অভিজাত ইফতারের নির্ভরতা বেইলি রোড
রাজধানীর দুই স্থান ইফতারের জন্য বিখ্যাত। একটি পুরান ঢাকা, অন্যটি বেইলি রোড। তবে মান সম্মত ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশের ইফতার মানেই বেইলি রোড। তাই অভিজাত শ্রেণি থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য সচেতন মধ্যবিত্তরাও ইফতার নিতে ছুটে আসেন বেইলি রোডে।
শনিরার রমজানের দ্বিতীয় দিনে বেইলি রোডের সব দোকানেই দেখা যায় মানুষের জটলা। দাম একটু বেশি হলেও এখানের ইফতারকে স্বাস্থ্যকর মনে করেন ক্রেতারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিকেল ৩টা থেকে এ রোডের প্রতিটি দোকানেই ইফতারি বেচাকেনা শুরু হয়েছে। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের উত্তর পাশে অবস্থিত প্রসিদ্ধ ফখরুদ্দিন রেস্টুরেন্টসহ নবাবি ভোজ, সাউয়াজদি রেস্টুরেন্ট, ঐতিহ্যবাহী পিঠাঘর, থার্টি থ্রি রেস্টুরেন্ট, মিস্টির দোকান রসসহ সব দোকানেই ইফতারের পসরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নাটকপাড়া হিসেবে সুপরিচিত বেইলি রোড ভোজন রসিকদের জন্যও প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। পাশাপাশি পোশাকের জন্যও এ এলাকা আলাদাভাবে পরিচিতি পেয়েছে। এ জন্য অনেকে পোশাক কিনতে এসেও এখানে খাবারের স্বাদও নেয়।
এখানে রয়েছে অনেক ফাস্টফুডের দোকান। রোজায় এসব ফাস্টফুডের দোকানে রকমারি ইফতার উঠানো হয়, সঙ্গে ফাস্টফুড তো থাকেই। তবে এখানকার ইফতারির দাম চড়া হলেও রয়েছে আভিজাত্যের ছোঁয়া।
জানতে চাইলে ফখরুদ্দিন রেস্টুরেন্টের পরিচালক আবদুল মালেক বলেন, রেস্টুরেন্ট খোলা থাকলেও মূল বেচাকেনা শুরু হয় বিকালে। দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই এখানে আসেন। এজন্য একটু আগেই বিক্রি শুরু হয়।
এখানে পেঁয়াজু থেকে শুরু করে প্রায় ৪০ রকমের ইফতারি বিক্রি হয়। তবে বেশি বিক্রি হয় খাসির মাংসের হালিম। মাঝারি আকারের এক পাত্র হালিমের দাম ৩০০ টাকা ও বড়টার দাম ৫০০ টাকা।
ইফতারি কিনতে আসা হাসিব হাসান বলেন, দাম একটু বেশি হলেও এখানে ইফতার কিনতে আসি। কারণ এখানকার খাবারের মান ভালো ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। আর স্বাদও বেশ।
বেইলি রোডের ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় ইফতারির দাম এবার কিছুটা বেড়েছে। সাধারণত এখানকার পরোটা, কিমা পরোটা ও টানা পরোটার চাহিদা বেশি। পরোটার সঙ্গে গরু বা মুরগির মাংস কিনছেন ক্রেতারা। আবার গরমের কারণে লাচ্ছি ও ফালুদার বিক্রিও কম নয়।
বেইলি রোডে ৩২ বছরের পুরনো একটি প্রসিদ্ধ ইফতারির দোকান ক্যাপিটাল ইফতার বাজার। এখানে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বেশ কিছু খাবার বিক্রি হয়। শামি কাবাব, সুতি কাবাব, জাম্বো রোস্ট, ব্রেন মসল্লা, খাসির পা থেকে শুরু করে ইলিশ মাছের পোলাও রয়েছে এ দোকানে। প্রায় ১০০ ধরনের ইফতার আইটেম বিক্রি হয় দোকানটিতে।
ক্যাপিটাল ইফতার বাজারের আনিস নামের এক বিক্রেতা বলেন, প্রায় ৩০ বছর ধরে এখানে ইফতারি বেচি। পাঁচ টাকা দামের পেঁয়াজু থেকে শুরু করে সব ধরনের ইফতারি তৈরি হয় এখানে। পুরান ঢাকার ঐতিহ্য নতুন ঢাকায় আনা হয়েছে।
ফাস্টফুডের দোকানগুলোতেও দেখা গেল ইফতারি বিক্রির আয়োজন। গোল্ডেন ফুড, রেড কোর্টসহ কয়েকটি দোকানে ইফতারি বিক্রি হচ্ছে।
বেইলি রোডের পিঠাঘরে হরেক রকম পিঠার পাশাপাশি হালিমসহ বেশ কিছু ইফতারি বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতাও অনেক। পিঠার মধ্যে রয়েছে লবঙ্গ লতিকা, মাল পোয়া, রস ফুল, ক্ষীর পুলি, বিবিখানা, সূর্যমুখী ইত্যাদি।
অন্যদিকে রোজায় এখানে অস্থায়ী দোকানও গড়ে ওঠেছে। এসব দোকান মালিকরা জানান, বিক্রি চলে ইফতার শুরুর আগ মুহূর্তে। পাশাপাশি বড় বড় ইফতার পার্টির জন্য প্যাকেট ইফতারিও এসব দোকান থেকে সরবরাহ করা হয়। অনেক তরুণ-তরুণী এখানকার ফুটপাথে বসেও ইফতার করে।
হরেক ররকম খাবারেরর মধ্যে এখানকার বিভিন্ন ধরনের চাপ, কাবাব ও মাংসের নানা ধরনের খাবার রয়েছে। এছাড়া রয়েছে মগজ ভুনা, খাসির হালিম, খাসির গ্রিল চাপ, গরুর চাপ, লুচি, কাচ্চি বিরিয়ানি (খাসি), ফিরনি, খাসির লেগ রোস্ট, বোরহানি, চিকেন রোস্ট (আস্ত), চিকেন ফ্রাই, চিকেন সমুচা, চিকেন ললি, জালি কাবাব, শিক কাবাব, ভেজিটেবল রোল, স্প্রিং রোল, কিমার চপ, পেঁয়াজু, বেগুনি, বেসন চাপ, ছোলা, বাসমতীর জর্দা, চাটনি, পনিরের সমুচা, নিমক পোড়া, বুন্দিয়া, হালিম, দইবড়া, সুতি কাবাব, রেশমি কাবাব ও কিমা পরোটা খুবই জনপ্রিয়।
ফাস্টফুড আইটেমের বেচাবিক্রিও ভালো। পিঠা ঘরে রয়েছে ৪০ রকমের পিঠা। সুইস, স্কাইলার্ক, বারবিকিউ, নবাবি ভোজ, জলি-বি, হ্যালভেশিয়া, হকের মতো দোকানগুলোয়ও ক্রেতার ভিড় থাকে বেশি দেখা গেছে।
এমএ/এএইচ/আরআইপি