ঘরমুখো মানুষের ভয় যানজট
প্রত্যেকবারই ঈদ আসলে মন্ত্রী ও পুলিশ কর্মকর্তাদের আশ্বস্ত বাণী সড়কে ঈদযাত্রায় যানজট হবে না। কিন্তু যাত্রার শুরুর পরই বদলে যায় চিত্র। শুরু হয় যানজট। ভোগান্তিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় বাসে বসে থাকা, সিডিউল বিপর্যয়ে যাত্রা আরও দীর্ঘ হওয়ার অভিজ্ঞতা কম নয় ঘরমুখো মানুষের। তবে এবার এখন পর্যন্ত যানজটের খবর না আসায় স্বস্তি ঘরমুখো মানুষের মধ্যে।
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার পর টিকিটের বেশি চাহিদা ছিল ১৩ ও ১৪ জুনের। সকাল থেকেই তাই বাড়তে থাকে কাউন্টারগুলোতে ভিড়। বিকেল নাগাদ সে ভিড় আরও বাড়বে বলে জানান পরিবহন কর্মকর্তাবৃন্দ।
বুধবার রাজধানীর গাবতলী আন্ত:জেলা বাস টার্মিনাল সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ঘরমুখো মানুষের চাপ। বিভিন্ন রুটে যাত্রীরা কাউন্টারে কাউন্টারে ভিড় করছেন। কাঙ্ক্ষিত সময়ের বাস আসার অপেক্ষা।
হানিফ কাউন্টারে কথা বলে জানা যায়, ভোর বেলা থেকে বিভিন্ন রুটে বাস যথাসময়ে ছেড়ে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত যানজট কিংবা সিডিউল বিপর্যয় দেখা যায়নি।
গাইবান্ধা রুটে চলাচলকারী আল হামরা পরিবহনের গাবতলী কাউন্টারে গিয়ে দেখা যায়, প্রচণ্ড ভিড়। ভেতরে বসার স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় বাইরে ফুটপাতে অবস্থান করতে দেখা যায়।
কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘তুলনামূলক আজ চাপ বেশি। ১৪ জুনের টিকিটের চাহিদা সবচেয়ে বেশি ছিল। সে অনুযায়ী আরও বেশি ভিড় হবে কাল।’
গাবতলীর হানিফ, এসআর, নাবিল, শ্যামলী ছাড়াও প্রত্যেকটি কাউন্টারেই বেশ ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
কল্যাণপুর ডিপজল বাস কাউন্টারের টিকিট মাস্টার আব্দুর সবুর জানান, আমাদের প্রত্যকটি রুটের টিকিট বিক্রি সম্পন্ন হয়েছে। সে অনুযায়ী ভিড় তো হবেই।
কল্যাণপুর ন্যাশনাল ট্রাভেলস কাউন্টারে কথা হয় শাহাজাদা আবু বকরের সঙ্গে। রাজশাহীর বানেশ্বরের এ যাত্রী বলেন, ‘স্ব পরিবারে বাড়ি যাচ্ছি। খুব ভালো লাগছে। সিডিউল বিপর্যয়ে পড়তে হয়নি। বাস চলে আসছে। তবে মনে একটাই ভয় ‘যানজট’। না জানি যানজট দেখা দেয়।’
গাবতলী নাবিল কাউন্টারে কথা হয় দিনাজপুরের যাত্রী শরিফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলছেন, প্রত্যেকবারই আশ্বস্ত হয়ে বাড়ি রওনা হই, যানজটে পড়ি। হয়তো এবার সত্যি সত্যি যানজটে পড়ব না। ফোর লেন চালু হয়েছে কাল (মঙ্গলবার)। সে কারণে স্বস্তি লাগছে। বাকি পথ আল্লাহ ভরসা।
নাবিল পরিবহনের গাবতলী কাউন্টার ম্যানেজার আবু সাঈদ সুইট বলেন, ‘এবারও ভোগান্তি কমাতে সহজ ডটকমের মাধ্যমে অনলাইনে নাবিলের টিকিট বিক্রি করা হয়েছে। ঈদযাত্রায় আমাদের পক্ষ থেকে করণীয় যা সম্ভব করেছি। এখন যাত্রা শুভ হলেই হয়।’
বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সোহাগ পরিবহনের এমডি ফারুক তালুকদার সোহেল গাবতলীতে জাগো নিউজকে বলেন, ‘যানজট নিয়ে ভীতি সবসময় ছিল। তবে সরকার খুব চেষ্টা করেছে। মন্ত্রীও খুব দৌড়ঝাঁপ করছেন। এবার যানজট লক্ষ্য করা যায়নি।’
ঈদে স্পেশাল দিনগুলোতে চাপ বেশি থাকে। সে চাপ সামাল দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হয়। ছুটি লম্বা হলে যাত্রীদের ভোগান্তি কমে। আমরাও টিকিটের ডিমান্ড ও যাত্রী ক্যারি (বহন) করার সুযোগটাও পাই, জানান তিনি।
উল্লেখ্য, বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালে নিরাপত্তা পরিস্থিতি পরিদর্শন শেষে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ‘আশ্বস্ত করেছিলাম গত কয়েক বছরের চেয়ে এবার ঈদযাত্রা ভাল হবে। এখন পর্যন্ত কোথাও যানজট দেখা যায়নি। আশা করছি, শেষ অবধি এ ধারাবাহিকতা আমরা অব্যাহত রাখতে পারব। সকলকে নিয়ে সে চেষ্টা চলছে। রাস্তার কারণে এবার কোথাও যানজট হবে না। কারণ, আমরা চন্দ্রা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত ফোর লেন চালু করেছি।'
প্রস্তুতি আয়োজন গতবারের চেয়ে জোরদার করেছি। হাইওয়ে তৃণমূলে পাঁচটি মিটিং করেছি। হাইওয়ে পুলিশ, থানা জেলা পুলিশসহ স্থানীয় সরকারের নেতৃবৃন্দদের যানজট নিরসন ও যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে কাজ করতে বলা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।
জেইউ/এসআর/এমএস