তীব্র রোদেও তিল ধারণের ঠাঁই নেই শিশু পার্কে
ঈদ মানেই অনাবিল আনন্দ। শিশু-কিশোরদের কাছে ঈদের আনন্দ যেন আরও বেশি উপভোগ্য। আনন্দ উদযাপনের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ঘুরে বেড়ানো। তাই ঈদের পরের দিনও শিশু-কিশোরদের পদচারণায় মুখরিত শিশু পার্ক। তীব্র রোদ উপক্ষো করে শিশু পার্কে তিল ধারণের ঠাঁই নেই।
উত্তপ্ত রোদে শিশু পার্কে কেউ গল্প, কেউবা সেলফি তোলায় ব্যস্ত। তীব্র এই গরমে তৃষ্ণা নিবারণের জন্য ছেলে-মেয়েদের হাতে তুলে দেন পানি ও আইসক্রিম। কেউবা গরমে একটু গাছের ছায়াই বসে বাসা থেকে আনা খাবার খাচ্ছেন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। আবার কেউ কেউ মা-বাবার সঙ্গে খুনসুঁটিতে ব্যস্ত। তারপরও তীব্র রোদের মধ্যেই শিশুদের মুখে হাসির ঝিলিক।
ঈদের দিন শিশু পার্কে ৩২ হাজার লোকের সমাগম হয়েছিল। গতকালের মতো আজও সকাল থেকেই উপচে পড়া ভিড়। ঈদ উপলক্ষে পার্কে প্রতিবন্ধী ও দুস্থদের জন্য বিনামূল্যে রাইডারে চড়ার ব্যবস্থা রয়েছে।
দুপুরে শিশু পার্কের ভেতরে ঘুরে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি রাইডারের পাশেই শত শত শিশুর লাইন। বিশেষ করে রেলগাড়ির জন্য সবচেয়ে বড় লাইন। মনে হচ্ছে যেন সাপ পেঁচিয়ে বসে আছে। স্বপ্নের রেল গাড়িতে উঠার জন্য কয়েক হাজার শিশুর অপেক্ষা।
রামপুরা থেকে পরিবারের ৫ সদস্যের সঙ্গে আসা সাত বছর বয়সী আল আমিন এই দীর্ঘ সাড়িতে দাঁড়িয়ে। সে জাগো নিউজকে জানায়, মা-দাদি ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে শিশু পার্কে ঘুরতে এসেছে। সারা বছর মাদরাসায় ক্লাস থাকায় তেমন ঘুরতে আসার সুযোগ হয় না। মাদরাসা বন্ধ থাকায় ঈদের পরের দিন চলে আসছি। কিন্তু প্রবেশ টিকিট কেটে পার্কে ঢুকেই রেলগাড়িতে ওঠার জন্য টিকিট নেয়া। তাই লম্বা লাইন হলেও রেলগাড়িতে চড়ার পরে অন্যান্য রাইডারে উঠা হবে।
সাভার থেকে ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে আসা সাইফুল ইসলাম জানান, সাভার থেকে সকালে রওনা দিয়ে দুপুরে এসে পৌঁছলাম। বাচ্চারা রেল গাড়িতে চড়ার বায়না ধরেছে। টিকিট নিলাম এখন তো দেখছি মাগরিবের নামাজের সময় হলেও সিরিয়াল পাওয়া যাবে না।
শিশু পার্কের হেড ক্লার্ক ফারহান হোসেন জানান, পার্কের ভিতরে সব সময় রেলগাড়ির জন্য ভিড় থাকে। আজও একই রকম অবস্থা। যদিও ঈদের পরের দিন সকল রাইডারের পাশেই প্রচণ্ড ভিড়।
পার্কের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. জাকির হোসেন জানান, ঈদের দিন প্রায় ৩২ হাজার লোকের সমাগম হয়েছিল। বিকেলে আকাশের পরিস্থিতি একটু খারাপ থাকার কারণে অনেক লোক পার্কে না ঢুকে ফিরে গেছেন। তবে আজ সকাল থেকে মানুষের ভিড় বাড়ছে। আশা করি, আজ লোকজন আরও বেশি হবে।
পরিবার ও আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে শিশু পার্কে আসা পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী পাবেল মিয়া জানায়, গ্রামের বাড়ি থেকে বাবা-মা, দাদা-দাদি ও আত্মীয়-স্বজনসহ ৫২ জন মিলে একটা বাস ভাড়া করেছি। ফাঁকা রাস্তা পেয়ে সকাল ৯টায় শিশু পার্কে চলে আসি, এসে দেখি গেট বন্ধ। এরপর জাতীয় জাদুঘরেও গিয়ে দেখি বন্ধ। শিশু পার্ক খোলার পর সবাই মিলে রাইডারে চড়েছি। তবে ভয়ে দোলনায় চড়েনি সে।
পাবেলের দাদা বলেন, আসছিলাম আত্মীয়-স্বজন নিয়ে ঘুরতে, শিশু পার্কে ঘোরা ফেরা শেষ। জাতীয় জাদুঘর বন্ধ থাকায় সেখানে যাওয়া হলো না। পাবেলের চাচি বলেন, শিশু পার্কে বসার এবং বিশ্রামের জায়গা নাই, খাবার নিয়ে আসছিলাম পরিবারের সদস্যেদের নিয়ে বসে একটু খেতে পারলাম না।
শিশু পার্কে ঘুরে দেখা যায়, পার্কে আসা ছেলে বুড়ো, যুবক-যুবতীদের মাঝে সর্বত্রই উৎসবমুখর পরিবেশ। শিশুদের হাসি, আনন্দ নাচ আর কলরবে রেলগাড়ির ছুটে চলা, চড়ক গাছ ঘোরানো, উড়োজাহাজ চড়া সব মিলিয়ে অভিভাবকরাও মেতেছেন ঈদ আনন্দে। আর নিরাপত্তাকর্মীদের তৎপরতায় সব ঝক্কি-ঝামেলা এড়িয়ে নিরাপদেই ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করছেন সবাই। আজ নেই মা-বাবার বকুনি, তাই ইচ্ছামতো ঈদের আনন্দ উপভোগ করেছে শিশু-কিশোররা।
শিশু পার্কের পাশাপাশি জাতীয় জাদুঘর এবং লালবাগের কেল্লা এই দুটি ঐতিহ্যবাহী বিনোদনকেন্দ্র ঈদের দিন বিকেলে খোলা ছিল না। তবে পরের দিন বিকেল তিনটা থেকে লালবাগের কেল্লা এবং জাতীয় জাদুঘর খোলা হয়েছে।
এফএইচ/জেএইচ/এমএস