ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

ইনফেকশনের ঝুঁকি এড়াতে গুলিবিদ্ধ শিশুকে আইসিইউতে স্থানান্তর

প্রকাশিত: ০৮:১৬ এএম, ৩০ জুলাই ২০১৫

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দোতলায় নবজাতক (নিওনেটাল) ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের বাইরে ছোট্ট একটি ফিডার ভর্তি দুধ হাতে দাঁড়িয়েছিলেন এক যুবক। কর্তব্যরত আনসারকে বলছিলেন, ভাই, ডাক্তারকে একটু ডেকে দিন না প্লিজ।

মাগুরাতে মায়ের পেটে যে শিশুটি গুলিবিদ্ধ হয়েছে তাকে খাওয়ানোর জন্য আমার স্ত্রী বুকের দুধ পাঠিয়েছেন। আপনি কী বলতে পারেন কার মাধ্যমে আমি দুধটা শিশুটির কাছে পৌঁছাতে পারি? প্রশ্নোত্তরে আনসার বললেন, এ ব্যাপারে আপনি শিশু বিভাগের অধ্যাপক ডা. আবিদ হোসেন মোল্লার সাথে যোগাযোগ করেন।

জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে যুবক জানান, তার নাম মসিউর রহমান। পেশায় আউটসোর্সিং ব্যবসা। মালিবাগ শান্তিবাগের ৭/৫বাড়ির ফ্ল্যাট-৩/এতে স্ত্রী জেরিন ও তিনমাসের শিশু পুত্র নিয়ে থাকেন। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক, ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও অনলাইনে শিশুটির গর্ভবতী মা পাশে না থাকায় মায়ের বুকের দুধ খেতে পারছে না শুনে তাদের মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে যায়। তাই সকালে স্ত্রী বুক থেকে দুধ গলিয়ে ফিডারে ভরে পাঠিয়েছেন।

অধ্যাপক আবিদ হোসেন মোল্লার সাথে যোগাযোগ হলে তিনি তাকে বলেছেন, পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়া এই দুধ খাওয়ানো সম্ভব না। তবে তিনি দুধটা রেখে যেতে বলার পাশাপাশি ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে ডা. আবিদ হোসেন মোল্লা জানান, শিশুটিকে শিশু সার্জারি ওয়ার্ড থেকে নিওনেটাল আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়েছে।

তিনি জানান, শিশুটি আর দশটি বাচ্চার চেয়ে কম ওজন ২ কেজি (স্বাভাবিক ওজন কমপক্ষে আড়াইকেজি) নিয়ে জম্মগ্রহণ করেছে। মায়ের পেটে থাকা অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হয়েছে। গুলিতে তার পিঠ, বুক, হাত, পা ও চোখে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। জম্মের পর মায়ের বুকের দুধ পায়নি। বুধবার অস্ত্রোপচারে তার দেহে ২১টি সেলাই পড়েছে।

তিনি বলেন, স্বাভাবিকভাবেই নবজাতক শিশুদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। আর এই নবজাতকের কোমল দেহের ওপর দিয়ে কত বড় ধকল গিয়েছে। ফলে তার শরীরে ইনফেকশন হওয়ার ঝুঁকি খুবই বেশী। ইনফেকশন এড়াতে তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়েছে। সর্বোচ্চমাত্রার এন্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা চলছে তার। এ কারণে আইসিইউতে কর্মরত দুজন চিকিৎসক তাকে সার্বক্ষনিক খেয়াল রাখছেন।

জানা গেছে শিশুটিকে এ মুহূর্তে মুখে কোন খাবার দেয়া হচ্ছে না। স্যালাইনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করা হচ্ছে। চিকিৎসকরা জানান, ছোট এই শিশুটির নাড়ির ওপর কোন চাপ পড়ুক এ মুহূর্তে তারা তা চাইছেন না।

নিওনেটাল আইসিইউ এর বাইরে অপেক্ষমান শিশুটির ফুফু শিউলী বেগম জানান, শিশুটির মা নাজমা বেগমের ঢাকায় আসার কথা থাকলেও চিকিৎসকরা তাকে আরও দুই একদিন পরে আসার পরামর্শ দেয়ায় ব্যাকুল হয়ে থাকলেও আসতে পারেননি।

আইসিইউ’র চিকিৎসকরা শিশুটির জন্য কম্বল কিনে আনতে বললে হাতে একটি পাঁচশ টাকার নোট নিয়ে একটি কম্বল কিনে এনে দিতে একে তাকে অনুরোধ করছিলেন। তিনি জানান, তিনি ঢাকা শহরের রাস্তাঘাট চিনেন না। বুধবার হাসপাতালের ওয়ার্ড থেকে ওটিতে যাওয়ার সময় পথ ভুলে অন্য ওয়ার্ডে ঢুকে পড়েছিলেন।

বৃহস্পতিবারও প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন গনমাধ্যমের সাংবাদিকরা শিশুটির ওপর প্রতিবেদন করতে নিওনেটাল আইসিইউতে ভীড় করেন। কিন্তু চিকিৎসকরা কাউকে ভেতরে ঢুকতে দেননি। গণমাধ্যম কর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষরা শিশুটিকে একনজর দেখতে আইসিইউ’র বাইরে অপেক্ষা করতে থাকে।

একটি জাতীয় দৈনিকের সাংবাদিক জানান, তার কাছে বহু শিশুর মা টেলিফোন করে ও তার বার্তা পাঠিয়ে শিশুটির জন্য দুধ পাঠাতে ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। একজন হিন্দু মা বলেছেন, আমার দুধ খাওয়ানো যাবে কী? তিনি বলেছেন, মা তো মাই। দুধে তো আর হিন্দু মুসলমান লিখা নেই।

উল্লেখ্য, গত ২৩ জুলাই (বৃহস্পতিবার) ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীদের ছোঁড়া গুলিতে দরিদ্র চা বিক্রেতা দম্পত্তির নবজাতক শিশু মায়ের পেটে গুলিবিদ্ধ হয়।

এমইউ/এআরএস