বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের সুবিধা নিতে প্রথম চুক্তি নৌ মন্ত্রণালয়ের
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে সেবা দিতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে প্রথম বাণিজ্যিক চুক্তি করেছে বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএসসিএল)।
এই চুক্তির মাধ্যমে নৌযানে অত্যাধুনিক এবং নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থার পাশাপাশি টেলিযোগাযোগের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।
রোববার সচিবালয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সেবা বিপণনের জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএসসিএল) এর মধ্যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুস সামাদ এবং বিসিএসসিএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. সাইফুল ইসলাম চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
এ সময় নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার উপস্থিত ছিলেন।
এই চুক্তির আওতায় স্যাটেলাইটের একটি ট্রান্সপন্ডার ব্যবহার করবে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। আগামী সেপ্টেম্বর থেকে বিসিএসসিএল সেবা দিতে শুরু করতে পারে বলে জানা গেছে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরীণ নদী ও সমুদ্র পথে চলমান জাহাজগুলোতে উচ্চগতির টেলিযোগাযোগ সেবা না থাকায় সেখানে টেলিফোন, ইন্টারনেট, টেলিভিশন ও টেলিযোগাযোগের অন্যান্য সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না। এই সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে বিসিএসসিএল নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সংস্থার অধীনে বন্দর, ফেরি-ঘাট, জাহাজ ও অন্যান্য স্থাপনায় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সেবা দেবে।
ফলে বাংলাদেশের সমুদ্র ও স্থানীয় নদী চ্যানেলগুলোতে থাকা জাহাজগুলো স্থলভাগের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ, দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবাগ্রহণ ও টেলিভিশন দেখা যাবে। ফলে নৌযানের নিরাপত্তা, অত্যাধুনিক এবং নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থার পাশাপাশি টেলিযোগাযোগের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলেও জানানো হয়।
জাহাজে অবস্থানরত নাবিক ও যাত্রীরা সার্বক্ষণিক টেলিযোগাযোগের সুবিধা ভোগ করতে পারবে। এছাড়াও বিভিন্ন নৌবন্দর ও বাতিঘরেও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ সেবা দেয়া হবে।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এ চুক্তিটি হচ্ছে বিসিএসসিএল-এর সেবা বাজারজাত করার প্রথম সমঝোতা চুক্তি।
টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী বলেন, ‘কেউ কেউ দাবি করেছিলেন এই স্যাটেলাইটের মালিকানা নাকি দুইজন ব্যক্তি নিয়ে নিয়েছেন। আজকে আমাদের স্যাটেলাইট কোম্পানি চুক্তি স্বাক্ষর করার মধ্য দিয়ে প্রমাণ করেছে এটি বাংলাদেশের জনগণের সম্পদ।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেকে এই কথাও বলেছিলেন, স্যাটেলাইট বানাইছো কেউ ব্যবহার করতে পারবে না। এই কথাটির জবাব সম্ভবত আজকে আমরা দিতে পারছি। এই পারাটা আমাদের জন্য অনেক গৌরবের।’
নৌপরিবহন মন্ত্রী বলেন, ‘স্যাটেলাইট কোম্পানির সঙ্গে সর্ব প্রথম নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে হচ্ছে, এজন্য আমার মন্ত্রণালয় সবচেয়ে বেশি গর্বিত।’
তিনি বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ নৌপথে ও সাগরে যেসব নৌযান চলাচল করবে সেগুলোর অবস্থান, গতিবিধি এবং সার্বিক অবস্থা আমরা জানতে পারব স্যাটেলাইটের সেবা গ্রহণের মাধ্যমে। পুরনো তিনটি লাইট হাউস আধুনিকায়নের সঙ্গে আরও সাতটি লাইট হাউস করছি।’
নৌপরিবহন সচিব মো. আবদুস সামাদ বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন সমুদ্রবন্দরে বছরে ৪ হাজার নৌযান চলাচল করে। এগুলোর গতিবিধি আমরা নিরীক্ষণ করে থাকি। স্যাটেলাইট সেবার মাধ্যমে এগুলো আরও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারব।
অভ্যন্তরীণ নৌ-রুটে ৩৫ হাজার জাহাজ চলাচল করে জানিয়ে সচিব বলেন, স্যাটেলাইট সেবার মাধ্যমে আমরা দুর্ঘটনা রোধ করতে পারব। যেটা সার্বিক জিডিপিতে বড় কন্ট্রিবিউশন হবে।
গত ১২ মে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সফল উৎক্ষেপণ হয়। ২৩ মে স্যাটেলাইটটি এর জন্য নির্দিষ্ট জিওস্টেশনারি স্লট ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রি পূর্ব অবস্থানে পৌঁছায়।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এ মোট ৪০টি ট্রান্সপন্ডার রয়েছে। এর মধ্যে ২৬টি কেইউ-ব্যান্ড ও ১৪টি সি-ব্যান্ডের। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর ইন অরবিট টেস্ট (আইওটি) সফলভাবে শেষ হয়েছে এবং বর্তমানে এর নেটওয়ার্ক অ্যাকসেপটেন্স রিভিউ (এনএআর) চলছে। আগামী সেপ্টেম্বরে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ সেবা দিতে পুরোপুরি প্রস্তুত হবে বলে বিসিএসসিএল থেকে জানা গেছে।
অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদারসহ দুই মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আরএমএম/এমআরএম/পিআর