পাঁচ মিনিটের রাইডে জন্য ঘণ্টা পার
সরকার ঘোষিত ছুটি শেষ হয়েছে, অফিস-আদালতে বাড়ছে কর্মজীবীদের উপস্থিতি। কিন্তু ব্যস্ত নগরীর ব্যস্ততা এখনও পুরোদমে শুরু হয়নি। ঈদুল ফিতরের তৃতীয় দিনেও যেন কাটেনি ঈদের আমেজ।
রাজধানীর বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে সোমবারও ছিল মানুষের সরব উপস্থিতি। বিশেষ করে শিশু পার্কে এদিনও ছিল শিশুসহ সব বয়সী মানুষের উপচে পড়া ভিড়। গরম ও তীব্র রোদের মধ্যেও শিশুদের মুখে দেখা গেছে হাসির ঝিলিক। ঘর্মাক্ত চেহারা আর ছটফটানি; পার্কের রাইডে রাইডে ছড়িয়ে পড়ে শিশুদের উচ্ছ্বলতা আর হর্ষধ্বনি।
এদিন দুপুর থেকে শাহবাগ শিশু পার্কের সামনের সড়কে কোমলমতি শিশুদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। বাইরের তুলনায় পার্কের ভেতরে ভিড় ছিল বেশি। রোববারের মতো এদিনও টিকিট সংগ্রহের পর প্রতিটি রাইডের কাছে সাপের মতো এঁকেবেঁকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী ও অভিভাবকদের।
শিশু পার্কের ভেতরে ঘুরে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি রাইডের পাশে শত শত শিশুর লাইন। বরাবরের মতো আজও রেলগাড়িতে চড়ার আকর্ষণ সবচেয়ে বেশি। শিশু পার্কের উপ–সহকারী প্রকৌশলী মো. জাকির হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ঈদের দিন (১৬ জুন) শিশু পার্কে ৩২ হাজার লোকের সমাগম হয়েছিল। পরের দিন (১৭জুন) ৪২ হাজার লোকের সমাগম এবং ৪৪ হাজার রাইডের টিকিট বিক্রি হয়েছিল। আজও প্রচুর দর্শনার্থীর ভিড়। সন্ধ্যার পর জানা যাবে আজ কী পরিমাণ মানুষের সমাগম হয়েছে।
তিনি জানান, ঈদের দিন সাড়ে আট লাখ টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছিল। পরের দিন ১০ লাখ ৮০ হাজার টাকার মতো টিকিট বিক্রি হয়।
ট্রেনের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মাবিয়া হাসান যাত্রাবাড়ী থেকে সন্তান ও পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ঢাকায় তো বেড়ানোর খুব বেশি জায়গা নেই। তাই ঈদের সময় প্রচণ্ড রোদের মধ্যেও সন্তানদের নিয়ে বের হয়েছি। অন্য সময় বের হতে চাইলেও সময়-সুযোগ হয়ে ওঠে না।
এভাবে রোদের মধ্যে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কষ্ট তো হচ্ছে তবে ট্রেনে চড়ার সুযোগ পেলে সব কষ্ট ভুলে যাবে বাচ্চারা। তাদের মজাটাই আসল। কষ্ট হলেও কিছুই করার নেই।
শিশু পার্কে কোনোভাবে প্রবেশ করতে পারলেও প্রতিটি রাইড ঘিরে রয়েছে লম্বা লাইন। একটি লাইনের পাশে আরেকটি রাইডের লাইন, দূর থেকে দেখলে বোঝা যাবে না কোন রাইডের লাইন কোনটি।
নাগরদোলার লাইনটি নাগরদোলার ব্রিজ ছাড়িয়ে নিচে এসে ঠেকেছে। প্লেনের ভিড়ও ট্রেনের লাইনের মতো লম্বা। প্রতিদিনের মতো আজও ট্রেনের জন্য সবার দীর্ঘ অপেক্ষা, লাইনও দীর্ঘ।
মিরপুর থেকে দুই ছেলেকে নিয়ে শিশু পার্কে এসেছেন এক বাবা। তাদের মধ্যে একজন ব্যাপক চঞ্চল, সারাক্ষণ দৌড়ঝাঁপের চেষ্টা। তাকে ধরে রাখতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে বাবাকে। অপরজন অত্যন্ত লাজুক। লাজুক লাজুকভাব নিয়ে শিশু শিহাব জানায়, পার্কে ঘুরতে এসেছে। খুব মজা হচ্ছে। ঘোড়াসহ চারটি রাইডে চড়েছে। সবকটি রাইডে চড়ার কথা জানায় সে।
প্রখর রোদে ট্রেনের লাইনে দাঁড়িয়ে মুদাব্বির হোসেন। মা-বাবা আর কাজিনদের সঙ্গে ঘুরতে এসেছে সে। কয়টি রাইডে চড়া হয়েছে- জিজ্ঞাসা করলে সে জানায়, চারটিতে। সঙ্গে সঙ্গে মায়ের ধমক। ধমক খেয়ে সে জানায়, উড়োজাহাজ আর হেলিকপ্টারে চড়েছে সে। এখন রেলগাড়িতে চড়ার জন্য অপেক্ষা।
রোদে কষ্ট হচ্ছে কিনা, ক্ষুধা লেগেছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে মুদাব্বির জানায়, না তো কোনো কষ্ট হচ্ছে না। ক্ষুধা লেগেছিল, জুস ও মাল্টা খেয়েছি।
সরেজমিন আরও দেখা যায়, প্রতিটি রাইডের সময়সীমা তিন থেকে পাঁচ মিনিট। এত কষ্ট করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে মাত্র পাঁচ মিনিটের জন্য রাইডে চড়ার সুযোগ পেয়ে ক্ষোভ দেখাচ্ছে প্রায় সব শিশু। অনেকেই সময় শেষ হওয়ার পর রাইড থেকে নামতে চাইছে না। এনিয়ে বিপাকে পড়তে দেখা যায় রাইডের চালক ও অভিভাবকদের।
রাইডের বাইরে সাধারণ দোলনা ও স্লিপারগুলোতে লাইন ধরে উঠতে দেখা যায় শিশুদের। অনেককে আবার ক্লান্তি দূর করতে পার্কের মধ্যে অবস্থিত গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানে বসেই দুপুরের খাবার গ্রহণ করতে দেখা যায় সায়েদাবাদ থেকে আসা একটি পরিবারের ১৩ সদস্যকে।
আফিফা খাতুন নামে ওই পরিবারের প্রবীণ সদস্য জানান, ঘর থেকে রান্না করেই নিয়ে এসেছি। বাইরের খাবারের মান যেমন ভালো নয়, দামও বেশি। এ কারণে রান্না করা খাবার পার্কের ভেতরের এই বটতলায় বসে খেয়ে নিচ্ছি।
যারা বাসা থেকে খাবার আনেননি তারা বাধ্য হয়ে পার্কের ভেতরে ও বাইরে অস্থায়ীভাবে তৈরি খাবারের দোকানগুলোতে থেকে সংগ্রহ করছেন। ঠেলাগাড়িতে ফুচকা, চটপটি, ঝালমুড়ি, ভেলপুরিসহ বাহারি আচার থরে থরে সাজানো। দোকনিরা হাকডাক দিচ্ছেন, আসেন আপা, আসেন ভাই; পছন্দের খাবার বাইছা লন; দাম নিয়ে টেনশন নাই।
এফএইচ/এমএআর/এমএস
আরও পড়ুন
সর্বশেষ - জাতীয়
- ১ নিউ এইজ সম্পাদককে হয়রানি, ঘটনা তদন্তের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার
- ২ লেখাপড়ায় মনোযোগ দেন, প্রয়োজনে আবারও রাস্তায় নামবো
- ৩ ৩৭ বছর পর চট্টগ্রাম কমার্স কলেজে প্রকাশ্যে শিবির
- ৪ ৪৭তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি এ সপ্তাহে, ক্যাডার-ননক্যাডারে পদ ৩৭০১
- ৫ সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষ, ওষুধে ব্যয় ২০ শতাংশ