এমপিদের প্রচারে সুযোগ দিতে বিধি সংশোধনের উদ্যোগ!
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এমপিদের প্রচারে নামার দাবি করার এক সপ্তাহের মধ্যে সেই সুযোগ করে দেয়ার পথে হাঁটছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ জন্য সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আচরণবিধি সংশোধনের উদ্যোগ কথা ভাবছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।
তবে এই উদ্যোগের বিরোধিতা করেছে বিএনপি। আর বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সবার মতামত না নিয়ে এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিলে প্রশ্নের সম্মুখীন হবে ইসি।
বৃহস্পতিবার বিকেলে নির্বাচন ভবনে সিটি কর্পোরেশন (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা ২০১৬’ সংশোধন নিয়ে কমিশন সভা হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে সভায় নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, মো. রফিকুল ইসলাম, বেগম কবিতা খানম, বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী ও নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ উপস্থিত ছিলেন।
সভা শেষে হেলালুদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, অনেক সংসদ সদস্য সিটি এলাকায় বসবাস করেন। নির্বাচনের তফসিল হলে তাদের যাওয়া-আসা অনেকটা বন্ধ হয়ে যায়। আইনে বলা আছে, শুধুমাত্র ভোটের দিন ভোট দিতে পারবেন তারা। অন্য সময় যেতে পারবেন না। যার ফলে নিজের এলাকার বাইরে থাকতে হয় তাদের। সেদিক বিবেচনা করে সভায় আলোচনা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের চাপে এই উদ্যোগ কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, চাপে না। যেকোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনের অংশীজন। তাদের নিয়ে কাজ করতে হয়। তাদের নিয়ে পরামর্শ করে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সুবিধা-অসুবিধাগুলো আমরা বিবেচনা করি।
তিনি বলেন, কবিতা খানমের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনাররা একটা কমিটি গঠন করেছেন। আইন ও বিধিমালা সংস্কারে যে কমিটি আছে ওই কমিটি ইসুটি পর্যালোচনা করে একটা রিপোর্ট দেবেন। এ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তফসিল ঘোষণার পর এই উদ্যোগ কেন? এ প্রশ্নর জবাবে সচিব বলেন, আচরণবিধি মাঝেমধ্যে আপডেট করা লাগে। আগে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হতো না, এখন দলীয় প্রতীকে হচ্ছে। তখন এক ধরনের প্রেক্ষাপট, এখন আরেক ধরনের প্রেক্ষাপট। স্বাভাবিকভাবে এমপিরা এলাকায় যেতে পারেন না। এটা আপডেট করার জন্য আলোচনা হয়েছে।
বৈঠকে উপস্থিত ইসির এক কর্মকর্তা জানান, বেশিরভাগ কমিশনার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে এমপির প্রচারণার পক্ষে মত দিলেও একজন সদস্য সরাসরি এর বিরোধিতা করেন। তিনি মতামত দেন যে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আচরণবিধি পরিবর্তন করে প্রচারণায় এমপিদের সুযোগ দিলে বিতর্ক তৈরি হবে। কমিশনের ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। এ জন্য বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য আইন ও বিধি সংস্কার কমিটির কাছে পাঠিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ওই কমিটিকে দ্রুততার সঙ্গে বিষয়টি পর্যালোচনা করে কমিশনে পেশ করার কথা বলা হয়। এ সময় আচরণবিধিতে অন্য কোনো সমস্যা আছে কিনা, সেটাও খতিয়ে দেখতে বলা হয়।
তবে সংসদের বাইরে থাকা দেশের বৃহত্তর দল বিএনপি ইসির এ সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ করেছে। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান রাতে টেলিফোনে জাগো নিউজকে বলেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড পথে অন্তরায়। আওয়ামী নির্বাচনে বেশি সুবিধা নেয়ার জন্য এই ধরনের আবদার করেছে। আর তাবেদার ইসি তা পূরণ করার কাজে লেগে গেছে।
এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আচরণবিধি সংশোধন করে এমপিদের প্রচারণার সুযোগ দিলে প্রশ্নের সম্মুখীন হবে ইসি। এটা করা ঠিক হবে না। এটা বাস্তবায়ন করার আগে অবশ্যই সবার মতামত নিতে হবে। আস্থার সংকট আরও প্রকট হবে।
প্রসঙ্গত, গত ১২ এপিল স্থানীয় সরকারের সকল নির্বাচনে এমপিদের প্রচারণা ও স্বাভাবিক রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ রেখে আরচণবিধির পরিবর্তন চেয়েছিল ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। আগারগাঁওস্থ নির্বাচন ভবনে ইসির সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম। আগামী ১৫ মে খুলনা ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। আর এই দুই নির্বাচন সামনে রেখে এই দাবি জানান তারা। আর ক্ষমতাসীনদের সেই দাবিই পূরণ করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন।
এইচএস/বিএ