যমুনা ফিউচার পার্কে জমেনি ঈদ কেনাকাটা
রমজানের ১৪ রোজা পার হলেও এশিয়ার সর্ববৃহৎ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত শপিংমল যমুনা ফিউচার পার্কে এখনো জমেনি ঈদ কেনাকাটা। মাসের মাঝামাঝিতে রোজা শুরু হওয়ায় বিক্রিতে এবার ধীরগতি বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়কর্মী অলস সময় পার করছেন। যদিও কিছু প্রতিষ্ঠানে ক্রেতা দেখা গেছে তবে সেটা তুলনামূলক কম।
বিক্রয়কর্মীরা জানান, যমুনা ফিউচার পার্কে সাধারণত অভিজাত পরিবারের সদস্যরা কেনাকাটা করেন। গত কয়েক বছর ধরে রোজার শুরু থেকেই ঈদকেন্দ্রিক কেনাকাটায় মুখরিত ছিল যমুনা ফিউচার পার্ক। গত বছর ৫ রোজা যেতে না যেতেই ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়। যা ঈদের আগের দিন পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। অথচ এবার ১৪ রোজা পার হলেও বিক্রি জমেনি।
তারা আরও বলেন, এবার রোজা শুরু হয়েছে মাসের মাঝামাঝিতে। ফলে মানুষের হাতে অলস টাকা তুলনামূলক কম। যে কারণে ঈদকেন্দ্রিক বিক্রি কিছুটা কম। তবে শুক্রবার (১ জুন) থেকে বিক্রি জমতে পারে।
যমুনা ফিউচার পার্কে একাধিক স্টল নিয়ে ব্যবসা করছে এমন একটি প্রতিষ্ঠান দিনা লাইফ স্টাইল। প্রতিষ্ঠানটির ১ এ-০০৪ স্টলের বিক্রয় প্রতিনিধি শিল্পি জাগো নিউজকে বলেন, এবারে বিক্রি নেই বললেই চলে। ইতোমধ্যে ১৪ রোজা চলে গেছে। কিন্তু বিক্রি শুরুই হয়নি। বরং সাধারণ সময়ে যে বিক্রি হয়, এখন তার থেকেও কম হচ্ছে। এমনও দিন যাচ্ছে ১০ হাজার টাকাও বিক্রি হচ্ছে না।
বিক্রি কম হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা তো আমরা বুঝতে পারছি না। গত বছর তো ৫ রোজার পর থেকেই ঈদের বিক্রি শুরু হয়। কিন্তু এবার বিক্রিই নেই। ক্রেতারা কোথায় যাচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না।
যমুনা ফিউচার পার্কের পাশাপাশি রাজধানীর গুলশান, ধানমন্ডি, মৌচাক, উত্তরাসহ বিভিন্ন অভিজাত অঞ্চলে ব্যবসা করছে এমন একটি প্রতিষ্ঠান রাপতার। যমুনা ফিউচার পার্কের দ্বিতীয় তলায় প্রতিষ্ঠানটির স্টলে বিক্রয় প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করা আপন খান লিমন জাগো নিউজকে বলেন, গত বছর প্রথম থেকে ১০ রোজা পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এবার প্রথম থেকে ১৪ রোজা পর্যন্ত সব মিলিয়ে তিন লাখ টাকারও বিক্রি হয়নি।
তিন আরও বলেন, গত বছর ঈদের কেনাকাটায় যে আমেজ ছিল এবার তা নেই। এরপরও আমরা আশা করছি আগামী শুক্রবার থেকে ঈদের বিক্রি শুরু হবে। কারণ মাস শেষে তখন অনেকের হাতে বেতনের টাকা আসবে।
লিমন জানান, আমরা ছেলেদের জিন্স প্যান্ট ২১৮০-৫৪৮০ এবং গ্যাবাডিং প্যান্ট ১১৮০-৩৮৮০ টাকায় বিক্রি করছি। এছাড়া ছেলেদের শার্ট ১৪০০-১৭০০, ইমপোর্টের শার্ট ২১০০-২৯৮০, টি শার্ট ১৪০০-২৭৮০, ফরমাল শার্ট ১২০০-২৯৮০ এবং পাঞ্জাবি ১৪০০-৭৮৮০ টাকায় বিক্রি করছি। আর মেয়েদের পোশাকের মধ্যে লং গাউন ২৩০০-৫০০০, সেমি লং গাউন ১৪০০-২৭০০, লেডিস প্যান্ট ১২০০-৩৩৮০, সিঙ্গেল কামিজ ১৭০০-২৯৮০ টাকায় বিক্রি করছি।
ব্র্যান্ড কিউ স্টলের মো. ফরহান খান বলেন, আমাদের কাছে লাইফ স্টাইলের সব পণ্যই পাওয়া যায়। ক্রেতারা সিঙ্গেল টপস ১৪০০-২০০০, লং টপস ২২০০-৬৫০০, পাঞ্জাবি ২৪০০-১৬৫০০ এবং শাড়ি ৪০০০ টাকার মধ্যে কিনতে পারবেন।
তিনি বলেন, ঈদকেন্দ্রিক বিক্রি মোটামুটি ভালোই হচ্ছে। তবে শুক্রবার থেকে বিক্রি বাড়বে বলে আমরা আশা করছি। এবার মেয়েদের পোশাকের মধ্যে সোল্ডার কাটিং কামিজ ভালো চলছে। তবে ছেলেদের ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো পোশাকের প্রতি অতিরিক্ত চাহিদা নেই। সব পোশাকই সমান তালে চলছে।
প্লাস পয়েন্টের ইমন বলেন, ঈদকেন্দ্রিক বিক্রি মোটামুটি ভালো। তবে গত বছরের তুলনায় এবার প্রথমদিকে বিক্রি কিছুটা কম হয়েছে। মাসের মাঝামাঝি সময়ে রোজা শুরু হওয়ায় এমনটা হয় তো হয়েছে। তবে আশা করছি শেষ পর্যন্ত ঈদকেন্দ্রিক বিক্রি ভালো হবে। ১৬ রোজার পর থেকেই পুরোদমে ঈদের বিক্রি শুরু হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ইনফিনিটির ম্যানেজের শোভন বলেন, সাধারণত ১-১০ রাজা পর্যন্ত বিক্রিতে কিছুটা ধীরগতি থাকে। তবে আমাদের বিক্রি ভালোই হচ্ছে। আশা করছি শুক্রবার থেকে বিক্রি বাড়বে এবং ক্রেতাদের ভিড় ২৮ রোজা পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
এবার মেয়েদের আনস্টিজ থ্রি-পিস ভালো বিক্রি হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, বাচ্চাদের পোশাক ১২৫০-৫৫০০ টাকায় পাওয়া যাবে। মেয়েদের ওয়েস্টার্ন কালেকশন আছে ১৮৫০-৮৫৫০ টাকা দামের, এগুলোও বেশ ভালো চলছে। নিজস্ব পোশাকের পাশাপাশি ভারতীয় কিছু কালেকশন আছে। এছাড়া লাইফ স্টাইলের সব পণ্যই আমাদের স্টল থেকে ক্রেতারা সংগ্রহ করতে পারবে।
এমএএস/এএইচ/পিআর