সেই যে অকেজো হলো, একমাসেও চালু হলো না
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ব্যবহৃত এক্স-রে মেশিন গত এক মাসের বেশি সময় ধরে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে অাছে। অকেজো হয়ে পড়ে থাকা মেশিনটির কার্যকরী কোনো সমাধান না হওয়ায় এক্স-রে রিপোর্ট পেতে বিপাকে পড়ছেন রোগীরা। সেই সঙ্গে ব্যাহত হচ্ছে জরুরি চিকিৎসা সেবাও।
ঢামেক হাসপাতালের এ মেশিন নষ্ট থাকায় অন্যত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে গিয়ে বাড়তি টাকা গুণছেন রোগীর স্বজনরা। ফলে অল্প খরচে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে না পেরে হাসপাতাল সংশ্লিষ্টদের দুষছেন তারা। স্বজনরা অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসার প্রধান মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত এক্স-রে মেশিনটি ব্যবহারের অনুপযোগী, এটা নিঃসন্দেহে হাসপাতালের মান ক্ষুণ্ন করছে। এমনকি এ সমস্যার কারণে ভুক্তভোগীদর মাঝে চাপা ক্ষোভও বিরাজ করছে। সমস্যা সমাধানে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত ২০ এপ্রিল রাত ৮টার দিকে হঠাৎ অকেজো হয়ে পড়ে জরুরি বিভাগের সচল এক্স-রে মেশিনটি। বিষয়টি ওই দিনই রাত ১০টার দিকে হাসপাতাল পরিচালনা সংশিষ্টদেরকে জানানো হয়। তবে দীর্ঘ একমাস পার হয়ে গেলেও সমাধানে কার্যকরী কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। এমনকি কবে নাগাদ এ সমস্যার সমাধান হবে সংশ্লিষ্টদের কেউ তা সুনির্দিষ্টভাবে জানাতে পারেননি।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগে প্রতিদিন প্রায় দুই থেকে পাঁচশতাধিক রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে অাসেন। তাদের বেশির ভাগই দুর্ঘটনা, অাঘাতপ্রাপ্ত কিংবা জটিল রোগে অাক্রান্ত। এসব রোগীদের অধিকাংশের রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রথমেই এক্স-রে রিপোর্টের প্রযোজন হয়। কিন্তুু জরুরি বিভাগের এক্স-রে মেশিন নষ্ট থাকায় রোগীদের এক্স-রে রিপোর্ট পেতে দেরি হচ্ছে। ফলে চিকিৎসেবা পেতেও বিলম্ব হচ্ছে।
এদিকে অভিযোগ উঠেছে এক্স-রে মেশিনটি যান্ত্রিক ক্রুটির কারণে নষ্ট হয়নি। গত ২০ এপ্রিল রাতে মেশিনটির টাচ স্কিনে ঘুষি মেরেছিলেন রেডিওলজি বিভাগের মো. সেলিম রেজা নামের এক টেকনোলজিস্ট। তিনিই মেশিনটি পরিচালনা করতেন। ওই দিন সন্ধ্যার পর রোগীদের চাপ বেশি থাকায় রাগারাগি হয়। এর এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে এক্স-রে মেশিনের টাচ স্ক্রিনের প্যানেলে ঘুষি মেরে ফাটিয়ে ফেলেন।
জানা গেছে, ওই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হতে গত ২২ এপ্রিল হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিনের নির্দেশে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. খন্দকার সাজ্জাদ হোসেনকে প্রধান করে নিউরোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. খলিলুর রহমান, সিনিয়র স্টোর অফিসার ডা. মো. ফেরদৌস আজাদ, জরুরি বিভাগের অাবাসিক সার্জন (আরএস) ডা. মো. আলাউদ্দিনকে রাখা হয়। কমিটিকে বিষয়টি তদন্ত করে সাতদিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।
সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা থাকলেও সেটি জমা দেয়া হয় প্রায় একমাস পর। এছাড়া তদন্ত প্রতিবেদনে কাউকে সুনির্দিষ্টভাবে কাউকে দোষী সাবস্ত না করে ওইদিন দায়িত্বরত দু’জনকে শাস্তি প্রদানের সুপারিশ করা হয় এবং ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সে বিষয়ে তাদেরকে সতর্ক করতে বলা হয়।
এদিকে মেশিনতে কী ধরনের সমস্যা হয়েছে তা জানার জন্য তত্ত্বাবধানকারী প্রতিষ্ঠান মেডিটেলের পক্ষ থেকে পরীক্ষা করা হয়েছে মেশিনটি। ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মেশিনের স্কিনে ভারী কোনো কিছু দিয়ে অাঘাত কার হয়েছে। যা পরিবর্তন করতে প্রায় ৬ লাখ টাকার মত ব্যয় হবে।
ওই ঘটনায় অভিযুক্ত টেকনোলজিস্ট সেলিম জানান, তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ অানা হয়েছে তা সঠিক নয়। তার দাবি, দীর্ঘদিন ধরে কাজ করতে করতে মেশিনটি টাচ কাজ করতো কম। টাচ প্যানেলে জোরে জোরে চাপ দিতে হতো বিধায় স্কিন ফেটে গেছে। মেশিনে ঘুষি কিংবা ভারী বস্তু দ্বারা অাঘাত করা হয়নি।
হাসপাতালের উপ-পরিচালক ও তদন্ত কমিটির প্রধান ডা. খন্দকার সাজ্জাদ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে অামরা প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। তবে উপযুক্ত প্রমাণ না থাকায় কাউকে সুনির্দিষ্টভাবে দোষী সাবস্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে সেদিন যে দু’জন দায়িত্বে ছিল তাদেরকে দোষী হিসেবে শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে।
মেশিনটি মেরামতের বিষয়ে তিনি বলেন, মেশিনটি দ্রুত মেরামতের জন্য ডিজির (স্বাস্থ্য অধিদফতর) বরাবর অাবেদন করা হয়েছে। অাশা করছি সেখান থেকে অনুমতি পেলেই দ্রুত ব্যবহার অনুপযোগী করা হবে।
এসএইচ/আরএস/আরআইপি