‘এ সংস্কৃতি কারও জন্যই সন্তোষজনক নয়’
রাজধানীর শাহবাগ থেকে গণজাগরণ মঞ্চের একাংশের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারকে তুলে নেয়ার কয়েক ঘণ্টা পর ছেড়ে দেয়া হয়। গতকাল বুধবার বিকেলে শাহবাগ থেকে তুলে নেয়ার পর তাকে র্যাব-৩ কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে র্যাব কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয় তার।
র্যাব কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় রাজধানীর শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের মাদকবিরোধী অভিযানে ‘বিনা বিচারে হত্যা’র প্রতিবাদে আয়োজিত কর্মসূচির বিষয়টি উঠে আসে।
আরও পড়ুন >> ‘একটু যেতে হবে’ বলে ইমরানকে নিয়ে গেল র্যাব
বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব বিষয়ে কথা বলেন ইমরান এইচ সরকার।
প্রসঙ্গত মে মাসে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সারাদেশে মাদকবিরোধী অভিযান শুরু করে। গতকাল বুধবার পর্যন্ত এ অভিযানে নিহতের সংখ্যা ১৩১ জনে পৌঁছায়।
কয়েকটি ক্ষেত্রে গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়ার কথা জানিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তাদের মৃত্যু হয়েছে মাদক চোরাকারবারিদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে।
এরই প্রতিবাদে আন্দোলনের ডাক দেন গণজাগরণ মঞ্চের একাংশের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার। গতকাল বুধবার কর্মসূচি শুরুর আগে র্যাব সদস্যরা তাকে শাহবাগ এলাকা থেকে তুলে নিয়ে যান।
ওই ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ইমরান বলেন, গাড়িতে তোলার পর আমার মুখ কালো কাপড় দিয়ে বেঁধে দেয়া হয়, হাতে হাতকড়া পরানো হয়। মুখে কাপড় থাকায় কোথায় নেয়া হয়েছে তা বুঝতে পারিনি। নিয়ে যাওয়ার পর র্যাবের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আমার কাছে এসে বলেন, ‘আপনার সঙ্গে আলোচনার জন্য এখানে আনা হয়েছে। আপনাদের আন্দোলনের বিষয়ে জানতে চাই।’
এ সময় আমার মুখের কাপড় ও হাতকড়া খুলে দেয়া হয়।
আমি তাদের বলি, আমাদের অবস্থানও মাদকের বিরুদ্ধে কিন্তু বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সমর্থন করি না।
তারা (র্যাব কর্মকর্তা) আমাকে অভিযানের পক্ষে যুক্তি দেখান। বলেন, ‘অপরাধীদের ধরলে তারা ছাড়া পেয়ে যায়, তাই তাদের এমন অভিযান।’
আমার বক্তব্য ছিল, ‘সরকার যেহেতু মাদকের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণা করেছে তাই তারা আলাদা ‘দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল’ করে তাদের সাজা দিতে পারে, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কেন?’
‘তাদের সঙ্গে আমার কথোপকথন বা আলোচনা আপত্তিকর ছিল না। তারা সৌহার্দ্যের সঙ্গে আমার সঙ্গে কথা বলেন। আমার ভাই ও বোনের নম্বর নিয়ে তারা (র্যাব কর্মকর্তারা) তাদের ফোন দিয়ে র্যাব কার্যালয়ে ডাকেন। এরপর তাদের জিম্মায় আমাকে ছেড়ে দেয়া হয়।’
র্যাব-৩ কার্যালয় থেকে বের হয়ে একটি উবারে চড়ে বাড়ি ফিরি- যোগ করেন ইমরান।
আরও পড়ুন >> জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ইমরানকে ছেড়ে দিয়েছে র্যাব
প্রসঙ্গত, বুধবার বিকেলে মাদকবিরোধী অভিযানে ‘বিনা বিচারে হত্যা’র প্রতিবাদে শাহবাগে পূর্বঘোষিত সমাবেশ থেকে আটক করা হয় ইমরানকে। কর্মসূচিতে যোগ দিতে ইমরান বিকেল ৪টার দিকে শাহবাগে আসেন। এ সময় জাতীয় জাদুঘরের সামনে ছাত্র ইউনিয়নের প্রোগ্রাম চলছিল। তিনি ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়রত অবস্থায় ঘটনাস্থলে উপস্থিত একটি মাইক্রোবাস থেকে নেমে সাদা পোশাকধারী ৭-৮ র্যাব সদস্য ‘একটু যেতে হবে’ বলে তাকে তুলে নিয়ে যান। বাধা দিতে গেলে র্যাব সদস্যদের হাতে প্রহৃত হন ছাত্র ইউনিয়নের কয়েকজন সদস্য।
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাত ১১টার দিকে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেন, র্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান। ওই সময় তিনি বলেন, ‘তাকে (ইমরান এইচ সরকার) আটক করা হয়েছিল। কিছু বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন ছিল। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাত ১১টার দিকে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।’
‘অনেক কিছুই বিবেচনায় ছিল। সেটা বলার সুযোগ নেই’- যোগ করেন তিনি।
বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে ইমরান এইচ সরকার আরও বলেন, ‘আমাকে অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট ছাড়া সিনেমাটিক স্টাইলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সেটা কাম্য ছিল না। এটি আইনের মধ্যেও পড়ে না। সমাবেশের অনুমতি নেয়া, না নেয়া র্যাবের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ আছে, তারা এগুলো দেখবে। এছাড়া আমাদের অনুমতি নেয়া ছিল। ৩ জুন যখন আমাদের সমাবেশ করতে দেয়া হয়নি তখন গতকালের সমাবেশের বিষয়টি ডিএমপি কমিশনার ও শাহবাগ থানা পুলিকে জানিয়ে আমরা চিঠি দেই। মৌখিকভাবেও জানাই। শাহবাগে সমাবেশ করতে তো অনুমতি লাগে না। আগেও আমরা সমাবেশ করেছি।’
‘আমাকে এভাবে নিয়ে যাওয়া উচিৎ হয়নি। আমার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে শাহবাগ থানায় বসে কথা বলা যেত। তাছাড়া আমার সহযোদ্ধাদের কেন মারধর করা হলো?’
তিনি বলেন, ‘একটা প্রতিবাদ তো এভাবে বাধা দেয়া যায় না। এটি দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য কল্যাণকর নয়। মানুষ এমনিতেই কথা বলতে পারে না, ভীতির মধ্যে রয়েছে। এ সংস্কৃতি কারও জন্যই সন্তোষজনক নয়।’
এআর/এমএআর/পিআর