একরামসহ সব হত্যার নির্বাহী তদন্ত হবে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে কক্সবাজারের টেকনাফের কাউন্সিলর একরামুল হকসহ দেশব্যাপী মাদক অভিযানে সব ‘হত্যা’র তদন্ত হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
বুধবার সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের এ কথা জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এর আগে তিনি বাংলাদেশে দেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া স্টিফেন ব্লুম বার্নিকাটের সঙ্গে বৈঠক করেন।
মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের অভিযান শুরুর পর গত কিছুদিন ধরে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মাদক ব্যবসায়ীরা নিহত হচ্ছেন। অভিযানে এ পর্যন্ত শতাধিক মাদক ব্যবসায়ী বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন বলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়।
বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। এ বন্দুকযুদ্ধের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে বলে দাবি করেছে বিএনপি।
কক্সবাজারের ওয়ার্ড কাউন্সিলর একরামুল হক ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হওয়ার ঘটনাটি তুমুল বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। ওই এলাকার আওয়ামী লীগ নেতারা তাকে নিরাপরাধ বলছেন। নাম বিভ্রাটের কারণে ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতা একরামকে হত্যা করা হয়েছে বলে তাদের দাবি।
কক্সবাজারের ওয়ার্ড কাউন্সিলর একরামুল হক ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হওয়ার ঘটনায় কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘শুধু একরাম কেন? (মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানে) যে কয়টি হত্যাকাণ্ড হয়েছে সবগুলোর বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে তদন্ত হবে। সেই তদন্তে কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে তার বিরুদ্ধে বিচার হবে।’
তিনি বলেন, ‘যেখানে বন্দুকযুদ্ধ হয়েছে, সেখানে একজন ম্যাজিস্ট্রেট তদন্ত করে দেখবেন গান ফায়ারটি সঠিক ছিল কিনা। এই দেশে সেই ব্যবস্থা রয়েছে। যদি অন্যায়ভাবে কেউ গুলিবিদ্ধ হয়ে থাকে তাহলে ম্যাজিস্ট্রেটের তদন্ত অনুযায়ী সেই ব্যবস্থাও হবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যে মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে মাদক নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি সেটা সম্পর্কে তিনি (রাষ্ট্রদূত) বলেছেন ঠিকই আছে, তিনিও প্রশংসা করেছেন।’
‘তিনি তার উদ্বেগের কথা বলেছেন যে, আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মানুষ মারা যাচ্ছে, নিহত হচ্ছেন। সে বিষয়ে তিনি কথাবার্তা বলেছেন। আমরা জানিয়েছি, এদেশ থেকে জঙ্গি ও সন্ত্রাস আমরা যেভাবে কন্ট্রোল করেছি এদেশের জনগণকে নিয়ে...আজকে আমাদের প্রধানমন্ত্রী মনে করছেন মাদক যেভাবে বিস্তার লাভ করছে, সেটা যদি আমরা বন্ধ করতে না পারি তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ হারিয়ে যাবে। তিনি সবই স্বীকার করেছেন।’
আসাদু্জ্জামান খান বলেন, ‘তিনি হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছেন, আমরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছি- মাদক নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছি এবং সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। প্রথমে আমাদের গোয়েন্দারা লিস্ট তৈরি করেছে- কারা কারা মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ত, কারা কারা মাদক ব্যবসায়ের সঙ্গে যুক্ত। কারা সহযোগিতা করছেন। আমরা একটি নয়, পাঁচটি সংস্থার মাধ্যমে এই তালিকাটি তৈরি করেছি, তালিকায় যে সব নামগুলো কমন সেই নামগুলো নিয়ে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী কাজ করছে। পাশাপাশি আমাদের এনজিওরা, জনপ্রতিনিধিরা, শিক্ষক-ছাত্র-জনতা, পেশাজীবী সবাই এই যুদ্ধে শরীক হয়েছেন। প্রচার-প্রচারণাও আমরা চালাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘মাদক বন্ধে ভারত আমাদের সহযোগিতা করছে কিন্তু ইয়াবা প্রতিরোধের জন্য মিয়ানমার আমাদের কোনো সহযোগিতা করছে না সেটাও আমরা জানিয়েছি।’
আরও পড়ুন >> এক রাতে ১৫ মাদক ব্যবসায়ী ও এক ডাকাত নিহত
‘সুনির্দিষ্টভাবে বলেছি, কোনো ক্রসফায়ার আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী করে না। কোন হত্যাকাণ্ড নিরাপত্তা বাহিনী করে না। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী কি করছে- লিস্ট নিয়ে, কমন লিস্টে যাদের নাম আছে তাদের বাড়িতে গিয়ে বা তাদের ধরে আইনের আওতায় আনার জন্য খুঁজে বেরাচ্ছে। যারা সারেন্ডার করছে তাদের মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে কিংবা রেগুলার কোর্টের মাধ্যমে শাস্তি ব্যবস্থা করা হচ্ছে, যারা নির্দোষ তাদের ছেড়ে দেয়া হচ্ছে।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘যারা সারেন্ডার করতে অস্বীকার করছে যারা চ্যালেঞ্জ করছে, যারা ফায়ার ওপেন করছে, আত্মরক্ষার্থে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীও গান ফায়ার করছে।’
মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানের পর ইতোমধ্যে প্রায় ১৩ হাজারের বেশি কারাবন্দি হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা অনেকেই জানেন না। শুধু আপনারা দেখছেন নিহত হচ্ছে, এর পাশাপাশি কিন্তু একটা বিরাট সংখ্যক লোক কারান্তরীণ রয়েছেন।’
দেশের কারাগারগুলোর ধারণ ক্ষমতা ৩৫ হাজার হলেও কারাবন্দি রয়েছেন ৮৫ হাজার। বিশাল সংখ্যক কারাবন্দি একটা উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বলেও জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
‘তিনি (মার্কিন রাষ্ট্রদূত) জানতে চেয়েছেন কত মানুষ অভিযুক্ত হয়েছে। আমরা তাকে পুরো পিকচার দিয়েছি। আমরা কি করছি তা জানিয়েছি। তিনি সবকিছু অ্যাপ্রিসিয়েট করেছেন। বলেছেন, মাদকের বিস্তার বন্ধ করতে হবে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যারা নিহত হচ্ছেন তাদের বিষয়ে আরেকটু সতর্ক হওয়া যায় কিনা তিনি (বার্নিকাট) বলেছেন। এই অবৈধ ব্যবসা, অবৈধ অস্ত্র- সেখানে কেউ খালি হাতে গেলে ভালোভাবে ফিরে আসবে না, এটাই স্বাভাবিক। এজন্য আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী তৈরি হয়ে যায়। সেজন্যই বন্দুকযুদ্ধ হয়। হত্যা করার কোন উদ্দেশ্য আমাদের নেই। আমরা তাদের আইনের আওতায় আনার জন্য এসব প্রচেষ্টা চালাচ্ছি।’
মাদক বিরোধী অভিযানে আইনের কোন ব্যত্যয় হচ্ছে না দাবি করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কোন নির্দোষ লোককে আমরা কারান্তরীণ করছি না।’
‘তিনি মোটামুটি আমাদের সঙ্গে কথা বলে যেটা জানতে চেয়েছিলেন সেটা জেনে গেছেন’ বলেন আসাদুজ্জামান খান।
অনেককে আগে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার কথা বলা হচ্ছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি স্পষ্ট করে বলছি, আমরা একজনকেও পিক করিনি। যারা বলেছে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সেগুলোর একটার প্রমাণও পাওয়া যায়নি।’
অভিযান কত দিন চলবে জানতে চাইলে মন্ত্রী আবারও বলেন, ‘এই যুদ্ধ ততদিন পর্যন্ত চলবে যতদিন পর্যন্ত আমরা এগুলো কন্ট্রোলে আনতে না পারব।’
অন্যদিকে বৈঠকের পর বেরিয়ে যাওয়ার সময় মার্কিন রাষ্ট্রদূত সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যা মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধের কার্যকর পন্থা নয়। অভিযানে মৃতের সংখ্যা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন। নিয়ম মেনে সবার বিচার পাওয়ার অধিকার আছে।
আরএমএম/এমএআর/জেএইচ/জেআইএম