ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

কার্ড জালিয়াতি চক্রের মূল হোতা শরিফুল ৪ দিনের রিমান্ডে

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৫:০৯ পিএম, ২৫ এপ্রিল ২০১৮

সম্প্রতি সংঘটিত ৫টি ব্যাংকের কার্ড জালিয়াতি চক্রের মূল হোতা শরিফুল ইসলামের (৩৩) চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

বুধবার তাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এ সময় মিরপুর থানার দায়ের করা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা সাইবার পুলিশের উপ-পরিদর্শক এএইম এম ফজলে রাবী। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম ফাহাদ বিন আমিন চৌধুরী চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

মিরপুর থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক ইউসুফ হোসেন বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন।

সম্প্রতি ৫টি ব্যাংকের কার্ড জালিয়াতি করে অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর মিরপুর থেকে শরিফুল ইসলামকে (৩৩) গ্রেফতার করে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিট।

এ সময় তার কাছ থেকে একটি ল্যাপটপ, বিভিন্ন ব্যাংকের ১ হাজার ৪০০টি ক্লোন কার্ড, একটি ম্যাগনেটিক স্ট্রিপ কার্ড রিডার ও রাইটার, তিনটি পজ মেশিন, গ্রাহকদের তথ্য চুরিতে ব্যবহৃত সচল ডিজিটাল হাতঘড়ি, দুটি মিনি কার্ডরিডার ডিভাইস, পাসপোর্ট ১৪টি, ৮টি মোবাইল ফোন, ডাচ বাংলা ব্যাংকের নেক্সাস ক্রেডিট কার্ড একটি ও ৩টি এনআইডি কার্ড উদ্ধার করা হয়।

বুধবার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইমের বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) মোল্লা নজরুল ইসলাম বলেন, হাত ঘড়িতে সংযুক্ত বিশেষ মিনি কার্ড রিডারের মাধ্যমে ব্যাংক গ্রাহকদের এটিএম কার্ডের অভ্যন্তরীণ তথ্য স্ক্যান করতো শরিফুল ইসলাম (৩৩)। এটিএম বুথে কার্ড ব্যবহারের সময় গ্রাহক যখন পিন নাম্বার দিতো তখন কৌশলে সেটিও টুকে নিয়ে বিলের রি-প্রিন্ট দিয়ে ওই কপির পেছনে লিখে রাখতো সে। বুথের সিসিটিভি ক্যামেরায় যেন ধরা না পড়ে সেজন্য প্রতারক শরিফুল মাথায় পরচুল এবং চোখে চশমা ব্যবহার করতো।

সুপারশপ স্বপ্নের কর্মী হলেও জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ উপার্জন ছিল মূল পেশা। অবৈধভাবে অর্জিত টাকায় কেনা টয়োটা এলিয়ন মডেলের গাড়ি ব্যবহার করতো সে। তার ব্যাংক একাউন্ট পর্যালোচনা করে এ পর্যন্ত কয়েক কোটি টাকার সন্ধান পেয়েছে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিট।

মোল্লা নজরুল ইসলাম বলেন, গত মাসের (মার্চ-২০১৮) দ্বিতীয় সপ্তাহে ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ইবিএল, ইউসিবিএল ও ব্যাংক এশিয়ার কার্ড জালিয়াতির ঘটনা ঘটে।

ওই ঘটনার তদন্ত শুরু করে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিট। তদন্তে জানা গেছে, ব্যাংকের গ্রাহকরা যখন বিভিন্ন সুপার শপ ও ডিপার্টমেন্টাল স্টোর থেকে পণ্য ক্রয়ের পর কার্ড পাঞ্চ করার সময় একটি চক্র সুকৌশলে গ্রাহকদের তথ্য চুরি করে ক্লোন কার্ড তৈরি করে এটিএম বুথ থেকে টাকা চুরি করে নিচ্ছে। ওই ঘটনায় মূল হোতা শরিফুলকে মিরপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়।

তিনি বলেন, প্রতারক শরিফুল ইসলাম সুপারশপ স্বপ্নের বনানী শাখায় কাজ করতো। নিজের হাত ঘড়িতে থাকা বিশেষ স্ক্যানিং ডিভাইজের মাধ্যমে সে গ্রাহকদের এটিএম কার্ডের তথ্য চুরি করতো।

তিনি বলেন, এরপর বাসায় গিয়ে তার ল্যাপটপ এবং ডিভাইসের মাধ্যমে কাস্টমারের তথ্যাবলি ভার্জিন কার্ড বা খালি কার্ডে স্থাপন করে ক্লোন এটিএম কার্ড বানাতো। পরে যে কোনো এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলে নিতো। বুথে টাকা তোলার সময় সিসি ক্যামেরায় যাতে তাকে চেনা না যায় সে জন্য প্রতারক শরিফুল পরচুলা এবং চশমা ব্যবহার করতেন।

তিনি বলেন, স্বপ্নের চাকরি করলেও তার মূল পেশা ছিল ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি। এই জালিয়াতি মাধ্যমে অর্জিত অবৈধ টাকায় সে বিলাসবহুল জীবন-যাপন করতো। সে ব্যক্তিগত চলাচলের জন্য টয়োটা এলিয়ন মডেলে গাড়ি ব্যবহার করতো। তার ব্যাংক একাউন্ট পর্যালোচনা করে এ পর্যন্ত কয়েক কোটি টাকার সন্ধান পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং মামলার প্রস্তুতি চলছে।

মোল্লা নজরুর ইসলাম বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, প্রতারক শরিফুল ইসলাম মেহেরপুরের গাঙনী উপজেলার হেমায়েতপুর গ্রামের ইয়াজ উদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে। মেহেরপুর হাট বোয়ালীয়া উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০০১ সালে এসএসসি এবং গাঙনী ডিগ্রি কলেজ থেতে ২০০৩ সালে এইচএসসি পাস করেন। পরে রাশিয়ার পিপলস ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটিতে মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে তিন বছর মেয়াদি ডিগ্রি নিতে যান।

তিনি বলেন, শরিফুল ২০১০ সালে বাংলাদেশে ফেরত আসেন। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময় রাশিয়ান রুমমেট ইভানোভিচের কাছ থেকে ক্রেডিট কার্ড প্রতারণার কৌশল শেখেন শরিফুল। দেশে আসার পরপরই তিনি কার্ড জালিয়াতি শুরু করেন। ২০১৩ সালে এ সংক্রান্ত দুটি মামলায় প্রতারক শরিফুল ১৮ মাসের হাজতবাস করেন। এরপর সে কিছুদিন স্টুডেন্ট কন্সালটেন্সি ফার্ম খুলে, সেখানে তেমন সুবিধা করতে না পেরে রুমমেটের কাছ থেকে শেখা কৌশল আবারও কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নেন।

জেএ/এমবিআর/জেআইএম

আরও পড়ুন