‘মানুষ মরতে থাকবেই, মরুক’
ট্রাফিক আইন পরিবর্তন করা দরকার বলে মন্তব্য করেছেন আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক। ট্রাফিক আইনের পরিবর্তন প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দেশের লোক যদি মনে করে ট্রাফিক আইন পরিবর্তন হওয়ার দরকার, তাহলে পরিবর্তন হবে। প্রয়োজন মনে না করলে, হবে না। মানুষ মরতে থাকবেই, মরুক!’
সোমবার দুপুরে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কাছে এমন মন্তব্য করেন তিনি। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ল’ কমিশনের সদস্য বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবির।
সাবেক এ প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘কমার্শিয়াল (বাণিজ্যিক) কোর্ট, কমার্শিয়াল ডিসপিউট (বাণিজ্যিক বিরোধ) ও আরবিট্রেশন (সালিশ) নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের অনেক আরবিট্রেশন সিঙ্গাপুরে চলে যায়। আমাদের দেশের আরবিট্রেশন কোর্টগুলোর আরও এফিশিয়েন্ট (দক্ষ) দরকার। বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট অথরিটি আইন চেঞ্জ করার জন্য অলরেডি ফিল্ড ওয়ার্ক শুরু হয়েছে। আরবিট্রেশন অ্যাক্ট (সালিশ আইন) আরও কার্যকর দরকার, যাতে অল্প সময়ের মধ্যে কম খরচে আরবিট্রেশন হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘দেশে যত ইনভেস্টমেন্ট (বিনিয়োগ) বাড়বে তত কমার্শিয়াল ডিসপিউট (বাণিজ্য-সংক্রান্ত বিরোধ) বাড়বে। ডিসপিউট বাড়লে হয় কোর্টে যাবে, নয় আরবিট্রেশনে যাবে। আমাদের দেশের কোর্টগুলো সিআরপিসির (ফৌজদারি কার্যবিধি) আন্ডারে (অধীনে)। এখানে কমার্শিয়াল ডিসপিউট রিজলভ (সমাধান) করতে গেলে অনেক সময় লাগে।’
‘কমার্শিয়াল কোর্ট কীভাবে যুগোপযোগী করা যায়, নতুন কোর্ট করার প্রয়োজন আছে কি না- এ ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা করেছি। কারণ, চিফ জাস্টিসের (প্রধান বিচারপতি) মতামত গুরুত্ব বহন করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এছাড়া ট্রাফিক আইন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এটি চেঞ্জ হওয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। দেশের লোক যদি মনে করে ট্রাফিক আইন পরিবর্তন হওয়া দরকার, পরিবর্তন হবে। আর যদি দেশের লোক মনে করে পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই, তাহলে হবে না। মানুষ মরতে থাকবেই…’
কেন পরিবর্তন দরকার- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আজকেই আমার কালের কণ্ঠে একটি ইন্টারভিউ (সাক্ষাৎকার) বেরিয়েছে। তাতে অনেক কিছু এক্সপ্লেইন (ব্যাখ্যা) করেছি। যেখানে ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া যদি কেউ গাড়ি চালায় তার সর্বোচ্চ শাস্তি হচ্ছে চার মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫০০ টাকা জরিমানা। কার্যতক্ষেত্রে অনেক সময় দেখেছি, তিনদিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা ৪০০ টাকা জরিমানা। লাইসেন্স ছাড়া চালিয়ে যদি এটুকু পেনাল্টি (শাস্তি) হয় তাহলে ড্রাইভিং লাইসেন্স নেয়ার গরজ তেমন কেউ বোধ করবে না।’
বিচারপতি খায়রুল হক বলেন, ‘ইদানীং তো আর একটা নতুন জিনিস দেখছি, এক গাড়ি আরেক গাড়ির ওপর উঠাই দিচ্ছে, যেটা আজকাল আসা-যাওয়ার সময় দেখি। সড়ক দুর্ঘটনা কীভাবে বাড়ছে! মানুষের পা চলে যাচ্ছে, হাত চলে যাচ্ছে, মাথা চলে যাচ্ছে। এভাবে তো কোনো সভ্য দেশ চলতে পারে না। এজন্যই দরকার আইনের পরিবর্তন।’
‘তবে কেবল শাস্তি বাড়িয়েই হবে না’- উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘এটার (আইনের) এনফোর্সমেন্টও (প্রয়োগ) প্রয়োজন। আমাদের মনোবৃত্তি-মনোভাব, এটাও চেঞ্জ করা প্রয়োজন। গাড়ির যে মালিক তার ছেলেও কাল মারা যেতে পারে। যে বিচারক ৪০০ টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দিচ্ছেন তার ছেলেও কাল মারা যেতে পারে। আইনের পরিবর্তন বড় প্রয়োজন বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি।’
এফএইচ/এসআর/এমএস
আরও পড়ুন
সর্বশেষ - জাতীয়
- ১ ১৮ বছর পর দেশে ফিরলেন রবিউল, বাবাকে ছুঁয়ে দেখলো তিন সন্তান
- ২ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও প্রতিষ্ঠায় তরুণদের এগিয়ে আসা জরুরি
- ৩ সাবেক মুখ্যসচিব তোফাজ্জলের দুর্নীতির প্রাথমিক প্রমাণ মিলেছে
- ৪ পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতকে আন্তর্জাতিক ট্যুরিস্ট স্পটে রূপ দিতে চাই
- ৫ সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ড পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র: জাতীয় নাগরিক কমিটি