৬ দফা দাবিতে উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আল্টিমেটাম
উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনায় জড়িত তুরাগ পরিবহ বাসের চালক, হেলপার ও কন্টাক্টরকে গ্রেফতারে ১৬ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি ৬ দফা দাবি জানিয়েছেন তারা।
শিক্ষার্থীরা বলেছেন, মঙ্গলবার (২৪ এপ্রিল) দুপুর ১২টার মধ্যে জড়িত চালক, হেলপার ও কন্টাক্টরকে গ্রেফতার করা না হলে ফের কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে।
সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টায় উত্তরাস্থ ‘উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়’ সংলগ্ন সড়কে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের পক্ষে কথা বলেন পারভেজ হোসেন।
তিনি বলেন, গত ২১ এপ্রিল উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে বাসে ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনায় আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছি। আন্দোলনে পুলিশ ও উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একাত্মতা প্রকাশ এবং পুলিশ ভালো সহযোগিতা করেছে। তবে দুঃখজনক এখন অপরাধীদের কেউ গ্রেফতার হয়নি।
পারভেজ বলেন, বাসে যৌন হয়রানির সঙ্গে জড়িত তুরাগ পরিবহনের চালক, হেলপার ও কন্টাক্টরকে দ্রুত খুঁজে বের করে পুলিশে সোপর্দ করতে হবে। এ জন্য আমরা মালিকপক্ষকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত সময় দিয়েছিলাম। বলেছিলাম তাদের আটক না করা পর্যন্ত তুরাগ পরিবহনের কোনো বাস সড়কে চলাচল করতে দেখা গেলে সেগুলো আটকে দেয়া হবে। তাই যেসব বাস আটক করা হয়েছিল তা ছাড়া হয়নি।
তিনি বলেন, নতুন কর্মসূচী অনুযায়ী মঙ্গলবার দুপুর ১২টার মধ্যে জড়িত তুরাগ পরিবহনের চালক, হেলপার ও কন্টাক্টরকে গ্রেফতার করা না হলে ফের আন্দোলন শুরু হবে। এতে কোনো ক্ষতি হলে সে দায় শিক্ষার্থী কিংবা উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নেবে না।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হচ্ছে-
১. মঙ্গলবার (২৪ এপ্রিল) দুপুর ১২টার মধ্যে অপরাধীদের গ্রেফতার
২. শুধু গ্রেফতার করলেই হবে না, অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে
৩. প্রশাসন ও মালিকদের কাছে পরিবহন কর্মচারীদের পরিচয়পত্র থাকতে হবে
৪. মাদকের সঙ্গে জড়িত কোনো মালিক, চালক, হেলপার, কর্মকর্তা কর্মকারী যেন পরিবহন সমিতির কোনো কাজে যুক্ত না থাকে সে ব্যাপারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সজাগ থাকতে হবে
৫. পরবর্তিতে এমন ঘটনা আর ঘটবে না মর্মে পরিবহন মালিককে অঙ্গিকার নামায় স্বাক্ষর করতে হবে এবং
৬. বিআরটিএ এর কাছে দাবি, চালক গাড়ীর লাইসেন্স ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি যেন রাস্তায় চলতে না পারে তা সুনিশ্চিত করতে হবে।
উল্লেখ্য, ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী শনিবার দুপুরে ক্যাম্পাসে আসার জন্য উত্তর বাড্ডা এলাকা থেকে তুরাগ পরিবহনের একটি বাসে উঠেন। এ সময় বাসে যাত্রী ছিল মাত্র ৭-৮ জন। নাটকীয়ভাবে পরবর্তী স্টপেজগুলোতে বাস সামনে যাবে না বলে যাত্রীদেরকে নামাতে থাকে এবং নতুন কোনো যাত্রী উঠানো বন্ধ রাখে।
ওই ছাত্রী আশঙ্খা ও সন্দেহবশত: বাস থেকে নামার চেষ্টা করলে বাসের হেলপার দরজা বন্ধ করে দেয়। কনট্রাক্টর তার হাত ধরে টানাটানি শুরু করে। বাসের কন্টাক্টর হেলপারের সঙ্গে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে চলন্ত গাড়ি থেকে লাফিয়ে বেরিয়ে আসেন। এরপর অন্য বাসে চড়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গিয়ে কর্তৃপক্ষ ও সহপাঠীদের বিষয়টি জানান।
পরবর্তীতে সহপাঠীরা ওই বাসটি আটক ও হেলপার কনট্রাক্টরকে আটকের দাবিতে রাস্তায় মানববন্ধন করে। এ সময় বিক্ষুদ্ধ ছাত্ররা তুরাগ পরিবহনের অর্ধশত বাস আটকে চাবি নিয়ে নেয়।
অন্যদিকে রাজধানীর বাড্ডা রোডে তুরাগ পরিবহনের বাসে ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনায় অজ্ঞাতনামা তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
রোববার বিকেলে ভুক্তভোগী ছাত্রীর স্বামী জহুরুল ইসলাম বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে ১০/৩০ ধারায় ওই মামলা করেন। মামলায় তুরাগ পরিবহনের ওই বাসের অজ্ঞাত চালক, হেলপারসহ তিনজনকে আসামী করা হয়েছে। মামলা নং ২৬।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে গুলশান থানার ওসি আবু বকর সিদ্দীক জাগো নিউজকে জানান, গতকালই মামলা নেয়া হয়েছে। আসামীদের সনাক্তের চেষ্টা চলছে।
জেইউ/এএইচ/এমএস