নতুন ওয়ার্ডগুলোতে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগবে কবে?
দৈনন্দিন ও অন্যান্য সেবামূলক কার্যক্রম নিশ্চিতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সম্প্রসারিত অংশে নবগঠিত ৩৬টি ওয়ার্ডকে দশটি অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়েছে।
২০১৬ সালের ৯ মে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটিতে (নিকার) ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে আটটি করে ইউনিয়ন যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়।
গত বছরের ৩০ জুলাই ডিএসসিসির শ্যামপুর, দনিয়া, মাতুয়াইল, সারুলিয়া, ডেমরা, মান্ডা, দক্ষিণগাঁও ও নাসিরাবাদ ইউনিয়নকে ৫৮, ৫৯, ৬০, ৬১, ৬২, ৬৩, ৬৪, ৬৫, ৬৬, ৬৭, ৬৮, ৬৯, ৭০, ৭১, ৭২, ৭৩, ৭৪ ও ৭৫ নম্বর ওয়ার্ডে বিভক্ত করা হয়।
অপরদিকে ডিএনসিসি অন্তর্ভুক্ত বাড্ডা, ভাটারা, সাতারকুল, বেরাঈদ, ডুমনি, উত্তরখান, দক্ষিণখান ও হরিরামপুর ইউনিয়নকে ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১, ৪২, ৪৩, ৪৪, ৪৫, ৪৬, ৪৭, ৪৮, ৪৯, ৫০, ৫১, ৫২, ৫৩ ও ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডে বিভক্ত করা হয়।
তবে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে যুক্ত হওয়া নতুন অধিকাংশ ওয়ার্ডে এখনও সিটি কর্পোরেশনের সেবার-উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। তবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে যুক্ত হওয়া কিছু কিছু ওয়ার্ডে সম্প্রতি উন্নয়ন কাজ কিছুটা হলেও শুরু হয়েছে।
অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে যুক্ত হওয়া নতুন ওয়ার্ডগুলোতে কেবল উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে দুই সিটির এসব ওয়ার্ডে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক উন্নয়নের ছোঁয়া পেতে আরও সময় লাগবে।
বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) সম্প্রসারিত এলাকার বর্তমান জনপ্রতিনিধিদের এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নবগঠিত প্রতিটি ওয়ার্ডে খেলার মাঠ, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ঈদগাহ, শিশু পার্ক, কমপক্ষে তিনটি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ভবন বা সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস), তিনটি পাবলিক টয়লেট এবং ওয়াসার পাম্প-বিদ্যুতের উপকেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এজন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে ২৩ দশমিক এক একর জায়গার প্রয়োজন হবে। এছাড়া নবগঠিত পাঁচটি অঞ্চলের প্রতিটির জন্য একটি আঞ্চলিক কার্যালয়, কমপক্ষে একটি কমিউনিটি সেন্টার, একটি আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সেন্টার, একটি কেন্দ্রীয় এসটিএস, একটি শিশু পার্ক, একটি কবরস্থান, একটি শ্মশান ঘাট, একটি মার্কেট, কমপক্ষে একটি ঈদগাহ ও একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রতিটি অঞ্চলের জন্য ২৫ দশমিক ৪০ একর জায়গা লাগবে। এছাড়া সম্প্রসারিত এলাকাগুলোর জন্য একটি স্থায়ী পশুর হাট ও একটি ল্যান্ডফিল স্থাপন করা হবে। এজন্য মোট ৬০ একর জায়গার প্রয়োজন হবে। সম্প্রসারিত এলাকায় বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের জন্য সর্বমোট ৬০২ দশমিক ৮০ একর জায়গা লাগবে।
এ বিষয়ে প্যানেল মেয়র ওসমান গনি বলেন, সম্প্রসারিত এলাকা সুপরিকল্পিতভাবে আধুনিক নগরীতে রূপান্তর করা হবে। এসব এলাকার জনসাধারণ যেন সব ধরনের নাগরিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারেন সে লক্ষ্যে সরকার শুরু থেকেই সচেতন।
ডিএনসিসি সূত্রে জানা গেছে, সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক প্রাপ্ত সেবাসমূহ পেতে এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ঈদগাহ, শিশু পার্ক, এসটিএস,পাবলিক টয়লেট ওয়াসার পাম্প-বিদ্যুতের উপকেন্দ্র স্থাপন, কবরস্থান, কমিউনিটি সেন্টারসহ নানা স্থাপনা নির্মাণের জন্য জায়গা খুঁজছেন তারা। জায়গা পেলে এসবের কাজ শুরু হবে। তবে নতুন ওয়ার্ডগুলোতে পূর্ণাঙ্গ এসব সেবা পেতে আরও সময় লাগবে।
অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) এক কর্মকর্তা জানান, নতুন ১৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১১টিতে প্রাথমিকভাবে উন্নয়ন কাজ শুরু হয়েছে। সাতটি ওয়ার্ডেও পর্যায়ক্রমে উন্নয়ন কাজ শুরু হবে। মাস্টারপ্ল্যানের মাধ্যমে নতুন যুক্ত হওয়া ওয়ার্ডগুলোতে বাসযোগ্য নগরীর রূপ দিতে শিগগিরই কাজ শুরু হবে। তবে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা ইউনিয়নগুলোকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে যুক্ত হওয়া মান্ডা এলাকার বাসিন্দা মাইদুল ইসলাম বলেন, এলাকার রাস্তা সংস্কার, জলাবদ্ধতাসহ নানা সমস্যা রয়েছে। এসব কাজের বিষয়ে জনপ্রতিনিধির কাছে গেলে তারা বলেন, এখন সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, সব কাজ তারাই করবে।
‘কিন্তু উন্নয়নের কোনো কাজই তো চোখে পড়ছে না’- যোগ করেন তিনি।
এএস/এমএআর/আরআইপি