ইয়াবার ঢাকা যাত্রায় সঙ্গী রোহিঙ্গা শিশু
কক্সবাজার জেলার উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের শিশুদের টার্গেট করেছে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়িয়ে ঝুঁকি ছাড়া ও অল্প খরচেই ঢাকায় ইয়াবা পৌছানো যাবে-এমন চিন্তা থেকেই রোহিঙ্গা শিশুদের ব্যবহার করা হচ্ছে ইয়াবা বহনে।
রোববার (২৭ মে) রাতে রাজধানীর দক্ষিণখান থানাধীন পূর্ব গাওয়াইর এলাকা হতে ৬ জনকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উত্তর বিভাগ। তাদের মধ্যে শিশুসহ দুই রোহিঙ্গা রয়েছেন। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৩ হাজার ৩৫০ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়।
আটককৃতরা হলেন রোহিঙ্গা মো. সেলিম মোল্যা ও তার ভাতিজা আফছার ওরফে বাবুল (১২), মামুন শেখ, মো. শরিফুল, ফাহিম সরকার ও রাজিব হোসেন।
সোমবার দুপুর ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) দেবদাস ভট্টাচার্য বলেন, ‘আটককৃতদের নেপথ্যে থেকে নিয়ন্ত্রণ করে পলাতক রেজওয়ান। রেজওয়ান উখিয়া কেন্দ্রিক ইয়াবা ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ করতে উখিয়ায় ভাড়া বাসায় উঠেন। রেজওয়ানের অন্যতম সহযোগী মামুন শেখ। মামুন শেখকে পাঠানো হয় ঢাকায়। ঢাকায় থেকে ইয়াবার চালান রিসিভ ও বিক্রির ব্যবস্থা করে মামুন শেখ।
আটক রোহিঙ্গা মো. সেলিম মোল্যা ও তার ভাতিজা আফছার ওরফে বাবুল টেম্পো ড্রাইভার। লেদা ক্যাম্পে যাতায়াত থাকায় সেলিম মোল্যার সাথে রেজওয়ানের প্রথম পরিচয় হয়। টাকার প্রলোভনে সেলিমকে দিয়ে ইয়াবার চালান ঢাকায় পাঠানোর কৌশল নেয় রেজওয়ান। ধরা পড়ার ঝুঁকি এড়াতে শিশু রোহিঙ্গা বাবুলকেও ইয়াবা ব্যবসায় জড়ান তিনি।
জিজ্ঞাসাবাদে সেলিম ও বাবুল জানায়, রেজওয়ান প্রতি সপ্তাহে ৫০ পিস করে ইয়াবা স্কচটেপ দিয়ে পেঁচিয়ে ক্যাপসুল বানিয়ে সেলিম ও বাবুলকে খাইয়ে দেয়। এ রকম ৭০টি করে ক্যাপসুল খায় তারা। ঢাকায় রওনা দেবার পর তারা রাস্তায় কিছু খায় না। ঢাকায় পৌছার পর মিল্ক অব ম্যাগনেসিয়াম জাতীয় ঔষধ সেবন করে পাকস্থলী থেকে পায়ুপথে বের করা হয়। এরপর সেসব ইয়াবা মামুন শেখের মাধ্যমে পৌঁছে যায় ফাহিম, শরীফ ও রাজিবের কাছে।
জিজ্ঞাসাবাদে তারা আরও জানায়, রেজওয়ান প্রতি চালানে সেলিমকে দেয় ১৫ হাজার ও বাবুলকে ১০ হাজার টাকা।
কে এই রেজওয়ান
কক্সবাজারে অবস্থান নিয়ে রেজওয়ান দীর্ঘদিন যাবত উখিয়া থানার অধীন লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ অন্যান্য ক্যাম্পে অবস্থানরত অসহায় ও দরিদ্র রোহিঙ্গাদের টার্গেট করে। অধিক মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে তাদের মাধ্যমে ইয়াবার চালান পাকস্থলীতে করে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে পৌছিয়ে আসছে রেজওয়ান।
রেজওয়ানের বাড়ি পিরোজপুরে। মামুন শেখের বাড়িও একই এলাকায়। সে সুবাদে পরিচয়ের পর মামুন শেখকে ঢাকার ইয়াবা ব্যবসা দেখাশুনার দায়িত্ব দেয় রেজওয়ান।
এক প্রশ্নের জবাবে দেবদাস ভট্টাচার্য বলেন, ‘একটা রোহিঙ্গা শিশু যদি মাসে ৩টি ইয়াবার চালান ঢাকায় পৌঁছিয়ে দিয়ে ৩০-৪০ হাজার টাকা পেয়ে যায়, তবে তা পারিবারিকভাবেও উৎসাহিত করা হতেই পারে। তাছাড়া ইয়াবা ব্যবসায়ীরা নতুন নতুন কৌশলে ইয়াবা পাচার করছে। ডাবে, কুমড়ায়, মোবাইলে করে ইয়াবা পাচারের নজিরের পর এবার নতুন করে সামনে সামনে আসে পাকস্থলীতে করে ইয়াবা পাচার।
জেইউ/এসআর/এমএস