বাসে ছাত্রীর শ্লীলতাহানি: ৯ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন
রাজধানীর বাড্ডায় তুরাগ পরিবহনের বাসে বেসরকারি উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির ঘটনায় গ্রেফতারকৃত বাসের চালক, হেলপার ও কন্ডাকটরের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানবন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা।
শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এ মানববন্ধনের আয়োজন করে বেসরকারি উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা সরকারের বিচার বিভাগের প্রতি ৯ দাবি উত্থাপন করেন।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনায় জড়িত বাসের চালক, হেলপার ও কন্ডাকটরকে শুধু গ্রেফতার করলেই হবে না; দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, যাতে করে আর কোনো ছাত্রীর সাথে নিপীড়নমূলক আচরণ করার সাহস কেউ না পায়।
মানববন্ধন থেকে উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের পক্ষে পারভেজ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, গত ২১ এপ্রিল উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়েরর সিএসই বিভাগের ছাত্রীকে বাসে ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনায় আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করেছি। আমাদের আন্দোলনে পুলিশ ও উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। পুলিশ ভালো সহযোগিতা করেছে।
পারভেজ বলেন, ‘আমাদের দাবি ছিল বাসে যৌন হয়রানির সঙ্গে জড়িত তুরাগ পরিবহনের বাসচালক, হেলপার ও কন্ডাকটরকে দ্রুত খুঁজে বের করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা এবং শাস্তি নিশ্চিত করা। অপরাধীরা গ্রেফতার হওয়ায় আমরা সন্তুষ্ট। তবে শাস্তি নিশ্চিত হওয়া এখন জরুরি।
শিক্ষার্থীদের উত্থাপিত ৯ দফা দাবিসমূহ
১. চলন্তবাসে ছাত্রী নির্যাতন ও শ্লীলতাহানির ঘটনায় গ্রেফতারকৃত তিন অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা।
২. দ্রুত বিচারের স্বার্থে দায়ের করা মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে প্রেরণ।
৩. এ ধরনের ঘটনায় কোনো আইনজীবী যেন অপরাধীদের পক্ষে না লড়েন সেজন্য আইনি সহায়তা বন্ধ করা।
৪. শুধু আইন করলেই হবে না, নিপীড়ন বন্ধে আইন অনুযায়ী সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি বাড়ানো।
৫. পরিবহনে চালক, হেলপার ও কন্ডাকটর নিয়োগের পর তাদের পরিচয়পত্র ও অঙ্গীকারনামা মালিক সমিতি ও মালিকদের কাছে থাকতে হবে।
৬. পরবর্তীতে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে তার দায় বাস মালিক সমিতিকে নিতে হবে।
৭. মাদকের সাথে জড়িত কোনো মালিক, চালক, হেলপার, কর্মকর্তা-কর্মকারী যেন পরিবহন সমিতির কোনো কাজে যুক্ত না থাকে সে ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা
বাহিনীকে সজাগ থাকতে হবে।
৮. আদালতের প্রতি অনুরোধ, অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। অপরাধীদের শাস্তি না হলে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
৯. শাস্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সাংবাদিক সমাজকে নিপীড়ন বিরোধী ভূমিকায় লেখনীর অনুরোধ।
প্রসঙ্গত, ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী শনিবার দুপুরে উত্তরা ৬নং সেক্টরে উত্তরা ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে আসার জন্য উত্তর বাড্ডা এলাকা থেকে তুরাগ পরিবহনের একটি বাসে উঠেন। এ সময় বাসে যাত্রী ছিল মাত্র ৭-৮ জন। এ সময় নাটকীয়ভাবে পরবর্তী স্টপেজগুলোতে বাস সামনে যাবে না বলে যাত্রীদেরকে নামাতে থাকে এবং নতুন কোনো যাত্রী উঠানো বন্ধ রাখে।
ওই ছাত্রী আশঙ্কা ও সন্দেহবশত বাস থেকে নামার চেষ্টা করলে বাসের হেলপার দরজাবন্ধ করে দেয়। কন্ডাকটর তার হাত ধরে টানাটানি শুরু করে। বাসের কন্ডাকটর-হেলপারের সঙ্গে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে চলন্ত গাড়ি থেকে লাফিয়ে বেড়িয়ে আসেন। এরপর অন্য বাসে চড়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফিরে কর্তৃপক্ষ ও সহপাঠীদের বিষয়টি জানান।
পরবর্তীতে সহপাঠীরা ওই বাসটি আটক ও হেলপার-কন্ডাকটরকে আটকের দাবিতে রাস্তায় মানববন্ধন করে। এ সময় বিক্ষুদ্ধ ছাত্ররা তুরাগ পরিবহনের অর্ধশত বাস আটকে চাবি নিয়ে নেয়।
পরে ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার ঘটনায় অজ্ঞাতনামা তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ভুক্তভোগী ছাত্রীর স্বামী জহুরুল ইসলাম বাদি হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে ১০/৩০ ধারায় ওই মামলা দায়ের করেন। মামলায় তুরাগ পরিবহনের ওই বাসের অজ্ঞাত চালক, হেলপারসহ তিনজনকে আসামি করা হয়। মামলা নং ২৬। ওই মামলার পরদিনই সায়েদবাদ থেকে তিন আসামিকে গ্রেফতার করে গুলশান থানা পুলিশ।
জেইউ/এসআর/এমএস