সকালের ট্রেন দুপুরেও নেই, স্টেশনে হাজার হাজার যাত্রী
ঈদের সময় যত ঘনিয়ে আসছে ট্রেনের সিডিউল ততই বেশি বিলম্ব হচ্ছে। শুক্রবার বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে কিছু ট্রেন নির্ধারিত সময়ের ৫-৬ ঘণ্টা পরেও ছেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন স্টেশনে দায়িত্ব কর্মকর্তারা। তবে দুপুরের পরে যাত্রীদের ভিড় কমবে বলে মনে করছেন দায়িত্বরতরা।
শুক্রবার বিমানবন্দরে সরেজমিনে দেখা গেছে, ভোর থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে বিভিন্ন জেলার উদ্দেশে ১৬টি ট্রেন ছেড়ে গেছে। প্রতিটি ট্রেনেই নির্ধারিত সময়ের ১ থেকে ৬ ঘণ্টা বিলম্বে ছেড়েছে। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। নির্ধারিত সময়ে ট্রেন ধরতে অনেকে সেহেরি খেয়ে পরিবার পরিজনদের নিয়ে স্টেশনে পৌঁছালেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও গন্তব্যের ট্রেনের দেখা পায়নি। এতে করে ঈদের সময় যত ঘনিয়ে আসছে ভোগান্তি ততই বাড়ছে। বিলম্বে এলেও ট্রেনে উঠা নিয়ে শুরু হয় আরেক যুদ্ধ। অনেকে টিকিট না পেয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উঠছেন ট্রেনের ছাদে।
মিরপুর থেকে বিমানবন্দর রেলস্টেশনে এসেছেন ইসমত আরা। মা ও ভাই-বোনদের নিয়ে তিনি রংপুর যাবেন। তিনদিন আগে তিনি রংপুর এক্সপ্রেসের টিকিট কেটেছেন। সকাল ৯টায় তার ট্রেন আসার কথা তাই সকাল সকাল পরিবারের সবাই স্টেশনে পৌঁছে গেছেন। কিন্তু ১২টা পর্যন্ত তিনি ট্রেনের দেখা পাননি। ট্রেন কখন আসবে সেটাও জানাতে পারছেন না কেউ।
তিনি জাগো নিউজকে বলেন, বাড়ি যাবো, কিন্তু ট্রেন কখন আসবে জানি না। ট্রেন যাতে মিস না করি তাই তাড়াতাড়ি স্টেশনে পৌঁছে গেছি। ট্রেন আসার বিষয়ে স্টেশন মাস্টারের কাছে কয়েকবার জানতে চাইলে তিনিও কিছু বলতে পারছেন না। গরমের মধ্যে ট্রেনের রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার নেই।
রাজশাহী ধুমকেতু এক্সপ্রেসের টিকিট নিয়ে বিমানবন্দর স্টেশনে বসে আছেন ৬০ বছরের বৃদ্ধ মজিদ মিয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা। সকাল ৬টায় ট্রেন ছাড়ার কথা থাকলেও দুপুর হয়ে গেলেও ট্রেন আসেনি। কখন আসবে তাও অনিশ্চিত। গরমের মধ্যে হাতে পাখা নিয়ে রেললাইনের দিকে তাকিয়ে নিজেকে বাতাস করে চলছেন।
তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি বিরক্তির স্বরে বলেন, ভালোভাবে বাড়ি যাবো তাই ট্রেনের টিকিট করলাম। এখন দেখি বিপদে পড়ার অবস্থা। ভোর সাড়ে ৫টা থেকে ট্রেনের অপেক্ষায় বসে আছি, কিন্তু ট্রেনের খবর নাই। স্টেশন মাস্টার বলছেন আমাদের ট্রেন এখনও ঢাকায় পৌঁছায়নি।
পরিবার নিয়ে স্টেশনে কতক্ষণ অপেক্ষা করা যায় প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ট্রেনের টিকিটের দাম বাড়ালেও ট্রেনে তেমন সুবিধা বাড়েনি। এখনও সকালের ট্রেন দুপুরে বা বিকেলে ছাড়ছে এটাই ট্রেনের উন্নতি হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তার মতো এমন হাজারও যাত্রী পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে বাড়ি যাবার স্বপ্ন নিয়ে স্টেশনে বসে অপেক্ষা করছেন। তবে কখন যেতে পারবেন তা তারা জানেন না তারা।
বিমানবন্দর রেলস্টেশনে দেখা গেছে, ট্রেন বিলম্বের কারণে যাত্রীদের ভিড়ে দাঁড়ানোর জায়গা ছিল না। গতকাল বৃহস্পতিবার শেষ কার্যদিবস হওয়ায় সন্ধ্যার পর থেকে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে অফিস শেষ করে রাতেই বাড়ির পথে রওনা দিয়েছেন। প্লটফর্মে অপেক্ষায় যাত্রীরা জানান, তাড়াহুড়ো করে স্টেশনে পৌঁছালেও ট্রেনের অপেক্ষায় বসে থাকা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
স্টেশনে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা জানান, সকাল থেকে বিমানবন্দর স্টেশন থেকে ১৬টি ট্রেন ছেড়ে গেছে। তার মধ্যে রাজশাহীর ধুমকেতু এক্সপ্রেস সকাল ৬টায় ছাড়ার কথা থাকলেও দেড়টা পর্যন্ত ছাড়েনি, রংপুর এক্সপ্রেস সকাল সাড়ে ৯টায় ছাড়ার কথা থাকলেও এ ট্রেন এখনও কমলাপুর থেকে আসেনি। সৈয়দপুরের ট্রেন নীল সাগর ৮টায় ছেড়ে যাবার কথা থাকলেও এখনও ঢাকায় পৌছায়নি, লালমনিরহাটের ঈদ স্পেশাল এক্সপ্রেস ৯টা ৪৫ মিনিটে আসার কথা থাকলেও ট্রেননি এখসও পৌঁছায়নি। খুলনার সুন্দরন এক্সপ্রেস ৩ ঘণ্টা বিলম্বে ছেড়েছে।
বিমানবন্দর স্ট্রেশন মাস্টার আবুল আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, সকাল থেকে ১৬টি ট্রেন ছেড়ে গেছে। প্রতিটি ট্রেনেই ছাড়তে বিলম্ব হয়েছে। যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় হওয়ায় ট্রেন সিডিউল মেনটেইন করতে বিলম্ব হচ্ছে। এছাড়াও ইঞ্জিল ফ্রেসকরণসহ ও ঢাকা থেকে ট্রেন ছাড়তে বিলম্ব হওয়ায় সিডিউল বিলম্ব হচ্ছে।
তিনি বলেন, সকলকে নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে দেয়াটাই আমাদের মূল লক্ষ্য। সেটিকে মাথায় রেখে আমরা কাজ করছি। তবে আজ বিকেল থেকে যাত্রীদের ভিড় কমে যাবে। এরপর থেকে সিডিউল মোোবেক ট্রেন ছাড়া সম্ভব হবে বলেও তিনি জানান।
ছাদে যাত্রী উঠার বিষয়ে তিনি বলেন, পরিবারের সঙ্গে সকলে ঈদ করতে বাড়ি যাচ্ছে। ট্রেনের ভেতরে জায়গা না পেয়ে অনেকে ছাদে উঠছেন। বিষয়টি মানবিক কারণে বাধা দেয়া হচ্ছে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এমএইচএম/এমএএস/জেআইএম