শেষ বিকেলে তীব্র যানজটে নাকাল নগরবাসী
* শেষ বিকেলের এই যানজট নিরসনে ডিএমপির ১৪ পরামর্শ
* একটু সচেতনতাই বদলে দিতে পারে যানজটের চিত্র : ডিএমপি
রাজধানীর আজিমপুরের বাসিন্দা আতাহার হোসেন মধ্যবাড্ডায় এক আত্মীয়ের বাসায় ইফতার করতে সোমবার বিকেল ৪টায় বাসা থেকে বের হন। অন্যান্য সময় মোটরসাইকেলযোগে সর্বোচ্চ ৪৫ থেকে ৫০ মিনিটে পৌঁছতে পারলেও আজ ওই বাসায় পৌঁছতে তার দুই ঘণ্টারও বেশি সময় লাগে।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, মগবাজার থেকে যানজট পেরিয়ে হাতিরঝিলে পৌঁছে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছিলেন। কিন্তু হাতিরঝিল থেকে কিছুটা ফাঁকা রাস্তা পেরিয়ে গেলেও তেজগাঁওয়ের সামনে এসে তীব্র যানজটের কবলে পড়ি। সামনে তাকিয়ে দেখি শত শত যানবাহন স্থির দাঁড়িয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর পর পিঁপড়ার গতিতে গাড়ি এগোচ্ছে। কয়েকজন বাসচালক বলাবলি করছিলেন, গুলশান-১ নম্বর পর্যন্ত যানজট লেগে আছে।
আতাহার হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঢাকা শহর চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে।
শুধু আতাহার হোসেন নন, সোমবার শেষ বিকেলে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে প্রচণ্ড যানজটে নাকাল হন নগরবাসী। আজ নিয়ে মাত্র চার রোজা শেষ হয়েছে। সপ্তাহ না পেরুতেই নগরজুড়ে যানজট নগরবাসীর মনে রীতিমতো ভীতির উদ্রেক হয়েছে। কারণ এখনও বেশিরভাগ নগরবাসী ঈদের কেনাকাটা করতে শপিংমলে যাচ্ছেন না। মাস শেষে বেতন পাওয়া মাত্রই বিশেষ করে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিবার-পরিজনের ঢল নামবে। তখন রাস্তাঘাটে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হবে ভেবে অনেকে শিউরে ওঠছেন।
শেষ বিকেলে যানজটের কারণ অনুসন্ধানে জানা গেছে, রমজান মাস উপলক্ষে বর্তমানে সরকারি অফিসে কর্মঘণ্টা সকাল ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত। ফলে অফিস ছুটির পরপরই হাজার হাজার মানুষ বাড়ি ফেরার তাগিদে ছোটাছুটি শুরু করে। বাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল ও রিকশা একযোগে রাস্তায় নামায় মারাত্মক যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
এ ছাড়া গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে আজ সকাল ৯টা পর্যন্ত রাজধানীতে ৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। বৃষ্টিপাতের ফলে রাজধানীর উত্তরা ও মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকার রাস্তায় জলাবদ্ধতায় যানজটের অন্যতম কারণ বলে জানা গেছে।
এদিকে যানজট নিরসন করতে ট্রাফিক পুলিশকে রীতিমতো হাঁপিয়ে উঠতে দেখা গেছে। এ ব্যাপারে নগরবাসীর উদ্দেশ্যে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান বলেন, আপনার একটু সচেতনতাই বদলে দিতে পারে ঢাকা শহরের যানজটের চিত্র। আপনি বাসায় গিয়ে পরিবারের সঙ্গে ইফতার করতে চান। ঠিক অন্যজনও তার পরিবারের সঙ্গে ইফতার করবেন। এটা মনে রেখে রাস্তায় চলাচল করুন। আপনার নিরাপদ রাস্তা চলাচল নিশ্চিতকল্পে ক্লান্তহীনভাবে কাজ করছে পুলিশ।
এ জন্য সোমবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে নগরবাসীকে ১৪টি পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
তা হলো-
১. ইফতারের আগে বাড়ি ফিরতে হবে এমন মনোভাব নিয়ে উল্টো পথে গাড়ি চালানো হতে বিরত থাকুন।
২. ট্রাফিক সিগন্যাল মেনে গাড়ি চালান, সিগন্যাল অমান্য করে গাড়ি চালানোর চেষ্টা করলে সৃষ্টি হবে অসহনীয় যানজট।
৩. কোনো অবস্থায় আপনি যানজটের কারণ হবেন না এটা মনে রেখে গাড়ি চালাবেন।
৪. রমজানে সারাদিন রোজা রেখে সবাই ক্লান্ত থাকে, সেক্ষেত্রে অযথা গাড়ির হর্ন বাজাবেন না। হাইড্রলিক হর্ন ও অননুমোদিত হর্ন ব্যবহার পরিহার করুন। এটা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।
৫. তাড়াহুড়া করে গাড়ি না চালিয়ে নিয়ম মেনে নির্ধারিত গতিতে গাড়ি চালান।
৬. রাস্তার পাশে যেখানে-সেখানে গাড়ি রেখে রাস্তা সংকীর্ণ করে গাড়ি চলাচলের স্বাভাবিক গতি রোধ করে যানজট সৃষ্টি থেকে বিরত থাকুন।
৭. মার্কেট ও শপিংমলের সামনে গাড়ি পার্কিং করা থেকে বিরত থাকুন।
৮. লক্কর-ঝক্কর ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় নামাবেন না। এতে করে রাস্তায় গাড়ি নষ্ট হয়ে যান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে, ফলে যানজটের সৃষ্টি হয়।
৯. নির্ধারিত স্থান ব্যতীত রাস্তায় যেখানে-সেখানে যাত্রী উঠানামা করবেন না।
১০. সরকারি সিদ্ধান্ত ও মোটরযান আইন মেনে গাড়ি চালান।
১১. গাড়ির চালকেরা আরও বেশি যাত্রীর আশায় রাস্তায় অযথা গাড়ি দাঁড় করিয়ে যানজট সৃষ্টি করবেন না।
১২. রাস্তা পারাপারে ফুটওভার ব্রিজ, আন্ডারপাস ও জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার করুন। যত্রতত্র রাস্তা পারাপারে গাড়ি চলার স্বাভাবিক গতি বাধাগ্রস্ত হয়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে পথচারীর জীবনের হুমকিও রয়েছে।
১৩. ভিআইপি ও অতি ব্যস্ত সড়কে রিকশা, ভ্যান, ঠেলাগাড়ির মতো স্বল্প গতির বাহন চালানো হতে বিরত থাকুন।
১৪. রাস্তা ও ফুটপাতে কেউ দোকানপাট বসাবেন না এবং বসাতে নিরুৎসাহিত করুন।
এমইউ/জেডএ/এমএস