ভারত-চীনকে উদাসীনতা ছেড়ে এগিয়ে আসতে হবে
রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারত ও চীনকে ‘উদাসীনতা’ ছেড়ে এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করেন মিয়ানমারে নিয়োগকৃত কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর বিশেষ দূত বব রে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইন অডিটোরিয়ামে সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিস (সিপিজে) ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, সমস্যাটি এখন শুধু বাংলাদেশের নয়। আন্তর্জাতিকভাবে বিষয়টি নিয়ে চিন্তার সময় এসেছে। মিয়ানমার সরকার শরণার্থীদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের আগ্রহ প্রকাশ করলেও শরণার্থীদের পরিচয় নিশ্চিতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক কারণে যেসব মানবিক সংকটের সৃষ্টি হয়েছে এগুলোর দায় থেকে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের অব্যাহতি নেই।
বব রে বলেন, আমি রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের বর্ণনা প্রত্যক্ষভাবে তাদের মুখে শুনেছি। তাদের মানবিক সংকট দেখার জন্য আমাকে প্রথম দিকে রাখাইন রাজ্যে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। পরে আমি সেখানে গিয়ে তাদের দুর্ভোগ স্বচক্ষে দেখেছি। নারী, শিশু এবং বৃদ্ধদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সদস্যরা যে অমানবিক অত্যাচার করেছে তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। শরণার্থী শিবিরে আসার পথে অনেক রোহিঙ্গা প্রাণ হারান।
তিনি বলেন, এসব মানবিক সংকটের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে হবে। সেখানকার অভিজ্ঞতা নিয়ে আমি ইতোমধ্যে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছি। প্রতিবেদনে আমি বেশকিছু বিষয়ের ওপর আলোকপাত করেছি।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে :
প্রথমত, পালিয়ে আসা ৬ লাখ ৭১ হাজার রোহিঙ্গাকে নিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। দ্বিতীয়ত, শরণার্থীদের পূর্ণ রাজনৈতিক ও সামাজিক অধিকারসহ নিরাপদ প্রত্যাবাসান নিশ্চিত করতে যথাযথ উদ্যোগ দরকার এবং রাখাইন রাজ্যের ওপর দেয়া কফি আনান কমিশনের প্রস্তাবনাগুলোর প্রয়োগ নিশ্চিত করা।
তৃতীয়ত, বিশ্বাসযোগ্য উপায়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘনকারীদের শনাক্তকরণ, আইনের যথাযথ মূল্যায়ন ও প্রয়োগ নিশ্চিত করা।
চতুর্থত, সরকারি ও আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে যৌথ প্রচেষ্টায় চলমান সংকট নিরসনে বিভিন্ন দেশকে সমন্বিতভাবে কাজ করা।
রোহিঙ্গা সংকটে কানাডা সরকারের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বব রে বলেন, কানাডা সরকার বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মানবিক সহায়তার জন্য ৩ কোটি ৭৫ লাখ ডলার মানবিক সহায়তা দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বিশাল এই জনগোষ্ঠীর মৌলিক চাহিদা, কর্মসংস্থান এবং নিরাপত্তার জোগান দিতে গিয়ে রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। ক্যাম্পগুলোতে চলতি মৌসুমে ভারী বৃষ্টি ও অপর্যাপ্ত স্যানিটেশন সুবিধার অভাবে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে পড়ার ভয় রয়েছে। তাই দেশ হিসেবে শুধু কানাডাকে এগিয়ে এলেই হবে না।
টেকসই সমাধানের লক্ষ্যে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন এনজিওগুলোর সমন্বিতভাবে কাজ করে যেতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি জানি সমাধান এত তাড়াতাড়ি আসবে না। তবে শুধু পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় সমাধান আসবে না। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এলে তাদের দেখাদেখি আন্তর্জাতিকভাবে অন্যান্য দেশগুলো সংকট নিরসনে ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ত্রাণ পাঠালেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যাবে না। শরণার্থীরা যাতে নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে পারে সেজন্য তাদের সুশিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের এই সংকটের দিনে মনোবল বাড়িয়ে তাদের পাশে থাকতে হবে।
‘আমাদের এক জোট হয়ে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক অবকাঠামো তৈরি করতে হবে, যার ওপর ভিত্তি করে শরণার্থীদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করা যায়’- বলেন বব রে।
প্রসঙ্গত, কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করতে বব রে বুধবার বাংলাদেশে আসেন। উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দলের অংশ হিসেবে ৫৮টি দেশের মন্ত্রীদের অংশগ্রহণে কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ আগামীকাল শুক্রবার তিনি কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যাবেন।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে নিউইয়র্ক-ভিত্তিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস’র (সিপিজে) নির্বাহী পরিচালক মনজুর হাসান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সৈয়দ সাদ আন্দালিব, জাতিসংঘ ও অন্যান্য এনজিওর প্রতিনিধি এবং আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন।
এইউএ/জেডএ/পিআর