ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

‘সংসদের আপত্তিতে তামাকে কাঙ্ক্ষিত করারোপ সম্ভব হয় না’

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৩:১৯ পিএম, ০৩ মে ২০১৮

রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, তামাকজাত পণ্যের খাত থেকে রাজস্ব আদায় বাড়ানোও সম্ভব। কিন্তু এসব পণ্যের অতিরিক্ত করারোপ করতে হলে সেটা জাতীয় সংসদে পাস করতে হয়। অনেক সময় এসব প্রস্তাব পাস হয় না। তাই চাইলেও এক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত হারে কর বাড়াতে পারে না এনবিআর।

বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত ‘কেমন তামাক কর চাই’ শীর্ষক প্রাক-বাজেট সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ২০১৮-১৯ বাজেটে তামাকপণ্যে যুগোপযোগী এবং কার্যকর করারোপের দাবিতে প্রজ্ঞা ও অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স-আত্মা’র উদ্যোগে তামাকবিরোধী সংগঠন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, ঢাকা আহছানিয়া মিশনসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন সম্মিলিতভাবে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, কোনো পণ্যের কর বাড়াতে হলে সেটা জাতীয় সংসদে পাস করতে হয়। আমরা পাস করানোর জন্য যেসব প্রস্তাব নিয়ে যেতাম সবগুলো পাস হতো না। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় এমপিরা তাদের নিজেদের স্বার্থে এসব প্রস্তাব পাস করতে দিতেন না। তবে এখন সময় পাল্টাচ্ছে। কারণ প্রধানমন্ত্রী নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে তামাক মুক্ত।

তিনি বলেন, সরকারিভাবে অনেক সচিব ব্রিটিশ আমেরিকা টোবাকোর সঙ্গে জড়িত থাকেন। অনেকেই সেখানে পরিচালক পদে নিয়োগপ্রাপ্ত থাকেন। তাই এদিক থেকে তামাকে কর বাড়ানো বিষয়টিতে বাধা আসে।

এনবিআরের এ সাবেক চেয়ারম্যান বলেন, তামাক ও তামাকজাত পণ্য থেকে এনবিআর প্রতি অর্থবছরে ২০ থেকে ২৪ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ করে। যা এনবিআরের মোট রাজস্বের ১০ শতাংশ। এছাড়া এ কোম্পানিগুলো কর্পোরেট ট্যাক্সও দেয়। বাংলাদেশে এখনো করের পরিধি সেভাবে বাড়ানো সম্ভাব হয়নি। তাই রাজস্ব আয়ের জন্য তামাক কোম্পানিগুলোকে প্রাধান্য দেয় এনবিআর।

তিনি আরও বলেন, তবে আমি একজন অর্থনীতির ছাত্র হিসেবে বলছি, তামাকপণ্যে যে সম্পূরক শুল্ক বিদ্যমান রয়েছে তা আরোপ করা হয় মূল্যের শতাংশ হারে। এটা এখনি বন্ধ করা উচিত। এটা বন্ধ করে সম্পূরক শুল্কের একটা অংশ সুনির্দিষ্ট করে দেয়া উচিত।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সিগারেটে উচ্চ হারে করারোপ করা হলে চোরাচালান বেড়ে যাবে এটা ভ্রান্ত ধারণা। কারণ বাংলাদেশের চেয়ে পার্শ্ববর্তী দেশসমূহে সিগারেটের দাম অনেক বেশি। সুতরাং চোরাচালানের কোনো সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্য সুরক্ষা আগে, তারপর রাজস্ব। জনগণের যদি স্বাস্থ্যই সুরক্ষা না হয় তাহলে রাজস্ব দিয়ে কী হবে? তামাক নিয়ন্ত্রণ নিতীমালা জরুরি।

সভাপতির বক্তব্যে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আব্দুল মালিক বলেন, তামাক হচ্ছে সারাবিশ্বের জন্য অভিশাপ। বিশ্ব এটাকে নিয়ন্ত্রণের জন্য কাজ করছে। আমাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সকল অসংক্রামক ব্যাধির অন্যতম কারণ হচ্ছে তামাক। বর্তমানে ৩০ থেকে ৪০ বছরের লোকজন যারা হার্ট অ্যাটাক করে তাদের অধিকাংশই হচ্ছেন তামাকসেবী।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি ডা. সৈয়দ মাহফুজুল হক বলেন, জনস্বাস্থ্য রাক্ষায় আমরা চাই বাংলাদেশের তামাকজাত পণ্য নিয়েন্ত্রণে আসুক। এর জন্য চাহিদা ও যোগান নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। এক পদ্ধতি অবলম্বন করে তামাক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।

বিশ্বব্যাপী তামাকের চাহিদা নিয়ন্ত্রণের জন্য ছয়টি কৌশল বলা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ট্যাক্স বাড়ানো, সচেতনতা বৃদ্ধি, অ্যাডভার্টাইজমেন্ট, আইন প্রয়োগ। এছাড়া যোগান নিয়ন্ত্রণের জন্য তামাক চাষীদের অন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করাসহ আরও বেশকিছু কৌশল রয়েছে। এসব কৌশলের তামাকের দাম বাড়িয়ে দিয়ে জনগণকে তামাকপণ্য ব্যবহারে নিরুৎসাহীত করা। এ জন্য সবচেয়ে কার্যকরী কৌশল হচ্ছে কর বাড়ানো।

এমইউএইচ/আরএস/পিআর

আরও পড়ুন