যারা হতে পারেন জাতীয় অধ্যাপক
টানা তিন বছর পর আনুষ্ঠানিকভাবে ‘জাতীয় অধ্যাপক’ হিসেবে নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে আগামী ৩ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি সভা ডাকা হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রীর সভাপত্বি সে সভায় চারজনকে জাতীয় শিক্ষক হিসেবে নির্বাচন করা হবে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় অধ্যাপক নিয়োগে তিন বছর আগে কমিটি গঠন করা হলেও এরপর আর বৈঠকেই বসেনি ওই কমিটি। চার সদস্যের নির্বাচনী ওই কমিটির কোনো কোনো সদস্য জানেনই না কমিটি গঠনের বিষয়। দুই বছরে জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে কাউকে নিয়োগ দেয়া হয়নি। ফলে পদটি শূন্য রয়েছে।
সর্বশেষ নিয়োগ পাওয়া পাঁচজন জাতীয় অধ্যাপকের তিনজন মেয়াদ চলাকালীন মারা গেছেন। বাকি দুজন মেয়াদ শেষ করেছেন প্রায় দুই বছর আগে। ফলে দেশে বর্তমানে কোনো জাতীয় অধ্যাপক নেই। অবশ্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা জাতীয় অধ্যাপক নিয়োগের প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু করেছে। আগামী ৩ জুন কমিটি বৈঠকে বসবে।
কমিটির সূত্রে জানা গেছে, ইউজিসির সুপারিশ অনুযায়ী জাতীয় অধ্যাপক নির্বাচনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক ড. আনিসুজ্জামান, ঢাকা মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ডা. কাজী দীন মোহাম্মদ, বঙ্গবন্ধ শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত, এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী, সাবেক ইউজিসি চেয়ারম্যান ড. এ কে আজাদ চৌধুরী, বুয়েটের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এইচ খানসহ মোট নয়জন নতুন জাতীয় অধ্যাপকের তালিকায় রয়েছেন।
জানা গেছে, সর্বশেষ ২০১১ সালের জুন মাসে পাঁচজন শিক্ষাবিদকে জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ না হতেই তাদের মধ্যে তিনজন মারা যান। বাকি দুজনের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৬ সালের জুনে। ‘জাতীয় অধ্যাপক’ বাংলাদেশের বিশেষ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা, যা বাংলাদেশ সরকার শিক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও গবেষণার জন্যে দেশের বিশিষ্ট সুনামধারী শিক্ষক, চিন্তাবিদ ও গুণী ব্যক্তিদের এ খেতাব দেয়া হয়। ১৯৭৫ সাল থেকে এই সম্মাননা দেয়া হচ্ছে। সাধারণত পাঁচ বছর মেয়াদের জন্য কোনো বিশিষ্ট ব্যক্তি জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্তি পেয়ে থাকেন। তবে ক্ষেত্রবিশেষে মেয়াদ আরও দীর্ঘ হতে পারে। পুনর্নিয়োগের ব্যবস্থাও আছে। জাতীয় অধ্যাপকদের কিছু শর্ত মানতে হয়।
শর্তগুলো হলো- জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে তারা সরকারের দেয়া নির্ধারিত হারে সম্মানী ভাতা পাবেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের মাধ্যমে তারা এ ভাতা পাবেন। তারা ইচ্ছানুযায়ী কোনো গবেষণা সংস্থা বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থেকে নিজের পছন্দমতো ক্ষেত্রে গবেষণামূলক কাজ করতে পারবেন।
তবে যে ক্ষেত্রে কাজ করবেন তা শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে জানাতে হবে। তারা যে শিক্ষা বা গবেষণা প্রতিষ্ঠানে সংযুক্ত থাকবেন সে প্রতিষ্ঠানের কাছে তাদের শিক্ষা বা গবেষণামূলক কাজের বার্ষিক প্রতিবেদন দেবেন। ওই প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যানকে তাদের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে জানাবে। তারা যে শিক্ষা বা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত থাকবেন সেই প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা বা গবেষণামূলক কাজ করার সুযোগ-সুবিধা পাবেন।
এ পদে থাকাকালীন তাদের যেসব বই-পুস্তক ছাপানো হবে, তা থেকে পাওয়া সব সুযোগ-সুবিধা তারা নিতে পারবেন। তারা সরকারের অনুমতি নিয়ে বিদেশে যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভ্রাম্যমাণ অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করতে পারবেন। জাতীয় অধ্যাপক পদে থাকাকালীন তারা অন্য কোনো বেতনভুক্ত চাকরি করতে পারবেন না। যদি করেনও তবে ওই চাকরি থেকে কোনো বেতন বা আর্থিক সুবিধা নিতে পারবেন না। তারা সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে বিবেচিত হবেন না।
জাতীয় অধ্যাপক (নিয়োগ, শর্তাবলী ও সুবিধা) সিদ্ধান্তমালা ১৯৮১ (সংশোধিত) অনুযায়ী শিক্ষা মন্ত্রণালয় জাতীয় অধ্যাপক নিয়োগে বাছাই করে। শিক্ষামন্ত্রী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক মন্ত্রী ও সাবেক জাতীয় অধ্যাপক বা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ শিক্ষাবিদদের নিয়ে এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সিদ্ধান্ত ও মনোনয়ন অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশে রাষ্ট্রপতি এই নিয়োগ দেন।
সর্বশেষ ২০১৫ সালের ১৮ মে কমিটি গঠন করা হয়। শিক্ষামন্ত্রীকে সভাপতি করে গঠিত ওই কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। ২০১৫ সালে নতুন কমিটি গঠন এবং ২০১৬ সালের জুন মাসে সবশেষ নিয়োগ পাওয়া অধ্যাপকদের মেয়াদ শেষ হলেও নতুন করে নিয়োগ দেয়ার দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, ইতোমধ্যে নতুন জাতীয় অধ্যাপক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কাছে তারা নাম প্রস্তাবের সুপারিশ করতে চিঠি দিয়েছে। ৩ জুলাই এ সংক্রান্ত সভা বসবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) মো. আব্দুল্লাহ আল হাসান চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘জাতীয় অধ্যাপক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। নতুন করে চারজন ব্যক্তিকে জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে ঘোষণা করতে রাষ্ট্রপতির কাছে সেই সুপারিশ পাঠানো হবে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পেলেই নির্বাচিত ব্যক্তিদের মর্যাদাপূর্ণ এ পদে বসানো হবে।
এমএইচএম/এমবিআর/আরআইপি