বিমানের ফ্লাইট অপারেশনে কর্মঘণ্টা লঙ্ঘন: উপেক্ষিত ফ্লাইট সেফটি
টানা ১৫ ঘণ্টার বেশি ফ্লাইট করার নিয়ম না থাকলেও বিমানের পাইলটদের দিয়ে ২২ ঘণ্টা ফ্লাইট করানো হচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইকাও) নির্দেশনাও মানা হচ্ছে না। বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। সস্প্রতি এক পাইলটের এ জাতীয় কর্মকাণ্ড বিমানের ফ্লাইট অপারেশনকে বিতর্কিত করে তুলছে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ফ্লাইট অপারেশন সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ জুন চুক্তিভিত্তিক সিনিয়র পাইলট ক্যাপ্টেন নাসেরের বোয়িং ৭৭৭ নিয়ে চট্রগ্রাম হয়ে জেদ্দার আকাশে উড়ার কথা ছিল। সন্ধ্যায় ঢাকা থেকে উড্ডয়ন করে রাত সাড়ে আটটায় চট্টগ্রামে অবতরণ করে বিমানটি। বৈরী আবহাওয়ার কারণে চট্টগ্রাম থেকে আর জেদ্দার উদ্দেশে রওনা দিতে পারেননি ওই পাইলট।
নিয়মানুযায়ী রাত বারটায় রানওয়ে বন্ধ হয়ে যায়। অন-বোর্ড যাত্রী নিয়ে ওই পাইলট রাতের জন্যে আটকা পড়েন। এ সময় হোটেলে গিয়ে বিশ্রাম না নিয়ে ফ্লাইটেই রাত কাটান তিনি। চট্রগাম থেকে সকালে জেদ্দার উদ্দেশে উড্ডয়ন করার আগেই ডিউটি টাইম ওভার হয়ে যায়। টানা ১৫ ঘণ্টার বেশি সময় ফ্লাইট করার বিষয়টি জেনেও তিনি ফ্লাইট অপারেশনের পরিচালক ও চিফ অব ফ্লাইট সেফটির কাছে কোনো সহযোগিতা চাননি। নিজের বুদ্ধিতেই যাত্রীদের ঝুঁকির মুখে ফেলে ফ্লাইটটি নিয়ে জেদ্দা যান।
জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ-বেবিচকের পরিচালক (ফ্লাইট সেফটি অ্যান্ড রেগুলেশনস) উইং কমান্ডার চৌধুরী এম জিয়াউল কবির জাগো নিউজকে বলেন, ‘এটি বড় ধরনের ভায়োলেশন (লঙ্ঘন)। পূর্ণ বিশ্রাম ছাড়া একজন পাইলটের ফ্লাইট করা ঠিক না। কারণ ককপিট ক্রুদের উপরই নির্ভর করে ফ্লাইটের সেফটি। তারা যদি সুস্থ না থাকেন, তাহলে যে কোনো ধরনের দুর্ঘটনায় কবলিত হতে পারে ফ্লাইট। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অপারেশন লগ বুকে ওই পাইলটের ডিউটি অন (কর্মঘণ্টা শুরু) হয় ১০ জুন বিকেল সাড়ে ৫ টায়। ডিউটি অফ (কর্মঘণ্টা শেষ) হয় জেদ্দার স্থানীয় সময় ১১ জুন বিকেল সাড়ে তিনটায়। টোটাল ডিউটি টাইম ২২ ঘণ্টা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট অপারেশনের পরিচালক ফারহাত হাসান জামিল জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের কাছে ফার্স্ট হচ্ছে ফ্লাইট সেফটি। ডিউটি টাইম ভায়লেশনের (কর্মঘণ্টা লঙ্ঘন) বিষয়ে আমদের কাছে অভিযোগ এসেছে। বিষয়টি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
বিমানের একাধিক পাইলটের সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে বোয়িং ৭৭৭ এর জন্য রয়েছে অতিরিক্ত ১৪ সেট পাইলট। নিকট ভবিষ্যতে আসা ড্রিম লাইনার (বোয়িং ৭৮৭) চালানোর জন্য ইতোমধ্যে এ মাসে ১২ সেটের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে।
সর্বশেষ সেট প্রশিক্ষণে যাবে অক্টোবরে। এর বাইরে অতিরিক্ত রয়েছে দুই সেট। এর বাইরে রয়ে গেছেন চুক্তিভিত্তিক আরও ৫ জন পাইলট।
আরএম/এসআর/আরআইপি