উত্তাল শাহবাগ
‘প্রজ্ঞাপন নিয়ে টালবাহানা, চলবে না চলবে না’; ‘আর নয় কালক্ষেপণ, দিতে হবে প্রজ্ঞাপন’; ‘হামলা করে আন্দোলন, বন্ধ করা যাবে না’; ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নেই’; ‘কোটা দিয়ে কামলা নয়, মেধা দিয়ে আমলা চাই’ এমন স্লোগান স্লোগানে আবারও উত্তাল হয়ে উঠেছে রাজধানীর শাহবাগ মোড়।
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথার বিলুপ্তির প্রজ্ঞাপন চেয়ে শাহবাগ মোড়ে অবরোধ করেছেন আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশীরা।
আন্দোলনকারীদের এই অবরোধের ফলে চারদিকের রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। মোটরসাইকেল পর্যন্ত যেতে দেয়া হচ্ছে না। এতে করে ভোগান্তিতে পড়েছে যাত্রী ও পথচারীরা। পরিস্থিতি এতো বেগতিক যে বিজয় সরণি পর্যন্ত রাস্তায় যানবাহন থমকে আছে। এছাড়া একদিকে মতিঝিল ও অনদিকে নিউমার্কেট পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। সব গাড়ি ইউটার্ন নিয়ে উল্টো পথে যাচ্ছে।
আন্দোলনকারীদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন জানান, প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। সরকার চাইলে কোটা বাতিল কিংবা আমাদের পাঁচ দফার ভিত্তিতে কোটা সংস্কার করতে পারে।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সোমবার সকাল থেকেই ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভ করছিলেন আন্দোলনকারীরা। বিভিন্ন একাডেমিক ভবনে তালাও দেয়া হয়। দফায় দফায় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন তারা। পরে দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটের দিকে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা।
সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে মিছিলটি শাহবাগে গিয়ে শেষ হয়। এরপরই সড়ক অবরোধে করে ফেলেন আন্দোলনকারীরা।
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর কয়েক দফায় আল্টিমেটাম শেষে গতকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য দেশের সব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেয় কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।
গত ৮ এপ্রিল থেকে টানা পাঁচ দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রায় সব পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। ১২ এপ্রিল জাতীয় সংসদের অধিবেশনে কোটা পদ্ধতি বাতিল ঘোষণা করে সব চাকরিতে শতভাগ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে সোমবার বেলা ১১টা পর্যন্ত এখনো এ বিষয়ে কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি।
এই প্রজ্ঞাপনের দাবিতেই এখন আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে সরকারি চাকরিতে কোটা বিষয়ে শিগিগিরই সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। সোমবার (১৪ মে) মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে একথা জানান তিনি।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘কোটা নিয়ে আলোচনা (মন্ত্রিসভা বৈঠকে) হয়নি। কিন্তু কোটাটা প্রক্রিয়াধীন আছে, হয়তো কিছু দিনের মধ্যে হয়ে যাবে। আমি যতদূর শুনেছি এর (কোটার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে কমিটি গঠন) সামারি (সার সংক্ষেপ) অলরেডি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে (প্রধানমন্ত্রীর কাছে) চলে গেছে। হয়তো আমরা শিগগিরই সিদ্ধান্ত পাব, ইনশাল্লাহ।’
এমএইচ/এমবিআর/জেআইএম