হৃদরোগের চিকিৎসায় বাংলাদেশের সাফল্য ঈর্ষণীয়
হৃদরোগের চিকিৎসায় ঈর্ষণীয় উন্নতি হয়েছে বাংলাদেশে। মাত্র তিন দশক আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট একটি বিভাগে হৃদরোগের চিকিৎসা শুরু হয়। ওই সময় হৃদরোগ নির্ণয়ে আধুনিক কোনো যন্ত্রপাতি ছিল না। রোগ নির্ণয় পরীক্ষা-নিরীক্ষায় শুধুমাত্র স্টেথেস্কোপ, ইসিজি ও এক্সরে মেশিনই ভরসা ছিল। ওই সময় হাতেগোণা দু’জন সার্জন হার্টে ভাল্ব লাগানো ও জন্মগত হৃদরোগের অস্ত্রোপচার করতেন।
কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় বর্তমানে দেশে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে হৃদরোগের চিকিৎসার ১৯টি উন্নতমানের বিশেষায়িত হাসপাতাল গড়ে উঠেছে। এসব হাসপাতালের প্রতিটিতে আন্তর্জাতিক মানের যে কোনো হৃদরোগ হাসপাতালের সমমানের অত্যাধুনিক সব যন্ত্রপাতি রয়েছে।
দেশের কার্ডিওলজিস্ট ও কার্ডিয়াক সার্জনরা এখন অনায়াসে হৃদরোগের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা চিহ্নিত করে মেডিসিন ও অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সুচিকিৎসা প্রদান করছেন। এ কারণে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে নতুন জীবন ফিরে পাচ্ছেন হাজারো রোগী।
দেশে হৃদরোগের চিকিৎসার উন্নয়ন ও বিকাশে যে চিকিৎসকের অবদান বর্তমান প্রজন্মের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন তিনি ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক বিগ্রেডিয়ার (অব.) আবদুল মালিক।
মঙ্গলবার হোটেল সোনারগাঁওয়ে বাংলাদেশ কার্ডিয়াক সোসাইটির জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান তার বক্তব্যে, জাতীয় অধ্যাপক বিগ্রেডিয়ার (অব.) আবদুল মালিককে ‘হৃদরোগ চিকিৎসার উন্নয়নের জনক’ বলে অভিহিত করেন।
শুধু তিনিই নন, সম্মেলনে উপস্থিত দেশি-বিদেশি হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা সকলেই বাংলাদেশ হৃদরোগের চিকিৎসায় বহু দূর এগিয়েছে এবং ডা. আবদুল মালিকের হাত ধরেই এ চিকিৎসার যাত্রা শুরু হয়েছিল বলে উল্লেখ করেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নন কমিউনিকেবল কান্ট্রি প্রোফাইল-২০১৪ অনুসারে দেশে প্রতি বছর যত মানুষ মারা যায় তার শতকরা ১৭ ভাগই হৃদরোগের বিভিন্ন ধরনের অসুখের কারণে মারা যায় বলে উল্লেখ করা হয়।
বাংলাদেশ কার্ডিয়াক সোসাইটির দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, গত বছর দেশের বিভিন্ন হৃদরোগ হাসপাতালে হৃদরোগের বিভিন্ন ধরনের ৮ হাজারেরও বেশি অস্ত্রোপচার হয়েছে। বুক না কেটে বিনা অস্ত্রোপচারে কার্ডিওলজিস্টরা ৪৬ হাজারেরও বেশি সংখ্যক চিকিৎসা যেমন হার্ট ও রক্তনালীর এনজিওগ্রাম, হার্টে রিং বসানো ও বেলুনের মাধ্যমে হার্টের ভাল্ব লাগিয়েছেন। তবে হৃদরোগের চিকিৎসা এখনো রাজধানী ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নির্ভর রয়ে গেছে বলে উল্লেখ করা হয়।
কার্ডিয়াক সোসাইটি অব বাংলাদেশ এর সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কে এম মহিবুল্লাহ জানান, কায়িক পরিশ্রম না করা, ফাস্ট ফুড খাওয়া, ধূমপান, দ্রুত নগরায়ন, বায়ুদূষণসহ বিভিন্ন কারণে হৃদরোগ ঘাতক ব্যাধি হিসেবে দেখা দিচ্ছে।
তিনি জানান, সরকারিভাবে ঢাকার বাইরে হৃদরোগের চিকিৎসা সুবিধা তেমন একটা গড়ে ওঠেনি। বিশেষ করে হৃদরোগ সার্জারি কোনো সুবিধাই নেই জেলা হাসপাতালে।
জাতীয় অধ্যাপক বিগ্রেডিয়ার (অব.) আবদুল মালিক বলেন, হৃদরোগের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। তাই এ রোগ প্রতিরোধে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ব্যাপক গণসচেনতা গড়ে তুলতে হবে।
তিনি কার্ডিয়ক সার্জনদের উদ্দেশ্যে বলেন, শর্টকাট উপায়ে ভাল কার্ডিয়াক সার্জন হওয়া যায়না। ভাল কার্ডিয়াক সার্জন হতে হলে পুঁথিগত বিদ্যার পাশাপাশি হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ গ্রহণ বেশি প্রয়োজন।
বাংলাদেশ কার্ডিয়াক সোসাইটির জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে প্রকাশিত সুভেনিরে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ডা. আফজালুর রহমান বিনা অপারেশনে দেশে হৃদরোগের চিকিৎসার সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির একটি পরিসংখ্যানে তুলে ধরে বলেন, যেখানে ২০০৬ সালে হৃদরোগের বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি-সিএজি, পিটিসিএ, পিপিএমসি, পিপিএম, সিআরটি, আইসিডি ইত্যাদির সংখ্যা ছিল চার হাজারেরও কম সেখানে ২০১৩ সালে এ সংখ্যা ছিল ৪৬ হাজারেরও বেশি ।
এমইউ/এসকেডি/এসএইচএস