কারো অবসর নেয়া উচিত নয় : ইউনূস
গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ও নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত ২৮ জুন ৭৫তম বছরে পদার্পন করেছেন। এই দীর্ঘ জীবনে ড. ইউনূসের অনেক বড় বড় অর্জন রয়েছে। এর মধ্যে ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রমে ২০০৬ সালে তার নোবেল পুরস্কার লাভ অন্যতম।
৭৫তম জন্মবাষির্কীকে উপলক্ষে গুণি এ ব্যাক্তির সাক্ষাৎকার নেন যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম এনপিআর ডট ওআরজি। ওয়াশিংটন ডিসিতে তিনি এ সাক্ষাৎকার দেন। জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য তার কিছু অংশ তুলে ধরা হলো :
প্রশ্ন : আপনি এমন একটা বয়সে আছেন যেসময় অনেকেই অবসর গ্রহণ করেন। কিন্তু আপনি এখনো ব্যস্ত মানুষ। গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনার সঙ্গে আপনি আর নেই, আপনি ইউনূস সেন্টারের চেয়ারম্যান, যার লক্ষ্য হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্যকে উৎসাহিত করতে বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করা এবং আপনি এ বিষয়ে বিভিন্ন প্যানেলে কথাও বলেছেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস : অবসরগ্রহণ শব্দটি খুবই ক্ষতিকর। কারণ এটি আপনাকে বলবে আপনার ব্যবহার শেষ হয়ে গেছে। আপনি একটি জাহাজকে অবসর দিলেন, এটিকে আর ব্যবহার করবেন না।অযথা এটিকে ফেলে রাখা হচ্ছে। কিন্তু একজন মানুষ এভাবে থাকতে পারে না।
প্রশ্ন : আপনি জীবনের কোন সময়কে বেশি উপভোগ করেছেন ?
ড. মুহাম্মদ ইউনূস : জীবনের প্রথম ধাপে সবসময় ব্যস্ত থাকতে হয়। যেমন : বিয়ে, বাচ্চাদের লালনপালন, বিভিন্ন কাজ, সবসময় দায়িত্ব পালনের চেষ্টা এসবের মাঝে চাপে থাকতে হয়। এখন জীবনের দ্বিতীয় ধাপে আমি স্বাধীন, আমি যা ইচ্ছা তাই করতে পারি, আমি আমার স্বপ্ন এবং ইচ্ছাকে বাস্তব রুপ দিতে পারি। এবং আমি যা করি তা উপভোগ করি।
প্রশ্ন : আপনি বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিকদের জন্য বিশেষ সুবিধার পক্ষে নাকি বিপক্ষে ?
ড. মুহাম্মদ ইউনূস : আমি যেরকম ভাল আছি অন্যরাও তেমন আছে। কেন আমার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে? এর মাধ্যমে আমাকে আলাদাভাবে দেখা হচ্ছে।
প্রশ্ন : গরীব লোকজনকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ক্ষুদ্র ঋণ দেয়ায় আপনি নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। ক্ষুদ্র ঋণের ধারণাটি ছিল বৈপ্লবিক।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস : ব্যাংকিং ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে আসলে ধনীদের জন্য। সুতরাং সেখানে গরীব লোকদের স্থান নেই। এই সমাজকল্যাণমূলক ব্যবস্থাটি তাদের রুটি-রোজগারের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। আর এজন্য এটি করা। ঋণ হচ্ছে মানুষের অধিকার, আপনার খাদ্য, বাসস্থান, কাজের অধিকার রয়েছে। আপনি যদি অর্থ পান তাহলে আপনি আপনার কাজের ক্ষেত্র তৈরি করতে পারবেন।
প্রশ্ন : আপনার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক থেকে কোন জামানত ছাড়া যে কেউ ঋণ নিতে পারছে, এটি কীভাবে ?
ড. মুহাম্মদ ইউনূস : ক্ষুদ্রঋণে আমরা জামানত চাই না। যে কেউ নিতে পারে। আমরা কাউকে জিজ্ঞাসা করি না আপনার কী আছে। আমরা জিজ্ঞাসা করি আপনার কী প্রয়োজন?
প্রশ্ন : বাংলাদেশে একজন নারী কী চাইতে পারেন ?
ড. মুহাম্মদ ইউনূস : তিনি ৩০ মার্কিন ডলারের বেশি চাইবেন না। এমনকী একশ ডলার কল্পনাও করতে পারবেন না।
প্রশ্ন : অধিকাংশ ঋণ....?
ড. মুহাম্মদ ইউনূস : একশ থেকে দেড়শ মার্কিন ডলারের কাছাকাছি।
প্রশ্ন : টাকা থাকলে ব্যবসা করা যাবে- এই ধারণা ?
ড. মুহাম্মদ ইউনূস : আপনার একটি ব্যবসার ধারণা থাকতে হবে। বাংলাদেশে অনেক নারী কৃষি সম্পর্কিত বিভিন্ন ব্যবসার প্রস্তাবনা আনেন যেমন: কোনো কিছু চাষাবাদ করা, বিক্রি করা, অথবা কোনো কিছু উৎপাদন করা।
প্রশ্ন : গ্রামীণ আমেরিকা নামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংকটির একটি শাখা আছে। আপনি কী আশাবাদী যে আমেরিকান নারীরা এরকম ব্যবসা করবেন ?
ড. মুহাম্মদ ইউনূস : বাংলাদেশের নারীরা অর্থের জন্য পার্লারে গিয়ে চুলের পরিচর্যা করতে পারে না। তারা একে অন্যকে একাজে সহায়তা করে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে এটি একটি ব্যবসা। সুতরাং তারা চুল পরিচর্যার জন্য একটি দোকান চালু করছে। এটিই আমাকে আশ্চর্যান্বিত করে।
প্রশ্ন : আপনার ব্যাংক ইতোমধ্যে ৮৪ লাখ গ্রাহককে ক্ষুদ্র ঋণ দিয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি আপনি এবং আপনার ব্যাংকের বিরুদ্ধে বিদেশি অর্থ তহবিল গ্রহণ ও সরকারি নিয়ম-নীতি না মানার জন্য সমালোচনা করা হচ্ছে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস : এসময় ইউনূস Questions by critics on Grameen Bank and the facts নামের ৩০ পৃষ্ঠার একটি ছোট বই সাক্ষাতকারগ্রহীতাকে দিয়ে বলেন, এসব প্রশ্নের কোনো উত্তর আমার কাছে নেই।
এসআইএস/এএইচ/এমএস