেছে। সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টায় এডিস মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। জনসচেতনতা সৃষ্টিতে গণমাধ্যমের সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করা হয়।
এমইউ/বিএ