মুগদা-মান্ডায় বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট তীব্র
রাজধানীতে পানির সঙ্কট নতুন কিছু নয়। কিন্তু ময়লা ও দুর্গন্ধজনিত তীব্র পানির সঙ্কটে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে নগরীর মুগদাপাড়া ও মান্ডা এলাকার মানুষ। দিনের বেশিরভাগ সময়েই থাকে না পানি। নিয়মিত বিল পরিশোধ করেও ওয়াসার পাম্পস্টেশন থেকে পানি কিনতে বাধ্য হচ্ছেন এলাকাবাসী।
সরেজমিনে রাজধানীর মুগদাপাড়া ও মান্ডা এলাকায় দেখা গেছে, এলাকার বেশিরভাগ পাড়া মহল্লায় পানির সমস্যা রয়েছে। কয়েকটি এলাকায় পানির সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করেছে। এর মধ্যে মান্ডা এলাকার এক নম্বর গলি, পিয়ার আলীর গলি, ঝিলপাড় রোডের শেষ মাথা, মুগদার ব্যাংক কোলনি, ২৮ নম্বর গলি, উত্তর ও দক্ষিণ মুগদাসহ বেশি কিছু এলাকায় পানির সমস্যা রয়েছে।
পানি সঙ্কটে মান্ডা ও মুগদাপাড়ার প্রায় ৬ লক্ষাধিক মানুষের দুর্ভোগ এখন চরমে। গোসল, রান্ন-বান্নাসহ গৃহস্থালী কাজ করতে হচ্ছে সংগ্রহ করা ও কেনা পানির ওপর নির্ভর করে। এসব এলাকায় সবসময় পানি থাকে না। আবার কিছু এলাকায় পানি আছে তাও ময়লা ও দুর্গন্ধ যা ব্যবহারের উপযোগী নয়।
এ কারণে সারাদিনই ওয়াসার পাম্পস্টেশনে পানির জন্য দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। কেউ সরাসরি ওয়াসার লাইনের পানি নিচ্ছেন। কেউবা আবার পাম্পস্টেশন থেকে বিশুদ্ধ পানি কিনে নিচ্ছেন। যাদের পাম্পে দাঁড়ানোর সময় নেই, তারা নগদ টাকা দিয়ে ভ্যান থেকে কিনে নেয়। এই ভ্যানওলারাই পাম্প থেকে পানি নিয়ে গ্যালন দরে পৌঁছে দেন বাসায় বাসায়।
এলাকাবাসী জানান, সারা বছরই এখানে পানির সমস্যা। দিনের বেশিরভাগ সময়েই অনেক এলাকায় পানি থাকে না, পানির জন্য হাহাকার। কিছু এলাকায় পানি আছে ময়লা ও দুর্গন্ধ ব্যবহারের উপযোগী নয়। নিয়মিত পানির বিল পরিশোধ করার পরও পানি পাওয়া যায় না। একাধিকবার ওয়াসা মৌখিক ও লিখিত চিঠি দেয়ার পরও সমস্যা সমাধান হচ্ছে না।
মুগদায় পাম্পস্টেশনে পানির জন্য দাঁড়িয়ে আছেন ময়মনা বেগম। ২৮ নম্বর গলির এ বাসিন্দা জানান, দিনের বেশিরভাগ সময় পনি থাকে না। যখন পানি আসে তাও ময়লা, দুর্গন্ধ খাওয়া যায় না। খুব কষ্টে আছি। পাম্পে এসে লাইন ধরে পানি নিতে হয়। সংসারে তো আর কম পানি লাগে না। এভাবে কতক্ষণ আর পানি টানা যায়।
মান্ডা এক নম্বর গলির মোহাম্মদ আলী বলেন, এলাকাবাসী খুব কষ্টে আছে। আমরা পানি পাই না। নিয়মিত বিল পরিশোধ করে যদি পানি না পাই কেমন লাগে। বাঁশপট্টির সামনে দুইটা পাম্প করেছিল কয়েক বছর আগে। ঠিকমত পানি উঠে না। কাজে আসেনি। মেইন রোডের এলাকার পাম্প আছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক দুর্বল। যা চাহিদামতো পানি এই দুর্বল পাম্প দিয়ে উঠে না। অনেকবার বলার পর এখন ব্রিজের সামনে একটি পাম্প হচ্ছে। এটি হলে যদি সমস্যা কমে।
এদিকে দক্ষিণ মুগদার বাসিন্দা সবুজ মিয়া বলেন, পানিতো লাইনে ঠিকমত আসে না। যাও আছে ময়লা পানি। এটি এখন বড় সমস্যা। পানি খাওয়া যায় না। রান্নাতেও ব্যবহার করা যায় না। নিয়মিত পানির বিল পরিশোধ করার পরও পানির সমস্যায় ভুগছি। পাম্প থেকে ভ্যান দিয়ে পানি আনতে হচ্ছে। ব্যাপক সমস্যায় আছি। এর আগে কয়েকবার এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে পানির সমস্যা সমাধানে ঢাকা ওয়াসায় জানানো হয়েছে। চিঠি দেয়া হয়েছে। সমস্যা সমাধান হচ্ছে না।
মুগদা ব্যাংক কলোনীর বাসিন্দা মো. সজিব খান বলেন, ব্যাংক কলোনীর শেষ মাথার বাড়িগুলোতে সব সময় পানি সঙ্কট থাকে। রাতে জেগে টানা মোটর দিয়ে পানি সংগ্রহ করা এটি প্রতিদিনের রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এজন্য বাড়তি বিদ্যুৎ বিলও পরিশোধ করতে হচ্ছে। কি আর করা পানি ছাড়াতো আর চলে না। আমাদের দুর্ভোগ দেখবে কে। ওয়াসার লোকজন বড় বড় কথা বলেন। অভিযোগ দিতে বলেন। এলাকার লোকজন অনেক অভিযোগ করেছে কোনো কাজ হয়েছে? হয়নি।
ঢাকাবাসীর জন্য সুপেয় পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশনের দায়িত্বে থাকা ওয়াসার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, মান্ডা এলাকায় পানির সঙ্কট তেমন একটা নেই। তবে মুগদা এলাকায় স্বল্প পরিমাণে সমস্যা থাকতে পারে। এ সমস্যা দ্রুত দূর হয়ে যাবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এই এলাকার পাম্প আছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক দুর্বল। যা চাহিদামতো পানি এই দুর্বল পাম্প দিয়ে উঠে না।
এদিকে রমজানে পানি সরবরাহের গৃহীত ব্যবস্থাসমূহ অবহিত করার লক্ষ্যে সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলনে ওয়াসার ব্যবস্থাপক পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান বলেছিলেন, রমজান মাসে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ থাকবে। এছাড়া রমজানে পানির গাড়ি, ট্রলি, প্লাস্টিক ট্যাংক ও ভ্যানগাড়িতেও বিশেষ ব্যবস্থায় ইফতারের সময় জনসমাগম স্থানে পানি সরবারহ করা হবে।
রমজানে প্রতিটি জোনে রাতে পানির গাড়ি থাকবে যেন গ্রাহক ও মসজিদে চাহিদা অনুযায়ী পানি পায়। এছাড়া ওয়াসার পানির জন্য গ্রাহকদের কোনো অভিযোগ থাকলে ১৬১৬২ সেন্টারে কল করে অভিযোগ জানাতে পারবেন নাগরিকরা।
এসআই/এমআরএম/আরআইপি