অনুদানে ভর করে হাঁটতে চাইছে চসিক
গতবারের চেয়ে প্রায় ৯৮ কোটি টাকা বেশি ধরে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য ২ হাজার ৪২৫ কোটি ৪২ লাখ ৮২ হাজার টাকার বাজেট ঘোষণা করেছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। তবে এই বিশাল বাজেটের বড় অংশই আসবে উন্নয়ন অনুদান খাত থেকে- এমনটাই আশা চসিক কর্তৃপক্ষের।
মঙ্গলবার (১০ জুলাই) দুপুরে নগর ভবনের কেবি আবদুস সাত্তার মিলনায়তনে এ বাজেট ঘোষণা করা হয়। চসিকের তৃতীয় নির্বাচিত মেয়র হিসেবে এটি তার চতুর্থ বাজেট। অধিবেশনে বাজেটের আর্থিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন চসিকের অর্থ স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর শফিকুল আলম।
নির্বাচনের বছরে বেশি টাকা পাবেন এমন আশা পোষণ করে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘উন্নয়ন অনুদানে ১৬৮০ কোটি টাকা আয় ধরা হয়েছে। এটা স্বাভাবিক। আমাদের বেশ কয়েকটি প্রকল্প শুধু একনেকের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। কয়েকটি প্রকল্প অর্থ ছাড়ের অপেক্ষায় আছে। এটা নির্বাচনী বছর। অর্থছাড় নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। গতবারের তুলনায় এবার অনেক বেশি পাবো। টাকা প্রাপ্তির গতি এখন বেশি।’
এছাড়া বাজেটে চসিকের নিজস্ব খাত থেকে আয় ধরা হয়েছে ৬৯৪ কোটি ৯২ লাখ ৮২ হাজার টাকা। এর মধ্যে বকেয়া কর ও অভিকর ১৯১ কোটি ৮ লাখ, হাল কর ও অভিকর ১৪৪ কোটি ৩৪ লাখ, অন্যান্য করাদি ১৩৩ কোটি ২ লাখ, ফিস ৯৯ কোটি ৮০ লাখ, জরিমানা ৫০ লাখ, সম্পদ হতে অর্জিত ভাড়া ও আয় ৭৩ কোটি ১০ লাখ, লভ্যাংশ ৫ কোটি, বিবিধ আয় ২৩ কোটি ৪২ লাখ, ভর্তুকি ২৪ কোটি ৬৫ লাখ ধরা হয়েছে। এছাড়া ত্রাণ সাহায্য ২০ লাখ, উন্নয়ন অনুদান ১ হাজার ৬৮০ কোটি ও অন্যান্য উৎস ৫০ কোটি ৩০ লাখসহ মোট আয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭৩০ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
এদিকে প্রস্তাবিত বাজেটে সর্বোচ্চ ব্যয় ধরা হয়েছে উন্নয়ন প্রকল্পে। এ খাতে ১৩৫৫ কোটি টাকা খরচের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যদিও বিদায়ী অর্থ বছরের সংশোধিত বাজেটে এ খাতে ব্যয় হয়েছে ৩৯৫ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।
এছাড়া বাজেটের অন্যন্য ব্যায়ের খাত গুলোতে বেতনভাতা ও পারিশ্রমিক খাতে ২৭২ কোটি ৬৮ লাখ, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে ৬৬ কোটি ৬৫ লাখ, ভাড়া-কর ও অভিকর খাতে ৮ কোটি ২৫ লাখ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও পানি খাতে ৫১ কোটি ৭৫ লাখ, কল্যাণমূলক ব্যয় খাতে ২৯ কোটি ৫০ লাখ, ডাক তার ও দূরালাপনী খাতে ১ কোটি ৮৬ লাখ, আতিথেয়তা ও উৎসব খাতে ৪ কোটি ৩০ লাখ, বীমা, ভ্রমণ ও যাতায়াত খাতে ১ কোটি ৭০ লাখ, বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা খাতে ৬ কোটি ১০ লাখ, মুদ্রণ ও মনিহারি খাতে ৫ কোটি ৩৪ লাখ, ফিস বৃত্তি ও পেশাগত ব্যয় খাতে ১ কোটি ২৩ লাখ, প্রশিক্ষণ ব্যয় খাতে ৭২ লাখ, বিবিধ ব্যয় খাতে ১৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ও ভাণ্ডারখাতে ৭৪ কোটি টাকাসহ ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৪২ কোটি ৮৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এছাড়া ত্রাণ ব্যয় খাতে ২০ লাখ, বকেয়া দেনা খাতে ১৭৩ কোটি ২০ লাখ, স্থায়ী সম্পদ খাতে ১২১ কোটি ৫০ লাখ, উন্নয়ন (রাজস্ব তহবিল ও অন্যান্য) খাতে ১৯৩ কোটি, উন্নয়ন (এডিপি ও অন্যান্য) ১ হাজার ৩৫৫ কোটি এবং অন্যান্য ব্যয় খাতে ৩৭ কোটি ৭০ লাখসহ ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮৮০ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
বাজেট বক্তব্য মেয়র নাছির আরও বলেন, ‘আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও নগরবাসীর সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সড়ক বাতি জ্বালানো, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবা প্রদান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা, রাস্তাঘাট, নালা-নর্দমা মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতাদি নির্বাহ করতেই সিংহভাগ অর্থ ব্যয় হয়। বাজেট যেকোনো প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের বার্ষিক খতিয়ানই শুধু নয়, তা আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়স কর্মকাণ্ডের আশা-প্রত্যাশার প্রতিচ্ছবিও বটে।’
এসময় তিনি সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতায় নগরবাসীর সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবেন বলে আশাবাদ ব্যাক্ত করেন।
এমবিআর/জেআইএম