টাকার অভাবে চিকিৎসা হয়নি : বুকভরা আর্তনাদ ভাইয়ের
‘তিন দিন ধরেই কোনো ডাক্তারে চিকিৎসা করছে না। এহানে অানছি কাইল রাত্রে, এহানে ওরা কইল চিকিৎসা কইরবো! কিন্তুু ওরাও টাকার জন্য চিকিৎসা করছে না। ওরা কইল এহানে চিকিৎসা করতে ঘণ্টায় ২০/৩০ হাজার টাকা লাইগবো, অহন ভাই আমরা হইলাম গরিব, আমার বাবা এত্তো টাকা দিবো কইথ্যাকা...! তাই ভাইয়ের চিকিৎসা হয়নি...!’
সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জরুরি বিভাগের পাশে ফ্লোরে বসে ভাই হারানোর শোকে অার্তনাদ করছিলেন জুয়েল নামের এক তরুণ। এমন বুকভরা অার্তনাদ দেখে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে অাসা দু-একজন রোগীর স্বজনরা বারবার থমকে দাঁড়াচ্ছিল। সবাই শোকার্ত নয়নে তাকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করছিলেন।
কিন্তুু তার অশ্রুর নোনা জল অার অসহায়ত্বের চাহনি দেখে উপস্থিত সবাই মুহূর্তেই শোকার্ত হয়ে পড়েন। জুয়েল কান্না জড়িত কণ্ঠে বারবার বলছিলেন, টাকার অভাবে তার ভাইকে বাঁচাতে পারেনি। এমন অাকুতি উপস্থিত সবার মাঝে সৃষ্টি করে চরম দীর্ঘশ্বাস। সেখানে দাঁড়িয়ে কেউ কেউ বলছিলেন, মানুষ দিন দিন নিষ্ঠুর হয়ে যাচ্ছে। টাকার জন্য একজন চিকিৎসকের সামনে একজন অসহায় মানুষ কিভাবে মারা যায়!
জুয়েল বুক ভরা বেদনার গল্প যখন এ প্রতিবেদকের কাছে বর্ণনা করছিলেন, তখন উপস্থিত অনেকের চোখ ছলছল করছিল। সে জাগো নিউজকে জানান, তারা অনেক গরিব। ছোটবেলা থেকে কৃষক বাবা অাব্দুল শহিদ, তিন ভাই ও দুই বোনকে লালন-পালন করেন। কিন্তুু বড় ভাই সাঈদ যখন একটু বড় হলেন, তখন বিভিন্ন জায়গায় কাজকর্ম করেন। এদিকে বাবাও বৃদ্ধ হওয়ায় তেমন কোনো কাজকর্ম করতে পারছিলেন না। তাই পরিবারের ভরসা ছিলেন ভাই অাবু সাঈদ। তার উপার্জিত অায়ে চলতো পুরো পরিবার। এভাবেই তাদের সংসার চলে যাচ্ছিল দুবেলা দুমুঠো ডাল-ভাতে।
গত ১৮ এপ্রিল বিকেলে গাজীপুরের চৌরাস্তায় সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত হন জুয়েলের বড় ভাই অাবু সাঈদ (৩৫)। ভাইয়ের মৃত্যুতে এখন চারদিকে অন্ধকার দেখতে পাচ্ছে পুরো পরিবারটি। কারণ তাদের পাশে দাঁড়ানোর যে কেউ নেই, এমন দুঃচিন্তায় বারবার অার্তনাদ করছেন জুয়েল।
জুয়েল জানায়, তার ভাই গাজীপুরে সালনা বিস্কুট ফ্যাক্টরি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের বিস্কুট ভ্যানগাড়ি করে সরবরাহ করতো। ওই দিন সকালে এ কাজে বের হয়েছিল সে। কিন্তুু সন্ধ্যায় খবর পায়, ভাইকে গুরুত্বর অাহত অবস্থায় গাজীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কিভাবে দুর্ঘটনা ঘটলো জানে না কেউ। দুর্ঘটনায় মস্তিষ্কে মারাত্মক অাঘাত পান। তাই চিকিৎসার জন্য প্রায় ৬০ হাজার টাকা প্রয়োজন। এতো টাকা দিতে পারবে না বলায় ভাইকে ময়মনসিংহ সরকারি হাসপাতালে পাঠায় তারা। সেখানেও এতো টাকা লাগবে বলে জানানো হয়।
তিনি আরও জানান, নিরুপায় হয়ে ভাইকে ২২ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসি। এখানে ভর্তির পর দিন মারা যান ভাই। জুয়েলের অভিযোগ, এখানে অানার পর চিকিৎসকরা বলেছেন, চিকিৎসার জন্য প্রতি ঘণ্টায় খরচ হবে ২০-৩০ হাজার টাকা। গরিব হওয়ায় এতো টাকা জোগাড় করতে না পারায় বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন তার ভাই। চিকিৎসকরা বলছেন, চিকিৎসার ক্ষেত্রে ধনী-গরিব পার্থক্য খোঁজেন না। চিকিৎসার সময় তাদের দায়িত্ব রোগীকে সুস্থ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া।
নিহত সাঈদের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার রামসেনা গ্রামে। তার ৬ বছরের একটি কন্যা সন্তানও রয়েছে। স্ত্রী ও বাবা-মা এবং ভাই-বোনকে নিয়ে একসঙ্গে থাকতেন।
এসএইচ/জেএইচ/জেআইএম