অামি কি অার গাড়ি চালাইতে পারবো : পা হারানো রাসেল
যে পায়ে ভর করে গাড়ি চালিয়ে সংসার চালাতেন, প্রতিদিন দুবেলা দুমুঠো ভাত তুলে দিতেন স্বজনদের মুখে। সেই পা হারিয়ে রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকার (২৫)। শঙ্কিত হয়ে পড়েছে রাসেলের পরিবার।
গত শনিবার বিকেল ৩টার দিকে রাজধানীর হানিফ ফ্লাইওভারের যাত্রাবাড়ীর ধোলাইপাড় অংশে গ্রিনলাইন পরিবহনের ধাক্কায় বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় রাসেলের। পরে সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিলে তার অবস্থার অবনতি হওয়ায় দ্রুত তাকে স্কয়ার হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকে সন্ধ্যায় নেয়া হয় অ্যাপোলো হাসপাতালে। সেখানে রাত ৮টা থেকে প্রায় তিন ঘণ্টার অস্ত্রোপচার করে তার পা জোড়া লাগানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন চিকিৎসকরা।
রোববার জ্ঞান ফেরার পর রাসেল জানতে পারেন তার বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এরপর তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। বারবার স্বজনদের কাছে জানতে চান তিনি অার গাড়ি চালাতে পারবেন কি না। পরিবারের স্বজনরা তাকে কোনো অাশ্বাস দিতে পারছেন না। এ কথা শুনে শুধু অশ্রুজলের চোখ লুকানোর চেষ্টা করছেন স্বজনরা।
হাসপাতালের ৫২১৬ নম্বর বেডে এখন রাসেলের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে স্বজনদের অশ্রুজলের গড়াগড়িতে সৃষ্টি হচ্ছে শোকার্ত পরিবেশ। সবাই মুখ লুকিয়ে লুকিয়ে নীরব আর্তনাদ করছেন। কী অাশ্বাস দেবেন রাসেলকে সেটি খুঁজে ফিরছেন স্বজনরা।
রাসেলের গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধার পলাশবাড়ি এলাকায়। দু-বছর ধরে রাজধানীতে প্রাইভেটকার চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছিলেন তিনি। মিশু হাসান নামে তার দুই বছর বয়সী একটি ছেলে রয়েছে। স্ত্রী মিম অাক্তার ও সন্তানকে নিয়ে থাকতেন ঢাকায়।
রাসেলের বড় বোন বদরুন্নেসা জাগো নিউজকে জানান, তার ভাই (রাসেল) পা হারানোর বিষয়টি জানার পর থেকে সবার কাছে শুধু জানতে চান ‘অামি কি অার গাড়ি চালাইতে পারবো, অাব্বাকে বলতেছে, অামি কীভাবে চলবো বাবা?’ কিন্তুু তারা কোনো সান্ত্বনা দিতে পারছেন না।
চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে তিনি জানান, তার অবস্থা স্থিতিশীল। অন্যদের তুলনায় তার অবস্থা ভালো।
তিনি অারও জানান, ঘটনার পর থেকে এখনো পর্যন্ত কেউ তার সাহায্যে এগিয়ে অাসেনি। সরকারও কোনো খোঁজখবর নেয়নি। শুধু তার (রাসেলের) কোম্পানির লোকজনই খোঁজ-খবর নিচ্ছে। কিছুদিন অাগে হাত হারানো রাজীবের মৃত্যুর মতো তার ভাইয়েরও যে মৃত্যু না হয় সেজন্য সবার প্রতি সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।
রাসেলের সহকর্মী অারিফ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘তাকে (রাসেল) বিকেলে দেখতে গেলাম। সে বারবার বলছে, ভাই অামি অাবার গাড়ি চালাইতে পারবতো? অামি নয়লে সংসার চালাবো কীভাবে। রাসেলের এখন চিন্তা একটাই সে তো গাড়ি চালিয়ে সংসার চালাতো। কিন্তুু পা হারানোর কারণে সে এখন কীভাবে তাদের (স্ত্রী-সন্তান, বাবা-মা) খরচ চালাবে। তারতো জীবন সবেমাত্র শুরু হলো। বিয়ে করল। দুই বছরের একটা বাচ্চা। তাদের কীভাবে চালাবে সে। তারতো জীবন শেষ।’
তিনি বলেন, ‘অামরা চাই রাসেলের অনিশ্চিত ভবিষ্যতটা যেন অন্তত একটু নিশ্চিত হয়। সেজন্য সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন। যেন সে স্বনির্ভর কোনো কাজ করে চলতে পারে। অার গ্রিনলাইন পরিবহনের তো অনেক টাকা। এ কারণে যেন চালক কবির পার না পায় সেজন্য সহযোগিতা কামনা করছি। তার যেন সর্বোচ্চ শাস্তি হয়। যাতে এমন দুর্ঘটনা অার কেউ ঘটাকে না পারে।’
এসএইচ/জেডএ/এমএস