পাহাড়ে ভূমিধস মোকাবেলায় ৭ সুপারিশ
বর্ষা মৌসুম যতই এগিয়ে আসছে পার্বত্য জেলায় ততই ভূমিধসের আশঙ্কা বাড়ছে। এবার মিয়ানমারের অধিবাসী রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে কক্সবাজারের বনভূমি ও পাহাড় ধ্বংস করায় ভূমিধসের আশঙ্কা আরও বেড়েছে। এ কারণে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় ও সংসদীয় কমিটিও তোড়জোড় শুরু করেছে। আর পার্বত্য এলাকা পরিদর্শন করে ভূমি ধসের পাঁচটি কারণ জানিয়েছে এ সংক্রান্ত সাব-কমিটি। একই সঙ্গে ভূমিধস মোকাবেলায় তুলে ধরেছে সাত সুপারিশ।
জাতীয় সংসদ ভবনে রোববার অনুষ্ঠিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে পার্বত্য জেলায় ভূমিধসের কারণ ও প্রতিকারের উপায় তুলে ধরে এ সংক্রান্ত সাব-কমিটি। এর আগে কমিটির সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল এমপিকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের একটি সাব-কমিটি গঠন করা হয়। বৈঠকে সাব-কমিটির প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সাব-কমিটি চলতি বছরের জানুয়ারিতে চট্টগ্রাম, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলা পরিদর্শন করে। এ সময় তারা গত বছরের পাহাড় বা ভূমিধসের বিভিন্ন জায়গায় যান। সংসদীয় কমিটি তদন্ত করে ভূমিধসের যে কারণগুলো খুঁজে পায় সেগুলো হলো-
১। পাহাড়ের তলদেশে ঘর তৈরি করে বসবাসরত ছিন্নমূল মানুষদের ওপর অতিবৃষ্টি, বজ্রপাত ও মৃদু ভূমিকম্পের কারণে মাটি ধসে মানুষের মৃত্যু।
২। স্থানীয় প্রভাবশালী চক্র পাহাড় থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ায় পাহাড় ধসের সৃষ্টি হয়।
৩। প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সহায়তায় পাহাড় কেটে গড়ে উঠা ইটের ভাটার কারণে পাহাড় ধস হচ্ছে।
৪। অবৈধ বসতি স্থাপন ও অপরিকল্পিতভাবে অবকাঠামো এবং নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন করা এবং
৫। দুর্বল মাটির গঠন ও ভূমিকম্প।
সংসদীয় কমিটি ওই তিন জেলার জেলা প্রশাসক, স্থানীয় নেতা ও স্থানীয় ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে ভূমি বা পাহাড় ধস বন্ধে সাতটি সুপারিশ করেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শফিকুল ইসলাম শিমুল এমপি জাগো নিউজকে বলেন, আগামীতে যাতে পাহাড় ধসে হতাহতের ঘটনা না ঘটে সেজন্য এসব সুপারিশ করেছে সাব-কমিটি। ভূমিধসের কারণ উল্লেখসহ আশ্রয়হীন ও যারা পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করছে তাদের জন্য স্থায়ীভাবে বাড়িঘর নির্মাণের সুপারিশ করেছে কমিটি।
সুপারিশগুলো হলো-
১। পাহাড়ে বসবাসকারী ছিন্নমূল মানুষদের জন্য স্থায়ী আবাসন নির্মাণে জায়গা নির্ধারণ
২। রাঙামাটি জেলায় আশ্রয়হীন এবং যারা পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করছে তাদের জন্য ছোট ছোট টিলাগুলো সমতল করে সেখানে তাদের বসবাসের জন্য সরকারি অর্থায়নে স্থায়ীভাবে বহুতল ভবন নির্মাণ
৩। পাহাড়ের পাদদেশে নতুন করে ঘরবাড়ি নির্মাণ বন্ধ
৪। পাহাড়ে অধিক পরিমাণে পরিবেশবান্ধব এবং পাহাড় রক্ষাকারী বৃক্ষ ও বাঁশ রোপণ
৫। রাঙামাটি-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুই পাশের পাহাড়গুলোতে যে কোনো ধরনের স্থাপনা তৈরির অনুমতি সম্পূর্ণভাবে রহিত করা এবং বর্তমান স্থাপনাগুলো পর্যায়ক্রমে নিরাপদ ও দূরবর্তী স্থানে স্থানান্তর করা
৬। ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প গ্রহণ
৭। পাহাড় থেকে মাটি কেটে ও ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো বন্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা।
প্রসঙ্গত, গত কয়েক বছর ধরেই বর্ষায় পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসে প্রাণহানি ঘটছে। গত বছরের জুনে কয়েকদিনের টানা বর্ষণে চট্টগ্রাম, রাঙামাটি ও বান্দরবানের পাহাড়ি এলাকার কয়েকটি স্থানে ধস দেখা দেয়। এতে নিহত হয়েছে শতাধিক। কক্সবাজারের পাহাড় ও বনভূমি ধ্বংস করে সেখানে রোহিঙ্গারা অবস্থান করায় এবারও ভূমি ধসের ব্যাপক আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এইচএস/ওআর/এমএস