ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

ম্যাক্স হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রীর নির্দেশ

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশিত: ০৬:০১ পিএম, ০৮ জুলাই ২০১৮

চট্টগ্রামের ম্যাক্স হাসপাতালে শিশু রাইফার মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলকে (বিএমডিসি) নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।

ম্যাক্স হাসপাতালে শিশু রাইফার মৃত্যুর পর ভুল চিকিৎসার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নির্দেশে গঠিত স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং চট্টগ্রামের সিভিল সার্জনের পৃথক দুটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের সুপারিশের ভিত্তিতে মন্ত্রী এ নির্দেশ দেন।

প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী অভিযুক্ত চিকিৎসকরা হলেন- ডা. বিধান রায় চৌধুরী, ডা. দেবাশীষ সেন গুপ্ত ও ডা. শুভ্র দেব। রোববার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ সংক্রান্ত এক সভায় সভাপতিত্বকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ নির্দেশ দেন।

সভায় তদন্ত কমিটির দুটি রিপোর্ট নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তদন্তের সুপারিশ অনুযায়ী ম্যাক্স হাসপাতালের লাইসেন্স নিয়ে অনিয়ম আগামী ১৫ দিনের মধ্য দূর করারও নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

প্রসঙ্গত, গলাব্যথা নিয়ে গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে শিশু রাইফাকে চট্টগ্রামের বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালে ভর্তি করান বাবা রুবেল খান। এ সময় চিকিৎসক ইনজেকশন পুশ করেন। ইনজেকশন পুশের পরপরই রাইফার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে এবং রাত ১২টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

পরবর্তীতে রাইফার বাবা এবং সমকালের চট্টগ্রাম ব্যুরোর স্টাফ রিপোর্টার রুবেল খান অভিযোগ করেন, হাসপাতালে রাইফাকে ভর্তির পর থেকে তার সঙ্গে যা হয়েছে সেখানে ভুল চিকিৎসার বিষয়টি পুরোপুরি স্পষ্ট। গলাব্যথার জন্য আমার মেয়েকে ম্যাক্স হাসপাতালে ভর্তি করার পর তাকে যখন অ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন দেয়া হয়, তখন সে রিঅ্যাক্ট করে। আমি বিষয়টি দেখে অ্যান্টিবায়োটিক না দেয়ার কথা বলি। তারপরও দ্বিতীয়বার অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হয়। ফলে তার খিঁচুনি শুরু হয়। একপর্যায়ে আমার মেয়ে মারা যায়।’

ওই ঘটনার পর তাৎক্ষণিক সাংবাদিকরা একত্রিত হয়ে অভিযুক্ত চিকিৎসক ডা. দেবাশীষকে আটক করে থানায় সোপর্দ করেন। এ সময় চকবাজার থানা পুলিশ ওই হাসপাতালে কর্তব্যরত মেডিকেল অফিসার, নার্স ও সুপারভাইজারকে আটক করেন।

চকবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আবুল কালাম সে সময় জাগো নিউজকে বলেন, ‘ম্যাক্স হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় সাংবাদিকের শিশুকন্যার মৃত্যুর অভিযোগ পেয়ে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে আটক করি। ভুল ইনজেকশনের কারণে শিশু রাইফার মৃত্যু হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও নার্সরা।’

অভিযুক্তদের আটকের পরপরই বিএমএ নেতারা থানায় এসে তাদের ছাড়া না হলে চট্টগ্রামের সব হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দেন। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় তাৎক্ষণিক ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে অভিযুক্তদের ছেড়ে দেয়া হয়।

শিশু রাইফার মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি দুটির তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এমন আদেশ দেন।

কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী, ভুল চিকিৎসার অভিযোগ নিয়ে যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে অভিযোগ প্রদানের জন্য হটলাইন নম্বর সংবলিত একটি সাইন বোর্ড সকল সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে স্থাপনের জন্যও সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

সভায় অন্যান্যের মধ্যে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ সচিব জি এম সালেহ উদ্দিন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ, বিএমডিসির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. সহিদুল্লা, স্বাচিপ সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সালান, বিএসএমএমইউ’র উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ, চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আজিজুর রহমান সিদ্দিকী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে, বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম নগরীর বিতর্কিত ম্যাক্স হাসপাতালে র্যাব-৭ এর একটি টিম মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে। অভিযোগের প্রমাণ পেয়ে হাসপাতালটিকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

র‌্যাবের অভিযানের প্রতিবাদে এদিন দুপুরে নগরীর বিএমএ ভবনে অনুষ্ঠিত এক জরুরি সভা থেকে চট্টগ্রামের সব বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকের চিকিৎসাসেবা বন্ধের দেয় বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান মালিক সমিতি।

অভিযানের নেতৃত্ব দেয়া ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম জানান, ম্যাক্স হাসপাতালে র‌্যাবের অভিযানে ত্রুটিপূর্ণ লাইসেন্স অদক্ষ-অনভিজ্ঞ ডাক্তার-নার্স দ্বারা পরিচালনার বেশকিছু অসঙ্গতি ধরা পড়েছে। এ কারণে প্রতিষ্ঠানটিকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

অভিযানে অংশ নেয়া একটি সূত্র জানায়, বিভিন্ন রোগের ডায়াগনোসিস ম্যাক্স হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ করে মর্মে প্রচার হলেও মূলত তারা প্যাথলজিক্যাল টেস্টগুলো করে আনে পপুলার থেকে। পরে ম্যাক্সের প্যাডে তা প্রচার করে। প্রাথমিকভাবে এ ধরনের বিভিন্ন অনিয়ম ভ্রাম্যমাণ আদালতের চোখে ধরা পড়ে। এছাড়া বিদেশি ওষুধ রাখলেও সেগুলোর কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এমইউ/এমএআর/আরআইপি

আরও পড়ুন