ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

ভেজালকারীদের উৎসাহিত করছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ!

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৭:০৬ পিএম, ২৯ মে ২০১৮

জনগণকে নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা প্রদানে সরকারের ক্রমবর্ধমান কার্যক্রম ও গণজাগরণকে ‘প্রশ্নবিদ্ধ করছে’ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের বক্তব্য। ‘তার ওই বক্তব্য খাদ্যে ভেজালকারীদের উৎসাহিত করছে’ বলেও অভিযোগ উঠেছে।

মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে আয়োজিত ‘নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের ভূমিকা : খাদ্য ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের উদ্বিগ্নতা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে খাদ্য ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এমন অভিমত ব্যক্ত করেন। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে এখানে দুটি লিখিত বক্তব্য পাঠ করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান এ বি এম ফারুক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী তা পাঠ করেন।

পরে প্রশ্ন-উত্তর পর্বে অংশ নেন বিসিএসইআর’র খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক পরিচালক ড. এ কে এম ফরমুজুল হক, পবা’র সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির সভাপতি ডা. মোল্লা ওবায়দুল্লাহ বাকী প্রমুখ।

এ বি এম ফারুক বলেন, ‘ক্যালসিয়াম কার্বাইড ও ইথোফেনে রঙিন করা আম জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। অসাধু ব্যবসায়ীরা ফলগুলো প্রাকৃতিকভাবে পাকার আগেই বাজারে নিয়ে আসে বেশি লাভ পাওয়ার আশায়। এগুলো পরিপক্ব হয় না। শুধুমাত্র পাকার মতো রঙিন হয়। এগুলোতে কোনো পুষ্টিমান, স্বাদ ও গন্ধ থাকে না। ভোক্তারা মানসিক, আর্থিক ও পুষ্টিগতভাবে প্রতারিত হন।’

‘পুষ্টি-স্বাদ-গন্ধ পেতে হলে ফলকে স্বাভাবিক নিয়মে পরিপক্ব হতে দিতে হবে। স্বাভাবিকভাবে পাকার সময় ফলের ভেতরে নানা ধরনের অসংখ্য প্রাণরাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে। স্তরে স্তরে এর পরিবর্তন হয়। প্রথম পর্যায়ে কোষ বিভাজনের মধ্য দিয়ে ফলটি আকারে ও ওজনে বড় হতে থাকে। ফল পূর্ণতা না পাওয়া পর্যন্ত এ কোষ বিভাজন চলতে থাকে। এক-দুদিনে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় না। এজন্য কয়েক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হয়। ক্যালসিয়াম কার্বাইড ও ইথিফোনে ‘পাকানো’ আম-কলা ও অন্যান্য ফল যে স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর তা দেশে-বিদেশের অনেক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।’

গত ২৩ মে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ আয়োজিত এক কর্মশালায় বিএসএফএ’র চেয়ারম্যান মো. মাহফুজুল হক ‘দায়িত্ব নিয়ে নিশ্চিত করেন যে, কার্বাইড বা ইথোফেন দিয়ে ফল পাকানো স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়। ফরমালিন নিয়ে অতীতে যেসব কর্মকাণ্ড হয়েছে, তার পুরোটাই ভুল।’

‘তার ওই বক্তব্য বিজ্ঞানসম্মত নয়, বিএসএফএ’র সাংগঠনিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং তা অসাধু ব্যবসায়ীদের জনস্বাস্থ্যবিরোধী হীন কাজে উৎসাহ প্রদানের শামিল’- বলেন এ বি এম ফারুক।

‘সরকারি যে প্রতিষ্ঠানটির জনস্বাস্থ্যের পক্ষে অবস্থান নেয়ার কথা, তা না করে তারা যখন জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ও জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির লক্ষ্যে বক্তব্য প্রদান করে তখন তা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা বিশ্বাস করি যে, দেশের ভোক্তা অধিকার নিয়ে কর্মরত সংগঠনগুলো নিশ্চয়ই এর জোরাল প্রতিবাদ করবে। এ অবস্থায় কোনো কোনো সরকারি কর্মকর্তা যদি এমন বক্তব্য রাখেন যা অসাধু ব্যবসায়ীদের পক্ষে যায় তখন তা দেশের জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।’

ডা. লেলিন চৌধুরী তার প্রবন্ধে বলেন, ‘নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের ভূমিকা বাংলাদেশে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতের ক্ষেত্রে এক মহাবিপর্যয়ের অশনি সংকেত। ইথোফেন-কার্বাইড দ্বারা অপরিপক্ব আম পাকানো দ্বারা ভোক্তার সঙ্গে প্রতারণা করা হয়। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ভোক্তার সঙ্গে প্রতারণার পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে ফল পাকানোয় কার্বাইডের ব্যবহার শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান নিজেই নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ এর ২৩ নম্বর ধারাসহ অন্যান্য ধারা ভঙ্গ করছেন।’

‘কার্বাইড, ইথোফেন ও ফরমালিন বিষয়ে জনসাধারণকে অবৈজ্ঞানিক ও ভুল তথ্য দিয়েছেন। নিরাপদ খাদ্যবিষয়ক উচ্চ আদালতের নির্দেশনা লঙ্ঘন করেছেন। ভুল ও পক্ষপাতদুষ্ট বক্তব্যের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দোষীসাব্যস্ত করেছেন।’

‘চেয়ারম্যানের ওই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমরা মনে করি মো. মাহফুজুল হক বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন। অবিলম্বে তাকে অপসারণ করা হোক। আইনভঙ্গের জন্য তাকে আইনের আওতায় আনা হোক। কী কারণে তিনি নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ বিরোধী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন সেটা খুঁজে বের করার জন্য একটি ব্যাপক তদন্ত করা হোক’- বলেও যুক্ত করেন লেলিন চৌধুরী।

এএস/এমএআর/এমএস

আরও পড়ুন