সাশ্রয়ী দামে কেনাকাটায় সবার পছন্দ বঙ্গবাজার
* ২১ হাজার ২৫০ বর্গফুট জায়গায় ৪ হাজার ছোট ছোট দোকান
* আদর্শ হকার্স মার্কেট, মহানগরী ও বঙ্গ গুলিস্তান- এই তিন অংশে বঙ্গবাজার
* সব বয়সের নারী-পুরুষের সব রকমের পোশাকই পাওয়া যায়
রমজান মাসের দিনগুলো ক্রমেই কমছে। আসছে ঈদুল ফিতর। সামর্থ্য অনুযায়ী ঈদ উৎসবে পরিবার-পরিজন ও নিজেকে নতুন পোশাকে সাজাকে চান সবাই। তাই উৎসবপ্রিয় মানুষের পদচারণা বাড়ছে ঢাকার মার্কেটগুলোতে।
রাজধানীতে কেনাকাটার অন্যতম স্থান বঙ্গবাজার। রয়েছে পণ্যের সাশ্রয়ী দাম। ফলে বাজারটি সবশ্রেণির মানুষেরই পছন্দ। পাওয়া যায় সব ধরনের পোশাকও। পাইকারি ও খুচরা বিক্রিতে বঙ্গবাজার অপ্রতিদ্বন্দ্বী। এমনটায় মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
আদর্শ হকার্স মার্কেট, মহানগরী ও বঙ্গ গুলিস্তান- এই তিনটি অংশে বঙ্গবাজার বিভক্ত। ২১ হাজার ২৫০ বর্গফুট জায়গায় প্রায় ৪ হাজার ছোট ছোট দোকান রয়েছে বলে জানিয়েছেন বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা বলছিলেন, বঙ্গবাজারে মোটামুটি সব বয়সের নারী-পুরুষের সব রকমের পোশাকই পাওয়া যায়। আপনি কমদামে জামা, প্যান্ট, পাঞ্জাবি, গেঞ্জি, থ্রি-পিস, শাড়ি, লুঙ্গি, জুতা, জাঙ্গিয়া, ব্রাসহ বিভিন্ন ধরনের পোশাক কিনতে পারবেন।
রাজধানীর অন্যান্য মার্কেটের তুলনায় বঙ্গবাজারের পোশাকের দাম কম কেন? এ বিষয়ে ব্যবসায়ী বিল্লাল হোসেন জানান, বিদেশি ক্রেতা ও তাদের স্থানীয় প্রতিনিধিদের যোগান দেয়া কাঁচামাল ব্যবহারের পর দেশের পোশাক শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কাছে যত কাপড়, সুতা, বোতাম, জিপার ইত্যাদি উদ্বৃত্ত থাকে মূলত সেগুলো দিয়ে তৈরি বলে বঙ্গবাজারের পোশাক দামে সস্তা।
বঙ্গবাজারে পাঞ্জাবি বিক্রির দোকান ঢাকা গার্মেন্ট। এই দোকানের মালিক মো. ওয়াসিম জানান, এখানে ৩০ থেকে ৩৫টি পাঞ্জাবির দোকান রয়েছে। ২০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকায় এখানে পাঞ্জাবি পাওয়া যায়।
‘২০ রোজা পর্যন্ত মূলত পাইকারি বিক্রি চলবে। কিন্তু খুচরা বিক্রি চলবে ঈদ পর্যন্ত। পাইকারি ও খুচরা- যে কোনোভাবেই পাঞ্জাবি কেনা যাবে,’- বলেন তিনি।
বঙ্গবাজারে শার্ট বিক্রির দোকান হিরণ ফ্যাশন। এই দোকানের বিক্রেতা সজল বলেন, ‘হাফ হাতা জামার তুলনায় ফুল হাতা জামার দাম একটু বেশি। তবে বঙ্গবাজারে বাংলাদেশের যে কোনো জায়গার চেয়ে কম দামে আপনি জামা কিনতে পারবেন। তাই আমাদের ক্রেতা বেশি।’
তিনি জানান, হাফ হাতা শার্ট সর্বনিম্ন দাম ১৫০, সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা। এ ছাড়া ফুল হাতা শার্ট ১৫০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়। চায়না কাপড়ের শার্টের দাম ৪০০ থেকে সর্বোচ্চ দেড় হাজার টাকা।
মাস্টার গার্মেন্টের মালিক মিজান বলেন, ‘আমরা নারী ও শিশুদের পোশাক বিক্রি করি। ঈদের বেচাবিক্রি শুরু হয়েছে। মানুষ মে মাসের বেতন ও ঈদের বোনাস পেলে বিক্রি অনেক বাড়বে।’
তিনি বলেন, ‘ছেলে শিশুদের জামা-প্যান্টের দাম ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। মেয়ে শিশুদের ফ্রকের দাম ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা। সুতিকাপড়ের থ্রি-পিস ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা। ভারতীয় কিংবা পাকিস্তানি থ্রি-পিসের দাম পড়বে ১ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা। লন, ভয়েল, শাটিনের থ্রি-পিসের দাম ৭৫০ থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে। প্রিন্টের থ্রি-পিসের দাম আরও কম। ৪৫০ থেকে ৯০০ টাকায় পছন্দের কাপড় এখানে মিলবে।’
এ ছাড়া মানভেদে নারীদের থ্রি-পিস ২৫০ থেকে দেড় হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। আর শাড়ির দাম সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা। মেয়েদের এক পিস কামিজ ২২০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি করা হয় বলে জানান বিক্রেতা মিজান।
জিন্স প্যান্ট বিক্রি করে মীর গার্মেন্ট। এই দোকানের বিক্রেতা সাগর বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে ভালোই বিক্রি হচ্ছে। সামনে বিক্রি আরও বাড়বে।’ বঙ্গবাজারে জিন্স ও গ্যাভাডিন প্যান্ট ২০০ থেকে দেড় হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যায় বলেও জানান তিনি।
গেঞ্জি বিক্রির দোকান স্পেল ক্লোথিং। এই দোকানের বিক্রেতা আমজাদ হোসেন জানান, টি-শার্টসহ বিভিন্ন ধরনের গেঞ্জি ১০০ থেকে ৫০০ টাকায় আমরা বিক্রি করি। লুঙ্গির দোকানে কথা বলে জানা গেল, দেড়শ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকায় লুঙ্গি পাওয়া যায়।
রাজধানী ঢাকার ব্যস্ততম এই বঙ্গবাজার মার্কেটটি গুলিস্তানের পাশেই ফুলবাড়িয়ায় অবস্থিত। মার্কেটটির পূর্বপাশে পুলিশ হেডকোয়ার্টার, দক্ষিণপাশে ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ড, পশ্চিমপাশে সড়ক পেরিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা।
আরএমএম/জেডএ/জেআইএম