অনুমতি ছাড়া মৎস্যপণ্য আমদানিতে ৭ বছরের জেল
অনুমতি ছাড়া মৎস্যপণ্য আমদানি করলে ১ থেকে ৭ বছর কারাদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ডের বিধান রেখে ‘মৎস্য সঙ্গনিরোধ আইন, ২০১৮’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার এই বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম প্রেস ব্রিফিংয়ে এই অনুমোদনের কথা জানান।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘মৎস্য আমদানির ক্ষেত্রে কোনো ক্ষতিকারক জীবাণু বহন করে বা নিয়ে আসে, সেটার জন্য কোনো আইন নেই। সবজির জন্য আইন আছে। এ আইনটা নতুন তৈরি করা হয়েছে। এমন আইন পৃথিবীর মোটামুটি প্রায় দেশেই আছে, আমাদের দেশে ছিল না।’
এর আগে ২০১৭ সালের ২৪ এপ্রিল আইনের খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছিল মন্ত্রিসভা।
মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ‘খসড়া আইনানুযায়ী, আমদানি বলতে জল, স্থল, আকাশ হতে অন্য কোনো দেশ হতে বাংলাদেশে কোনো পণ্য আনা। মৎস্য বলতে সব প্রকার কোমল ও কঠিন অস্থিবিশিষ্ট মাছ, সাধু ও লবণাক্ত পানির চিংড়ি, উভচর জলজ প্রাণী, কচ্ছপ, কুমির, কাঁকড়া জাতীয় প্রাণী, শামুক বা ঝিনুক জাতীয় জলজ প্রাণী, ব্যাং বা সরকারি প্রজ্ঞাপন দ্বারা ঘোষিত জলজ প্রাণী।’
‘এ সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি সঙ্গনিরোধ কর্তৃপক্ষ হবে, এই দায়িত্ব পালন করবে মৎস্য অধিদফতর। কর্তৃপক্ষকে অনেকগুলো দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।’
অন্য দেশ হতে বাংলাদেশে মৎস্যের রোগ-জীবাণু অনুপ্রবেশ ও বিস্তার রোধে মৎস্য, মৎস্যপণ্য, উপকারী জীবাণু বা প্যাকিং দ্রব্যাদির আমদানি নিয়ন্ত্রণ করাসহ কর্তৃপক্ষকে ১০টি দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলে তিনি।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘পুলিশ, র্যাব, কাস্টমস, বিজিবি, কোস্টগার্ড, ডাক বিভাগ, বন্দর কর্তৃপক্ষ, বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, রেলওয়ে, শিপিং এজেন্সিসহ সমজাতীয় এজেন্সিগুলোর কর্মকর্তা এই আইনের পরিপন্থী কার্যক্রম রোধ করতে পারবেন। এ ছাড়া মৎস্য সঙ্গনিরোধ কর্মকর্তাকে ক্ষমতা প্রয়োগ ও সহায়তা করতে পারবেন।’
এই আইন লঙ্ঘনে শাস্তির বিধান রয়েছে জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, ‘অনুমতি ছাড়া মৎস্যপণ্য আমদানি করলে সর্বনিম্ন ১ বছর ও সর্বোচ্চ ৭ বছর কারাদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। কোম্পানির ক্ষেত্রে তার পরিচালক, অংশীদার, ম্যানেজার বা অন্য কোনো কর্মকর্তা আমদানি করলে অপরাধ হবে ব্যক্তির অপরাধের মতো, সাজা হবে যদি নির্দোষ প্রমাণ করতে না পারে।’
মৎস্য সঙ্গনিরোধ কর্মকর্তার অনুমোদন ছাড়া কোনো আদালত এ সংক্রান্ত মামলা নেবে না জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘পুলিশ বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করতে পারবে না এবং মামলা হবে জামিনযোগ্য। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজস্ট্রেট, মোবাইল কোর্টেও বিচার করা যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আইনের অধীন লিখিত আদেশ দ্বারা কোনো আমদানি অনুমতিপত্র গ্রহীতা সংক্ষুদ্ধ হলে ওই ব্যক্তি আদেশ প্রাপ্তির তারিখ হতে ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিকার লাভের উদ্দেশ্যে কর্তৃপক্ষ ও সরকারের কাছে আপিল করতে পারবেন। আপিল দাখিলের তারিখ হতে ৯০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে।’
বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা আইন চূড়ান্ত অনুমোদন
এ ছাড়া ‘বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা আইন, ২০১৮’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘১৯৭৯ সালের একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) প্রতিষ্ঠিত হয়। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী, এটি সেনা শাসনামলে হওয়ায় নতুনভাবে এ আইনটি আনা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘অধ্যাদেশের কিছু বিষয় রদবদল করে নতুন আইনটি করা হয়েছে। ব্যাপক কিছু নয়। কিছু সংযোজন করা হয়েছে, কিছু বিয়োজন করা হয়েছে।’
এর আগে ২০১৬ সালের ১৪ মার্চ এই আইনের খসড়াটি নীতিগত অনুমোদন দিয়েছিল মন্ত্রিসভা।
আরএমএম/এমইউএইচ/জেডএ/এমএস