‘নাগরিকদের প্রজা বানানোর চেষ্টা ভালো হবে না’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আহমেদ কামাল বলেছেন, ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধের সময় অধিকাংশ মানুষই ছিলেন দর্শক। তারা মনে করেনি পলাশীর যুদ্ধে বাঙালিরা জিতবে। যে কারণে পিছিয়ে গেছি। দুইশ বছর ব্রিটিশের গোলামি করেছি। আজও তাই দেখছি। কোটার মতো ন্যায় সঙ্গত আন্দোলনে অধিকাংশরাই দর্শক। বলে রাখছি, যদি এই কোটা সংস্কারের আন্দোলনে যদি অংশ না নেন তবে ফের পিছিয়ে যাবো।
সারাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের উপর হামলা, গ্রেফতার ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও নাগরিক সমাজ আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, জমিদারি চলে গেছে। কিন্তু জমিদারি ভাব রয়ে গেছে। নাগরিকদের প্রজা বানানোর চেষ্টা কখনো ভালো ছিল না। এটা তার বোঝা উচিত। সময় এসেছে আমরা নাগরিক হবো নাকি প্রজা। সেই জবাবটা এ সরকারকে বুঝিয়ে দিতে হবে।
তিনি বলেন, আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাঙ্গে সম্পর্ক ৪৫ বছরের। এতো দিনে কখনো এতো অথর্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দেখিনি। শিক্ষার্থী নির্যাতিত হয় অথচ প্রক্টর জানে না।
কোটার আন্দোলনকারীদের দাবি প্রধানমন্ত্রী মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু অগ্রগতি দেখা যায়নি। উল্টো আন্দোলকারীদের জাতিগোষ্ঠীর রাজনৈতিক পরিচয় খুঁজেছে। আন্দোলন বানচালের চেষ্টা করেছে।
একই অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ফাহমিদুল হক বলেন, যারা হামলার শিকার তারা ভীত সন্ত্রস্ত। তাদের অনেককেই নজরদারিতে রাখা হয়েছে। অথচ যারা হামলাকারী তারা নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমাদের দাবি, উল্টোপথে হাঁটবেন না।
তিনি বলেন, আন্দোলনকারীদের হুমকি দিতে দেখছি, সেই হলুদ গেঞ্জি পরিহিত সন্ত্রাসীকে তো গ্রেফতার করতে দেখছি না। আমরা চাই মুক্তি, চাই স্বাধীনতা। যতো বাধা দিবেন, যতো মুখ চেপে রাখার চেষ্টা হবে ততোই ঘুরে দাঁড়াবো।
ঢাবির সাবেক শিক্ষার্থী ও শিক্ষার্থীর অভিভাবক জাকির হোসেন বলেন, আমার ছেলে স্বপ্ন দেখে সরকারি চাকরি করবে। ১১ বছর বয়সে আমি মুক্তিযুদ্ধ করেছি। ক্যাম্পে ক্যাম্পে খাবার বিতরণ করেছে। শুধুমাত্র অস্ত্র হাতে যুদ্ধ যারা করেছে তারাই মুক্তিযোদ্ধা নয়, আমিও।
তিনি বলেন, আজ নুরুর চিকিৎসা হচ্ছে না ঢামেকে, তারেকের চিকিৎসা হয়নি রামেকে। অবিশ্বাস্য। দেশে এসব অবিশ্বাস্য লাগছে। অভিভাবক হিসেবে সন্তানদের নিয়ে খুব নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি ।
ছাত্রনেতা বাকি বিল্লাহ বলেন, ন্যায্য দাবি কখনো দমায়ে রাখা যায় না। প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন। অথচ কেউ কোটা বাতিল চায়নি, সংস্কার চেয়েছে। রাবি, ঢাবি, চবি, বেরোবিতে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে।
আইনজীবী হাসনাত কাইয়ূম বলেন, ভয়ানক পরিস্থিতির মধ্যে প্রতিবাদ কর্মসূচি দিয়েছিলাম। নিপীড়ন হলে নিপীড়ন বিরোধী কথা তো হবেই। সরকারে যারা আছেন তাদের কাজ কি? নিপীড়নকারীদের আশ্রয দেয়া, আসামিদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় রাখা? নাকি নিপীড়িতের আশ্রয় দিয়ে সাহায্য করা?
তিনি বলেন, দাবি উঠার আগে বেতন বাড়ে অথচ ছাত্র নিপীড়নের শিকার হলে তারা বলেন, কেউ নিপীড়নের শিকার হয়েছে বলে জানা নেই।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষক রেহনুমা আহমেদ বলেন, যে বোনটি যৌন নিপীড়ন নিয়ে কথা বলেছে তাকে সাধুবাদ। পুলিশ-ছাত্রলীগ যৌন নিপীড়ন করেছে। তাকে উলঙ্গ করে ভিডিও করে ইন্টারনেটে ছেড়ে দিতে চেয়েছে। এ পিতৃতান্ত্রিক অসভ্যতায় কোথায় অগ্নিকন্যা মতিয়া, কোথায় স্পিকার, কোথায় নারী নেত্রীরা।
ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের গতি প্রকৃতি পাল্টেছে। কখনো ছাত্রলীগ এ আন্দোলনে থেকে উল্লাস করেছে। কখনো হাতুড়ি দিয়ে আন্দোলনকারীদের নিপীড়ন করেছে। যারা নিপীড়ন করছেন, মনে করছেন হাতুড়িপেটা করলেই চাকরি পাবেন। ভুল। কখনো চাকরি পাবেন না।
ছাত্রলীগ যখন নিপীড়ন করে, যৌন নিপীড়ন করে তার চেয়ে বড় অপরাধ যখন পুলিশ করে। তারা আইনগতভাবে অপকর্ম করে পার পেয়ে যাচ্ছেন। তাদের শাস্তির দাবি করা ও অপকর্মের প্রতিবাদের অধিকার আমার আছে। আমি ট্যাক্স দেই।
পুলিশেই যদি ধর্ষণ করতে চায় তাহলে আমার বোন কার কাছে যাবে? মানুষ জন্মাবার পর মানুষ হতে অনেক কিছু লাগে। অথচ এক আজব অবস্থায় এ দেশে বাস করছি। প্রতিবাদ করি বলেই জামায়াত-বিএনপি তকমা দেয়া হচ্ছে। দেন আমাকে জামায়াত বানান, রাজাকার বানান।
কোটা থাকবে কি থাকবে না, সংস্কার হবে কি হবে না তা রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত। কিন্তু মারবেন, কথা বলতে দেবেন না, শিক্ষকদের নির্যাতন লাঞ্চিত করবেন, প্রতিবাদ করবো না? ট্যাক্স কি তবে লুটপাটের জন্য দেই? প্রক্টর বলেন, তিনি কিছুছু জানেন না? শান্তিশৃঙ্খলা কে রক্ষা করবে? দায়িত্ব প্রক্টরের। পারবেন না চলে যান। পাঁচটি মামলা শাহবাগে। কখন কাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে জানানো হচ্ছে না, কখন কাকে রিমান্ডে নেয়া হচ্ছে জানি না। কোথায় যাচ্ছি আমরা।
প্রকৌশলী ম. ইমামুল হক বলেন, হাতুড়ি হাতে কে দৌড়ায় কে শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করছে তাদের ধরতে পারেন না? এতো ফুটেজ, তবুও মারধরের ফুটেজ চোখে পড়ে না।
জেইউ/এএইচ/পিআর