ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

আগামী সপ্তাহেই এমপিওভুক্তির আবেদন কার্যক্রম

মুরাদ হুসাইন | প্রকাশিত: ০৯:৩০ এএম, ০৯ জুলাই ২০১৮

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করতে আগামী সপ্তাহ থেকে অনলাইন আবেদন কার্যক্রম শুরু হবে। এ সংক্রান্ত সফটওয়্যার তৈরি হয়েছে। বর্তমানে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। আজ সোমবার (৯ জুলাই) এমপিও কমিটির সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন নতুন এমপিওভুক্তি সংক্রান্ত কমিটির প্রধান মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জাভেদ আহমেদ।

সূত্র জানায়, এমপিওভুক্তির নীতিমালা অনুযায়ী এক একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাত্র একটি স্তরে এমপিও দেয়া হবে। অর্থাৎ কোনো প্রতিষ্ঠান ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত হলে সেখানে নিম্ন মাধ্যমিক (অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত) অথবা মাধ্যমিক (নবম-দশম) যেকোনো একটি স্তরে এমপিওভুক্ত করা হবে। সফটওয়্যার সেভাবে তৈরি হচ্ছে। গত বুধবার এ সংক্রান্ত কমিটি বৈঠকে বসে। তাতে এমপিও আবেদন কাঠামো চূড়ান্ত হয়। ওই কাঠামোর আলোকে অনলাইনে আবেদন নেয়ার লক্ষ্যে একটি সফটওয়্যারও তৈরি করা হয়েছে। সফটওয়্যার চূড়ান্ত করতে সোমবার ফের বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই সফটওয়্যারেই এমপিওভুক্তির আবেদন নেয়া হবে।

এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বিদ্যালয়) জাবেদ আহমেদ রোববার জাগো নিউজকে বলেন, নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন গ্রহণের সকল প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। এ সংক্রান্ত সফটওয়্যার প্রস্তুত, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। কাল (সোমবার) এ সংক্রান্ত কমিটির সভা রয়েছে। এমপিওভুক্তির জন্য আগামী সপ্তাহ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আবেদন গ্রহণ শুরু করা হবে।

শিক্ষা মন্ত্রলালয় সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকলেও প্রথম পর্যায়ে মাত্র ১ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্তি করা হবে। তার মধ্যে নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ে ৪০০টি, স্কুল অ্যান্ড কলেজ ১০, কলেজ ৭৫, ভোকেশনাল স্কুল ও কলেজ ৩০০টি, মাদরাসা ১০০টি এবং ১১৫টি বিজনেস ম্যানেজম্যান কলেজ রয়েছে।

এমপিও নীতিমালায় বলা আছে, শিক্ষকদের নিয়োগে ৩৫ বছর নির্ধারণ করে নীতিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১০০ নম্বরের গ্রেডিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি করা হবে। তার মধ্যে একাডেমিক স্বীকৃতিতে ২৫ নম্বর (প্রতি দুই বছরের জন্য পাঁচ নম্বর। ১০ বা তার চেয়ে বেশি বয়স এমন প্রতিষ্ঠানের জন্য ২৫ নম্বর)। শিক্ষার্থীর সংখ্যার ওপর ২৫ নম্বর (কাম্য সংখ্যার জন্য ১৫ নম্বর, এরপর ১০ শতাংশ বৃদ্ধিতে পাঁচ নম্বর)। পরীক্ষার্থীর সংখ্যার জন্য ২৫ নম্বর (কাম্য সংখ্যার ক্ষেত্রে ১৫ ও পরবর্তী প্রতি ১০ জনের জন্য পাঁচ নম্বর)। পাবলিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণের জন্য ২৫ নম্বরের (কাম্য হার অর্জনে ১৫ নম্বর ও পরবর্তী প্রতি ১০ শতাংশ পাসে পাঁচ নম্বর) গ্রেডিং করা হবে।

প্রভাষকদের এমপিওভুক্ততিতে বিষয়ভিত্তিক ২৫ জন শিক্ষার্থী থাকতে হবে। তবে বিজ্ঞান বিভাগের ১৫ জন করা হচ্ছে। তবে নতুন জনবল কাঠামোতে সৃষ্ট পদের শিক্ষক-কর্মচারীদের বকেয়া বেতন-ভাতা দেয়া হবে না। কিন্তু নতুন পদে এমপিওভুক্ত করা হবে। নতুন জনবল কাঠামোর বাইরে কর্মরত পদ শূন্য হলে নতুন করে নিয়োগ দেয়া যাবে না। যারা এমপিওভুক্ত নন কিন্তু বৈধভাবে নিয়োগ পেয়েছেন তাদের নতুন পদে পদায়ন করতে হবে।

এদিকে, নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির দাবিতে শিক্ষক-কর্মচারীরা গত ২৬ দিন ধরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আন্দোলন করছেন। এর মধ্যে গত ১৫ দিন ধরে আমরণ অনশন করছেন তারা। অনশন শুরুর পর শিক্ষক-কর্মচারীরা অসুস্থ হওয়া শুরু করলে তাদের স্যালাইন দিয়ে রাখা হচ্ছে। এছাড়া বেশি অসুস্থদের হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছিল। কিন্তু ২৫ দিনেও কোনো সাড়া না পেয়ে শিক্ষকরা বুধবার চিকিৎসা নেয়াও বন্ধ করে দিয়েছেন।

এদিকে আমরণ অনশনরত শিক্ষক-কর্মচারিদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করতে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-২ ওয়াহিদা আক্তার শনিবার দুপুরে আন্দোলনকারী সংগঠনের সভাপতিকে টেলিফোনে প্রধানমন্ত্রীর বার্তা জানান।

শিক্ষক নেতারা জানান, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহারের আহ্বানের পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনার শুরু করেছে। রোববার বিকালে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইনের সঙ্গে সাক্ষাত করেন অনশনরত শিক্ষকদের সংগঠন নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি শফিকুল ইসলাম ও সিনিয়র যুগ্ম-সম্পাদক আনোয়ার হোসেন। এসময় তারা সচিবের কাছে এমপিওভুক্তির বিকল্প প্রস্তাব এবং যে নীতিমালা অনুযায়ী এমপিও চান সেটি হস্তান্তর করেন। ওই প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পৌঁছে দেয়ার ব্যাপারে সচিব শিক্ষক নেতাদের জানান। পাশাপাশি তিনি বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা সচিবের সঙ্গে সাক্ষাতের পরামর্শ দেন।

প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আহ্বানের পরও অনশন চালিয়ে যাওয়ার প্রশ্নে ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানের প্রতি সম্মান জানাই। তিনি গত ৫ জুলাই সংসদে নীতিমালা অনুযায়ী এমপিও দেয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু সেই নীতিমালা অনুযায়ী আমাদের অনেক প্রতিষ্ঠানই এমপিও পাবে না। তাই আমরা এমপিওভক্তির ব্যাপারে বিকল্প ২টি প্রস্তাব দিয়েছি। সেই আলোকে এমপিও চাই।’

সাধারণ সম্পাদক ড. বিনয়ভূষণ রায় বলেন, ‘আমরা একমাস ধরে আন্দোলন করছি। সরকার এমপিও দেয়ার উদ্যোগও নিয়েছে। কিন্তু সেই এমপিও যদি না পাই তাহলে আর কিছু থাকে না। তাই দৃশ্যমান কিছুটা একটা না নিয়ে উঠে যেতে পারি না। এজন্যই আমরা শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাই। আজ (রোববার) রাতে বা কাল দেখা করার ব্যাপারে চেষ্টা চলছে।’

তিনি জানান, টানা আন্দোলনে এখন পর্যন্ত দুই শতাধিক শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এর মধ্যে মঙ্গলবার (৪ জুলাই) পর্যন্ত ১৯৩ জন অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদের মধ্যে ১০২ জনকে বিভিন্ন সময়ে স্যালাইন দিয়ে রাখতে হয়েছে। মঙ্গলবারও অনশনস্থলে ১১ জনকে স্যালাইন দেয়া হয়। এখন পর্যন্ত অর্ধশতাধিক শিক্ষক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

এমপিওভুক্তি কমিটির মিটিং :

এদিকে গত বুধবার বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির লক্ষ্যে সরকার গঠিত কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে এমপিওভুক্তির লক্ষ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাছাইয়ে ‘বিধিগত’ শর্তসংবলিত একটি আবেদন ফরম ও সফটওয়্যার উপস্থাপন করা হয়। এরপর বৈঠকের সদস্যরা এতে বিভিন্ন মতামত দেন।

বৈঠক সূত্র জানায়, ফরমে ও সফটওয়্যারে এমপিও নীতিমালায় উল্লিখিত চার শর্তের আলোকে বিভিন্ন কলাম তৈরি করা হয়েছে। তাতে প্রতিষ্ঠানের বয়স, শিক্ষার্থী সংখ্যা, পাশের হার, প্রাপ্যতাসহ নানা তথ্য নেয়া হবে। প্রতিষ্ঠানের প্রাথমিক পরিচিতি, ইআইআইএন (পরিচিতি) নম্বর, প্রথম স্বীকৃতির তারিখ, স্বীকৃতি নবায়নের তারিখ ও বোর্ডের চিঠি স্ক্যান করে দেয়ার কলাম থাকবে।

ব্যানবেইস মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহর সভাপতিত্বে সভায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জাভেদ আহমেদ, বুয়েটের অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ প্রমুখ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

জানতে চাইলে ব্যানবেইস মহাপরিচালক বলেন, আগামী সপ্তাহ নাগাদ আবেদন নেয়ার প্রক্রিয়াগত কাজ শেষ করা হবে। এ লক্ষে কাজ এগিয়ে চলছে। আগামী সপ্তাহ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আবেদন গ্রহন কার্যক্রম শুরু করা হতে পারে বলেও তিনি জানান।

এমএইচএম/এমবিআর/জেআইএম

আরও পড়ুন