আবারো বিদেশিদের দখলে যাচ্ছে বাংলাদেশ বিমান
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের শীর্ষপদে আবারো পাঁচ বিদেশিকে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে আট পরিচালকের পদের বিলুপ্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। সুত্র জানায়, এসব পদের বিপরীতে পরিবর্তন আনা হচ্ছে অর্গানোগ্রামেও।
বাংলাদেশ বিমান সুত্রে জানা গেছে, নতুন প্রশাসন, ফাইন্যান্স, কমার্শিয়াল, অপারেশন ও কাস্টমার সার্ভিস এই ৫টি বিভাগের প্রধান হিসেবে ৫ বিদেশি নাগরিক যোগদান করবেন।
এদিকে বিদেশি নাগরিকদের যোগদান নিয়ে দেশীয় বিমান কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে ক্রমেই অসন্তোষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিমান কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অভিযোগ করে বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ বিমানের আটটি পরিচালক পদে বাংলাদেশি কর্মকর্তারা কৃতিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
কিন্তু বিমানকে লাভ জনক করার অজুহাতে ২০১৩ সালে সর্বোচ্চ বেতনে যুক্তরাজ্যের নাগরিক কেভিন স্টিলকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। দায়িত্ব নিয়েই বিমানকে লাভজনক করার ঘোষণা দেন কেভিন। কিন্তু এক বছরের মাথায় বিমানকে আরো লোকসানে ফেলে দিয়ে তিনি চলে যান।
এরপর পরিচালনা পর্ষদের এক সদস্যের ইচ্ছায় আরেক ব্রিটিশ নাগরিক ও কেভিনের বন্ধু কাইল হেউডকে এমডি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি এর আগে পূর্ব আফ্রিকার খুবই ছোট দুটি বিমান সংস্থায় স্বল্প সময়ের জন্যে এমডি হিসেবে কাজ করেছেন। কোথাও কোনো বিমান সংস্থাকে লাভের মুখ দেখাতে পারেনি তিনি।
কাইল হেউডকে এমডি হিসেবে কাজে যোগদান করেই বিমানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সরিয়ে বিদেশিদের নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেন।
ইতোমধ্যে চিফ অব ফাইন্যান্স হিসেবে বিনোদ সোড নামে এক ভারতীয় নাগরিককে ৬ লাখ টাকা বেতনে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আগামী ২ আগস্ট কাজে যোগদানের কথা রয়েছে তার।
অথচ সম পদমর্যাদার একজন বাংলাদেশি পরিচালক প্রতি মাসে সর্বসাকুল্যে বেতন-ভাতা পেতেন ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা। এদিকে অন্য ৪টি বিভাগের প্রধান হিসেবে বিদেশি নাগরিক নিয়োগের প্রক্রিয়াও এখন চুড়ান্ত পর্যায়ে।
বিমান সুত্র আরো জানায়,বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দীর্ঘদিন যাবৎ কর্মরত এক পরিচালককে সম্প্রতি ডেকে পদত্যাগ করতে বলেন। অন্যথায় তাকে এক ধাপ নিচে জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালনের কথা বলা হয়। পরিচালক পদে কর্মরত বিমানের অপর সাত কর্মকর্তাও চাকরি হারানোর আতঙ্কে ভুগছেন বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে বিমানের সাবেক বৈমানিক নাসিমুল হক জাগো নিউজকে বলেন, অদক্ষ ব্যবস্থাপনা, সঠিক নেতৃত্বের অভাব, পরিকল্পনার অভাব ও দুর্নীতির কারণেই ডানা মেলে উড়তে পারছে না বাংলাদেশ বিমান। ধারাবাহিক আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বিমানকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এনেছে বলেও জানান তিনি।
সূত্র জানায়, একদিকে বিমানকে লাভজনক করার জন্য এর এমডি পদে কাইল হেউডকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে অন্যদিকে লোকসানের অজুহাত দেখিয়ে গত এপ্রিল ঢাকা-রোম-ঢাকা রুটটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। প্রায় বছর খানেক আগে সাময়িকভাবে বন্ধ হওয়া ঢাকা-দিল্লি-ঢাকা এবং ঢাকা-হংকং-ঢাকা রুটে বিমানের ফ্লাইট চলাচল এখন পর্যন্ত চালু করা হয়নি।
বাংলাদেশ বিমান সুত্রে জানা গেছে, নতুন কোনো ন রুট চালু করারও কোনো পরিকল্পনা আপাতত কর্তৃপক্ষের নেই। তাছাড়া গত তিন মাসে ৩২ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে বাংলাদেশ বিমান।
আরএম/এসকেডি/এমএস