ঘণ্টায় ১৩ রোগী পঙ্গু হাসপাতালে
রাজধানীসহ সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনাসহ নানা কারণে জনজীবন বিপন্ন হয়। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও বাস, ট্রাক, প্রাইভেটকার কিংবা মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নারী, পুরুষ ও শিশু নির্বিশেষে হতাহত হচ্ছে। কেউ ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারাচ্ছেন, কেউবা হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই কিংবা উপযুক্ত সুচিকিৎসার অভাবে। আবার অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করছেন।
সম্প্রতি রাজধানীর কাওরানবাজারে দুই বাসের চাপায় তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজীবের হাত বিচ্ছিন্ন ও মাথায় আঘাত পেয়ে মৃত্যু, গোপালগঞ্জে ট্রাকচাপায় বাসযাত্রী যুবকের হাত বিচ্ছিন্ন ও সর্বশেষ শুক্রবার রাতে রোগী দেখতে গিয়ে এক নার্স ও মহাখালীতে রাস্তা পারাপার হতে গিয়ে বাসচাপায় গৃহপরিচারিকার এক পা কেটে ফেলার ঘটনায় সাধারণ মানুষ শঙ্কিত। সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন, রাস্তায় মানুষের চলাচলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব কার?
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত এক বছরে (২০১৭ সাল) শুধুমাত্র রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালের আউটডোর ও জরুরি বিভাগে মোট এক লাখ ১৮ হাজার ৩৭৬ রোগী চিকিৎসা নিতে এসেছেন। এদের মধ্যে আউটডোরে এক লাখ তিন হাজার ২৩৬ জন ও জরুরি বিভাগে ১৫ হাজার ১৪০ জন চিকিৎসা নেন। সে হিসাবে পঙ্গু হাসপাতালে ঘণ্টায় সড়কসহ বিভিন্ন দুর্ঘটনায় গড়ে ১৩ জন রোগী এসেছে।
২০১৭ সালে পঙ্গু হাসপাতালে প্রায় সাড়ে আট হাজার রোগী ভর্তি হয়। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১৮৫ জনের। তাদের মধ্যে ১৩৮ পুরুষ ও ৪৭ নারী। স্বাস্থ্য অধিদফতর প্রকাশিত লোকাল হেলথ বুলেটিন সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রাপ্ত পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দুর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে শতকরা ৯০ ভাগই কর্মক্ষম নারী-পুরুষ। তাদের অনেকের আয়-রোজগারের ওপর সংসার নির্ভরশীল। দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হয়ে তাদের মৃত্যুজনিত কারণে বহু পরিবারে অভাব-অনটন নেমে আসে। হাত, পা কিংবা অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ভেঙে গেলে তাদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা প্রয়োজন হয়। চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী কিংবা অন্য যে পেশাই থাকুক না কেন এ সময় তাদের আয়-রোজগার বন্ধ থাকে। কেউ কেউ চিকিৎসা করে প্রাণে বাঁচলেও পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়। দুর্ঘটনার আগের সেই কাজের গতি আর ফিরে পান না।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের অর্থোপেডিকস বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. শামসুজ্জামান বলেন, ঢামেক হাসপাতালেও সড়ক ও রেল দুর্ঘটনার রোগীর সংখ্যা আগের তুলনায় বেড়েছে।
তিনি বলেন, হাত ও পা কেটে গেলে অস্ত্রোপচার করে সুস্থ করে তোলা সম্ভব। কিন্তু সম্প্রতি দুর্ঘটনায় যেভাবে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেঁতলে আসছে তাতে করে সেই অঙ্গ আর ঠিক করা সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি বলেন, দুর্ঘটনার পর রোগীর প্রাথমিক সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে তিনি জেলা সদর কিংবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সুচিকিৎসার অভাব লক্ষ্য করেন বলে জানান।
সড়ক ও রেলসহ বিভিন্ন দুর্ঘটনারোধে চালকদের বেশি দোষত্রুটি থাকলেও পাশাপাশি সাধারণ মানুষও দায়ী বলে তিনি মনে করেন। মানুষ সচেতন হয়ে রাস্তা পারাপার হলে দুর্ঘটনা কিছুটা হলেও কমবে।
এমইউ/বিএ/আরআইপি