অর্থনীতির নয়া সম্ভাবনাময় ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’
স্যাটেলাইট যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে এ যুগের সূচনা হতে যাচ্ছে। সঠিক পরিকল্পনা ও দক্ষতার সঙ্গে এর ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে বদলে যাবে দেশের অর্থনৈতিক চালচিত্র। পরিচয় মিলবে নয়া অর্থনীতির। কারণ এতে সাশ্রয় হবে বৈদেশিক মুদ্রার। একই সঙ্গে আবহাওয়ার পূর্বাভাস, টিভি বা রেডিও চ্যানেল, ফোন, মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহারের উৎকর্ষ সাধন, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের স্থান চিহ্নিতকরণ, আর্থিক খাতে কম খরচে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার এবং দুর্নীতি ও অনিয়ম কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
তবে সবকিছুই সম্ভব হবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের ব্যবহারিক দক্ষতার ওপর। এজন্য দেশি ও বিদেশি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের ভিত্তিতে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।
আরও পড়ুন >> স্যাটেলাইটে কী সুবিধা পাবে বাংলাদেশ
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে এ মুহূর্তে টিভি চ্যানেল আছে ৪৬টি। দেশে স্যাটেলাইটের ব্যবহার দিনদিন বেড়ে চলেছে। বিটিআরসির হিসাব অনুযায়ী, প্রতিটি টিভি চ্যানেলকে স্যাটেলাইটের ভাড়াবাবদ প্রতি বছর প্রায় দুই লাখ ডলার দিতে হয়। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের উৎক্ষেপণের পর ওই ভাড়ার টাকা দেশেই থেকে যাবে।
এছাড়া দেশে ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বা আইএসপি আছে কয়েকশ’। রেডিও স্টেশন আছে ১৫টির ওপরে। আরও রেডিও আসছে। ভি-স্যাট সার্ভিস তো আছেই। সবই চলেছে বিদেশিদের ওপর নির্ভর করে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের কার্যক্রম শুরু হলে শুধু বৈদেশিক মুদ্রাই সাশ্রয় হবে না, এর অব্যবহৃত অংশ নেপাল, ভুটানের মতো দেশে ভাড়া দেয়া যাবে। যেখান থেকে প্রতি বছর প্রায় ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ আয় করা সম্ভব। কারণ ৪০টি ট্রান্সপন্ডারের মধ্যে মাত্র ২০টি ব্যবহার করবে বাংলাদেশ। বাকি ২০টি ভাড়া দেয়া হবে।
আরও পড়ুন >> বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণে আরেকটি ইতিহাস তৈরি হচ্ছে : স্পেসএক্স
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ বলেন, দেশের উন্নয়নে প্রযুক্তির বিকাশের বিকল্প নেই। স্যাটেলাইট হয়তো সেই প্রযুক্তি ব্যবহারের দিগন্ত উন্মোচন করবে। অনেক সময় স্যাটেলাইটের ভাড়ার নামে অনেক অর্থ দেশ থেকে পাচার করা হয়। নিজস্ব উপগ্রহ চালু হলে ভাড়াবাবদ অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা আয় করাও সম্ভাব।
‘তবে স্যাটেলাইটটি কীভাবে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে হয় সেটা জানা জরুরি। তা না হলে যে পরিমাণ বিনিয়োগ হয়েছে সেটাই বা আসবে কোথা থেকে? হুজুগে পড়ে একটা কাজ করলেই হবে না, এর ব্যবহারেও দক্ষতা বাড়াতে হবে।’
আরও পড়ুন >> ‘এটা আমাদের জাতিগত অনেক বড় পাওয়া’
এ মুহূর্তে বিশ্বের ৫৬টি দেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট আছে। প্রতিবেশি দেশের মধ্যে ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড এমনকী শ্রীলংকার মতো দেশেরও নিজস্ব স্যাটেলাইট আছে।
বাংলাদেশের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য ৮৫ কোটি টাকা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশেষজ্ঞ কোম্পানিকে প্রাথমিক সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়। সেই প্রতিষ্ঠানের রিপোর্টের ভিত্তিতে ২০১৩ সালে রাশিয়ার ইন্টারস্পুটনিকের কাছ থেকে কক্ষপথ (অরবিটাল স্লট) কেনা হয়। মহাকাশে এই কক্ষপথের অবস্থান ১১৯ দশমিক ১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে সম্পাদিত চুক্তির ভিত্তিতে প্রায় ২১৯ কোটি টাকায় ১৫ বছরের জন্য এ কক্ষপথ ভাড়া নেয়া হয়।
২০১৫ সালের মার্চে দুই হাজার ৯৬৭ কোটি টাকার প্রকল্পটি অনুমোদন করে সরকার। এরপর দরপত্র আহ্বান করা হলে ২০১৫ সালে নভেম্বরে ফ্রান্সের কোম্পানি থ্যালেস অ্যালেনিয়ার সঙ্গে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের ডিজাইন ও নির্মাণচুক্তি হয়।
আরও পড়ুন >> ‘স্যাটেলাইটের টাকা ১৫ বছরেও তুলে আনা সম্ভব হবে না’
সংশ্লিষ্টরা জানান, স্যাটেলাইটটির ক্ষমতার অর্ধেক দেশের বাজারে ব্যবহার হওয়ার পর বাকিটা আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রির পরিকল্পনা রয়েছে। এতে সাত বছরের মধ্যে খরচ উঠে আসবে। তবে এখনও সুনির্দিষ্ট ব্যবসায়িক পরিকল্পনার বিষয়টি জানা যায়নি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সিনিয়র নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘এটি দেশের জন্য অত্যন্ত সম্মানের। কিন্তু যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হবে সেটা কবে নাগাদ উঠে আসবে সেটাই দেখার বিষয়। এর বাইরে আর্থিক খাতসহ নানা সেক্টরে মনিটরিং জোরদারের বিষয়ে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ভূমিকা রাখতে পারে। তবে এজন্য সংশ্লিষ্টদের দক্ষতার প্রয়োজন সবার আগে।’
এমএ/এমএআর/বিএ