মহাকাশে সঠিক পথেই এগুচ্ছে বঙ্গবন্ধু-১
বাংলাদেশ সময় শুক্রবার (১২ মে) দিবাগত রাত ২ টা ১৪ মিনিটে শুরু হয়েছে যে স্বপ্নযাত্রা, সে যাত্রায় বেশ ভালোভাবেই এগুচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধু-১’। মহাকাশে আগামী পনেরো বছরের জন্য জায়গা করে নিতে ছুটছে তার লক্ষ্যপানে। অন্তত আগামী ছয় (মোট সাতদিন) পর নিজের কক্ষপথ ১১৯.১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে পৌঁছাবে বাংলাদেশের প্রথম উপগ্রহটি।
শনিবার (১২ মে) সন্ধ্যায় বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন দেশের প্রথম স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ ও নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে জড়িত একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র। সূত্রটি জানায়, মহাকাশে ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’এর যাত্রা নিরবচ্ছিন্ন রয়েছে। ঠিক পথ ধরেই এগুচ্ছে আমাদের স্বপ্ন ‘বঙ্গবন্ধু-১’। সর্বশেষ দক্ষিণ কোরিয়ার গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে কৃত্রিম উপগ্রহটির অবস্থান নিশ্চিত হওয়া গেছে। এতে করে ‘বঙ্গবন্ধু-১’পথপরিক্রমা নিয়ে আমরা নিশ্চিত হতে পারি।
সূত্রটি আরও জানায়, মোট সাত দিন (আর ছয় দিন পর) চলার পর উপগ্রহটি ১১৯.১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের কক্ষপথে পৌঁছাবে। কয়েকদিন ধরে পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাওয়ার পর উপগ্রহটিকে পর্যায়ক্রমে দেশের বেতবুনিয়া ও গাজীপুর গ্রাউন্ড স্টেশনের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে।
এদিকে রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ার গ্রাউন্ড স্টেশনের নির্ভরযোগ্য সূত্র জাগো নিউজকে জানায়, বেতবুনিয়ার গ্রাউন্ড স্টেশনটি ব্যাকআপ স্টেশন হিসেবে তৈরি করা হলেও ‘বঙ্গবন্ধু-১ মহাকাশে পাড়ি দেয়ার পর বাংলাদেশের পক্ষে প্রথমবারের মতো বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের নিয়ন্ত্রণ নেবে রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় অবস্থিত ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশন-২’।
স্যাটেলাইটটি পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় ২০ দিন লাগবে। স্যাটেলাইটটি সম্পূর্ণ চালু হওয়ার পর এর নিয়ন্ত্রণ গাজীপুর গ্রাউন্ড স্টেশনে হস্তান্তর করা হবে। মূলত বেতবুনিয়ায় অবস্থিত ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশন-২’ এর ভৌগোলিক অবস্থানগত সুবিধা কাজে লাগাতেই এমনটা করা হবে। এরপর থেকে স্যাটেলাইটের নিয়ন্ত্রণের মূল কাজ হবে জয়দেবপুরে স্টেশনেই। তবে কখনও যদি গাজীপুর স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়, তখন বেতবুনিয়ার গ্রাউন্ড স্টেশন-২ কাজ শুরু করবে। অনেক ক্ষেত্রে দুই গ্রাউন্ড স্টেশনেই সমানতালে কাজ হবে।
একই কথা বলছে স্যাটেলাইট নির্মাণে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ফ্রান্সের থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেস এর ওয়েবসাইট সূত্র। তারা বলছে, বঙ্গবন্ধু উপগ্রহটি মহাকাশে ১১৯.১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করবে। এ লক্ষ্যে ২০১৫ সালের ১৫ জানুয়ারি রাশিয়ান ইন্টারস্পুটনিকের আওতাধীন ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশ কক্ষপথটি (অরবিটাল স্লট) ভাড়া নেয়ার বিষয়ে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। উপগ্রহটি ১১৯.১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের কক্ষপথে পৌঁছানোর জন্য সাত দিন লাগবে। কয়েক দিন ধরে পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাওয়ার পর, উপগ্রহটিকে বাংলাদেশের গ্রাউন্ড স্টেশনের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে। এসব পরীক্ষার বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে জমির ঘনত্বের সংযোগ নিশ্চিত করা প্রয়োজন হবে।
এদিকে স্যাটেলাইট উন্মুক্ত হওয়ার পরপর এর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি এবং কোরিয়ার তিনটি গ্রাউন্ড স্টেশন। এই তিন স্টেশন থেকে স্যাটেলাইটটিকে নিয়ন্ত্রণ করে এর নিজস্ব কক্ষপথে (১১৯.১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অরবিটাল স্লট) স্থাপন করার কাজ চলছে। স্যাটেলাইটটি পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় ২০ দিন লাগবে। স্যাটেলাইটটি সম্পূর্ণ চালু হওয়ার পর এর নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের গ্রাউন্ড স্টেশনে হস্তান্তর করা হবে।
এদিকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট থেকে গাজীপুর গ্রাউন্ড স্টেশনে সিগন্যাল পাওয়ার যে সংবাদ প্রচারিত হচ্ছে তা সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, ‘বঙ্গবন্ধু-১’ এখনও তার অরবিটেই (কক্ষপথে) পৌঁছায়নি। ওটা কিভাবে সিগন্যাল দেবে? কক্ষপথে প্রবেশের আগ পর্যন্ত স্যাটেলাইটটির অ্যান্টেনাগুলোর কোনোটাই কাজ করবে না। তাই সিগন্যাল পাঠানোর সংবাদটি একেবারেই ভুল।
সর্বশেষ কোরিয়ার গ্রাউন্ড স্টেশন উপগ্রহটির (বঙ্গবন্ধু-১) অবস্থান শনাক্ত করতে পেরেছে। তারা বলছে, উপগ্রহটি সঠিক পথ ধরে এগুচ্ছে।
এসএইচএস/ওআর/এমআরএম