ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন আরও যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত
জাতীয় সংসদে উত্থাপিত ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল-২০১৮’ আরও যাচাই বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংসদীয় কমিটি।
বুধবার (৪ জুলাই) জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ২৪তম বৈঠকের দ্বিতীয় মুলতবি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। কমিটির সভাপতি ইমরান আহমদ সভায় সভাপতিত্ব করেন।
কমিটির সদস্য হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া এবং বিশেষ আমন্ত্রণে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া কমিটির আমন্ত্রণে অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ৭১ টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল হক বাবু, বিএফইউজের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল এবং ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম বৈঠকে যোগ দেন।
বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা করে বিলটিকে অধিকতর যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে আরও বৈঠক করার সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠকে সংসদীয় কমিটি জানায়, আগে সাংবাদিকদের বৈঠকের প্রেক্ষিতে তারা ১১টি সংশোধন এনেছে। এসব সংশোধন সাংবাদিকদের কাছে দেয়া হয়েছে। তারা যাচাই বাছাই করে ১৬ জুলাই আবার বৈঠক করবে কমিটি।
সংসদে উত্থাপিত বিতর্কিত এ আইনের ৩২ ধারা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। সাংবাদিক বা যে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য কাঠামোতে বারবার অনুপ্রবেশ করলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও পাঁচ কোটি টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এ জন্য অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও সম্পাদক পরিষদের সঙ্গে বৈঠক করে কমিটি। বৈঠকে সম্পাদক পরিষদ একটি লিখিত প্রস্তাবও দেয়।
প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়ায় ১১টি সংশোধনী আনার প্রস্তাব করেছে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। বুধবার (৪ জুলাই) সংসদীয় কমিটির বৈঠকে প্রস্তাবিত সংশোধনীগুলো উত্থাপন করা হয়। তবে কোনো সংশোধনী চূড়ান্ত হয়নি।
বৈঠকে সাংবাদিকদের তিনটি পক্ষ সম্পাদক পরিষদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্সের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। ১৬ জুলাই আবারও সংসদীয় কমিটি এই তিনটি সংগঠনের সঙ্গে বসবে। ওইদিন নিজেদের মতামত জানাবে সাংবাদিক সংগঠনগুলো।
এর আগে গত ২২ মে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে উপস্থিত হয়ে আটটি ধারা নিয়ে নিজেদের আপত্তির কথা তুলে ধরেছিল সম্পাদক পরিষদ। ওই বৈঠকে অ্যাটকো, বিএফইউজেও নিজেদের আপত্তির কথা তুলে ধরে। এর প্রেক্ষিতে কিছু পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করা হয়।
বৈঠক শেষে সংসদীয় কমিটির সভাপতি ইমরান আহমদ বলেন, কিছু বিষয়ে সাংবাদিকদের আপত্তি ছিল। সংসদীয় কমিটি ১১টি ক্ষেত্রে পরিবর্তনের প্রস্তাব করেছে। সাংবাদিকরা আলোচনা করে নিজেদের অবস্থান জানাবেন। আগামী ১৬ জুলাই আবার বৈঠক হবে।
কমিটির সভাপতি বলেন, প্রস্তাবিত আইনের ২১ ধারায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলা হয়েছে। এর সংজ্ঞা হবে সংবিধানের প্রস্তাবনায় যে ব্যাখ্যা দেয়া আছে তা এখানে প্রযোজ্য হবে। ২৫ নম্বর ধারার ‘খ’ উপধারা (এমন কোনো তথ্য সম্প্রচার বা প্রকাশ না করা যা কোনো ব্যক্তিকে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ করতে পারে) বাতিল এবং সব মিলে দুটি উপধারা করা, ২১ ধারায় সাজা যাবজ্জীবনের ক্ষেত্রে ১৪ বছর করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আর সর্বোচ্চ সাজার কথা আইনে বলা হয়েছে। অপরাধ বিবেচনায় আদালত ঠিক করবে সর্বনিম্ন সাজা কতদিন হবে। এ ছাড়া কিছু ক্ষেত্রে সাজা ও জরিমানার পরিমাণ কমানো এবং কিছু শব্দগত পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বৈঠক শেষে সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, প্রথম দফা আলোচনার প্রেক্ষিতে কিছু সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে। তারা সেগুলো পড়ে দেখার সুযোগ পাননি। সে কারণে তৎক্ষণিক মতামত দিতে প্রস্তুত ছিলেন না। এসব সংশোধনীর বিষয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে হবে।
সূত্র জানায়, ধর্মীয় মূল্যবোধে আঘাতের শাস্তির মাত্রাও সাত বছর থেকে কমিয়ে পাঁচ বছর করার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইনে ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তির সংজ্ঞায় অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট অনুসরণ করার কথা বলা হয়। এতে সাংবাদিকেদের পক্ষ থেকে আপত্তি জানানো হয়। বিষয়টি আরও পর্যালোচনা করা হবে।
এ বিষয়ে বিএফইউজের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, অফিসয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট তথ্য অধিকার আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
এইচএস/এএইচ/এমএস