‘আধিপত্য বিস্তারের’ জেরে ফরহাদ খুন, পরিকল্পনায় রমজান
>> চাঁদার অর্থ ভাগবাটোয়ারা নিয়ে ফরহাদ খুন
>> খুনের পরিকল্পনায় রমজান, মেহেদী ও আশিক
>> আরও এক ব্যবসায়ীকে খুনের পরিকল্পনা ছিল রমজানের
>> রমজান ও আশিক ভারত, মেহেদী এখন যুক্তরাষ্ট্রে
রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, অটোরিকশাস্ট্যান্ড ও ডিস ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অবৈধ অর্থ আদায় এবং সেই অর্থ ভাগবাটোয়ারা নিয়ে বিরোধের জেরে খুন হন স্থানীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ আলী। খুনের পরিকল্পনায় ছিলেন শীর্ষ সন্ত্রাসী রমজান- এমন তথ্য দিয়েছে পুলিশ।
গত ১৫ জুন রাজধানীর উত্তর বাড্ডার পূর্বাঞ্চল ১ নম্বর লেন সংলগ্ন বায়তুস সালাম জামে মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে আসা বাড্ডা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেনকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
আরও পড়ুন >> আ.লীগ নেতা ফরহাদ হত্যার চারদিন পর মামলা
ফরহাদ হত্যায় জড়িতদের ধরতে গুলশান ও শাহআলী এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর বিভাগের একটি দল। অভিযানে ফরহাদ হত্যা মামলার মূলহোতাসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে চারটি বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, চারটি ম্যাগাজিনসহ ১২ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।
শনিবার দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আবদুল বাতেন সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
তিনি আরও জানান, বাড্ডার শীর্ষ সন্ত্রাসী রমজান, মেহেদী ওরফে কলিন্স ও আশিকের পরিকল্পনায় খুন হন ফরহাদ। তারা সবাই এখন বিদেশে পলাতক।
গ্রেফতার হওয়া পাঁচজন হলেন- জাকির হোসেন, আরিফ মিয়া, আবুল কালাম আজাদ ওরফে অনির, বদরুল হুদা ওরফে সৌরভ ও মো. বিল্লাল হোসেন ওরফে রনি।
আরও পড়ুন >> ফরহাদ খুনে জড়িত ৫ ভাড়াটে কিলার গ্রেফতার
আওয়ামী লীগ নেতা ফরহাদ আলী হত্যার ঘটনায় বাড্ডা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। পরে গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর বিভাগ মামলটির তদন্ত শুরু করে। গত ১০ জুলাই হত্যা মামলার অন্যতম আসামি জহুরুল ইসলাম ওরফে সুজনকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি আদালতে ওই হত্যায় জড়িত থাকার বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তার দেয়া তথ্যে উঠে আসে ঘটনার নেপথ্যে জড়িতদের নাম।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আবদুল বাতেন বলেন, ‘এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, অটোরিকশাস্ট্যান্ড ও ডিস ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের অর্থ ভাগবাটোয়ারা নিয়ে বিরোধের জেরে ফরহাদ খুন হন। গ্রেফতার সুজন আদালতে এমন স্বীকারোক্তি দেন।’
পরবর্তীতে ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা গোয়েন্দা পুলিশকে জানায়, ‘হত্যাকাণ্ডের কয়েকদিন আগে মূল পরিকল্পনাকারী রমজান ভারতে চলে যান। রমজান তার আপন ছোট ভাই সুজন এবং অপর দুই সহযোগী- জাকির ও আরিফের ওপর হত্যাকাণ্ড সংঘটনের দায়িত্ব দেন। অপরদিকে শীর্ষ সন্ত্রাসী মেহেদীর সামরিক কমান্ডার অমিত তাদের ভাড়াটে শ্যুটার নুর ইসলাম, অনির, সৌরভ ও সাদকে গুলি করার দায়িত্ব দেন।’
‘পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১৫ জুন সকালের দিকে অমিতসহ ভাড়াটে খুনিরা উত্তর বাড্ডার সুবাস্তু টাওয়ারের সামনে সমবেত হন। অমিতের নির্দেশনা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত হয় যে, নুর ইসলাম, অনির ও সৌরভ মূল কিলিং মিশনে অংশ নেবে। আর অমিতের সঙ্গে ব্যাকআপ হিসেবে থাকবে সাদ ওরফে সাদমান। দুপুর ১২টার দিকে রমজানের ছোট ভাই সুজন কিলিং মিশনে অংশগ্রহণকারী তিন শ্যুটার ও ব্যাকআপ সাদকে জাকিরের সঙ্গে অস্ত্র গ্রহণের জন্য একটা রিকশাগ্যারেজে পাঠান। চারজনকেই অস্ত্র বুঝিয়ে দেন শীর্ষ সন্ত্রাসী মেহেদীর অন্যতম আস্থাভাজন পুলক ওরফে পলক। এরপর জাকির তাদের নিয়ে আরিফের কাছে পৌঁছে দেন। পরিকল্পনা মাফিক আরিফ শ্যুটারদের মসজিদের কাছে নিয়ে গিয়ে বাইরে থেকে টার্গেট ফরহাদকে চিনিয়ে দেন। নামাজ শেষে ফরহাদ মসজিদ থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শ্যুটাররা জনসম্মুখে উপর্যপুরি গুলি করে পালিয়ে যান।’
‘পরবর্তীতে শ্যুটাররা তাদের অস্ত্রগুলো শীর্ষ সন্ত্রাসী মেহেদীর সামরিক কমান্ডার অমিতের কাছে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য পল্লবী এলাকায় যান। সেখানে অমিত তার অপর সহযোগী সুজনের মাধ্যমে অস্ত্রগুলো গ্রহণ করেন। হত্যাকাণ্ডের পর অমিত তাৎক্ষণিক এক লাখ টাকা শ্যুটারদের মাঝে বণ্টন করে দেন।’
‘হত্যাকাণ্ডের পরপরই দেশত্যাগ করেন রমজানের ছোট ভাই সুজন’- যোগ করেন আব্দুল বাতেন।
এক প্রশ্নের জবাবে এ পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘বাড্ডার শীর্ষ সন্ত্রাসী রমজান ও আশিক বর্তমানে ভারত এবং মেহেদী যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। ফরহাদ খুনের পর আরও এক ব্যবসায়ীকে খুন করার পরিকল্পনা করেছিলেন রমজান। তবে ডিবি পুলিশের তৎপরতা ও অভিযানের কারণে তা ভেস্তে যায়।’
ফরহাদ হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত নুর ইসলাম ও শীর্ষ সন্ত্রাসী মেহেদীর সামরিক কমান্ডার অমিত গত ৪ জুলাই মধ্যরাতে গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।
জেইউ/এমএআর/এমএস