পুলিশ আত্মরক্ষার্থে আক্রমণ করছে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযানের সময় পুলিশের উপর আক্রমণের পর পুলিশ আত্মরক্ষার্থে পাল্টা আক্রমণ করায় মাদক ব্যবসায়ী নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের অভিযান শুরুর পর গত কয়েকদিন ধরে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মাদক ব্যবসায়ীরা নিহত হচ্ছেন। সোমবার রাত থেকে আজ ভোর পর্যন্ত র্যাব ও পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ কুমিল্লায় ২, নীলফামারীতে ২, চট্টগ্রামে ১, নেত্রকোনায় ১, দিনাজপুরে ১, নারায়ণগঞ্জে ১, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১ ও চুয়াডাঙ্গায় ১ জন নিহত হয়েছেন। নিহতরা সবাই মাদক ব্যবসায়ী বলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
এর আগের দিনও ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত ৯ জনকেও মাদক ব্যবসায়ী বলে দাবি করেছিল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। আবার এ বন্দুকযুদ্ধের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে বলে জানিয়েছে বিএনপি। এই প্রেক্ষাপটে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
মাদক অভিযানে ক্রসফায়ার হচ্ছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কোনো ক্রসফায়ার হয়নি। সম্প্রতি মাদক বেশ বিস্তৃতি লাভ করেছে। বিশেষ করে ইয়াবা নামের এক মাদক, এটা আমাদের দেশে তৈরি হয় না। এটা আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে বিভিন্ন উপায়ে আমাদের দেশে ঢুকে যায়।’
তিনি বলেন, ‘ইয়াবা নামক এই মাদক আমরা কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছিলাম না। মাদক নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা সব ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে কথাবার্তা হচ্ছে। বন্ধুপ্রতীম দেশ ভারত আমাদের সহযোগিতা করছে, মিয়ানমারও বলে যাচ্ছে কিন্তু কার্যকর সহযোগিতা তারা করছে না। সেজন্যই ইয়াবার বিস্তৃতি এই রকমভাবে ঘটেছে।’
‘ইয়াবা সেবন করতে গিয়ে মেয়ে তার বাবা-মাকে হত্যা করেছে। এর বিস্তৃতি এমনই হয়েছিল, আমাদের অনেক অভিভাবক নিরবে-নিভৃতে ছেলের জন্য কাঁদছিলেন। এমন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছি। আমরা ২০২১ কিংবা ২০৪১ এর যে স্বপ্ন দেখছি, যদি মাদককে এই মুহূর্তে কন্ট্রোল না করতে পারি তাহলে আমাদের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে। আমরা সেই জায়গাটিতে যেতে পারব না।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যখনই হাই-প্রোফাইল মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতে গেছেন, তারা (মাদক ব্যবসায়ী) হয় পালিয়েছেন বা যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছেন। এই যুদ্ধে যখন লিপ্ত হয়েছে...পুলিশের উপর অ্যাটাক (আক্রমণ) করলে কাউন্টার অ্যাটাক করার আইন আমাদের দেশে আত্মরক্ষার্থে রয়েছে। কয়েক দিনে কয়েকটি এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা তথ্যভিত্তিক প্রমাণভিত্তিক কাজ করছি। পরিষ্কার কথা কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। ম্যাসেজ ইজ ভেরি ক্লিয়ার- আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্পষ্ট নির্দেশনা। এই ব্যাপারে জিরো টলারেন্স- সে সংসদ সদস্য হোক, সরকারি কর্মকর্তা হোক, নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তা হোক যেই হোক, ইভেন সাংবাদিক হোক, কাউকে আমরা ছাড় দেব না।’
‘আমরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছি, এছাড়া এনজিও এবং অন্যান্য যতভাবে আছে সমাজকে এগিয়ে আসার জন্য উদ্ধুদ্ধ করছি। সবাইকে মাদকের বিরুদ্ধে স্বোচ্ছার হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। চলুন আমরা মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করি। আমরা সেই জায়গাটিতে এসেছি। জিরো টলারেন্স নীতিতে আমরা এসেছি।’
মাদক যারা নিয়ন্ত্রণ করেন তারা অত্যন্ত প্রভাবশালী ও শক্তিশালী- মন্তব্য করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র থেকে আরম্ভ করে অবৈধ অস্ত্র সবই তাদের কাছে রয়েছে। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী যখনই তৈরি হয়ে গিয়েছেন তখনই তাদের উপর অ্যাটাক হয়েছে। অ্যাটাকের ফলশ্রুতিতে এই কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে।’
‘যারা হঠাৎ করে আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন করেন কিংবা গুলিবর্ষণ করার প্রচেষ্টা নেন, তারাই আহত কিংবা নিহত হচ্ছেন। যাদের ধরে ফেলছি তাদের মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে বিচার হচ্ছে।’
আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘আমরা কারো বিরুদ্ধে বন্দুকযুদ্ধে যাচ্ছি না। যারা ফায়ার ওপেন করে নিরাপত্তা বাহিনী তাদের বিরুদ্ধেই অ্যাকশন নেয়।’
যারা নিহত হয়েছেন তারা আক্রমণ করার পর পুলিশের কাউন্টার অ্যাটাকে মারা গেছে, বিষয়টি কী তাই- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘অবশ্যই, তাই হয়েছে।’
এই মুহূর্তে ২০০০ হাজারের বেশি মাদক বাহক ও ছোট ছোট মাদক ব্যবসায়ী আটক রয়েছেন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘মোবাইল কোর্টের তাৎক্ষণিক বিচারের মাধ্যমে তাদের সাত দিন থেকে ৬ মাসের জেল দেয়া হয়েছে।’
বন্দুকযুদ্ধে যারা মারা যাচ্ছেন তাদের মাদক বাহক বলা হচ্ছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘কীভাবে জানলেন বাহক। আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে, সব ধরনের গোয়েন্দা তথ্যভিত্তিক অভিযানগুলো পরিচালিত হচ্ছে।’
মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের রাজারবাগে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী ব্যবস্থা কী হবে- জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এক্ষেত্রে ডিপার্টমেন্টাল ব্যবস্থা হবে। কারণ সে ওয়াদা করে এই পেশায় আসছে। পুলিশ প্রধান যদি মনে করেন তাদের আইনের আশ্রয়ে দেয়া উচিত, কোর্টে নেয়া উচিত, তাহলে তিনি তা করবেন। প্রয়োজন হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেবেন।’
আরএমএম/এনএফ/জেআইএম/এমএস