ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিয়ে যা বললেন বিশেষজ্ঞরা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৮:০৬ পিএম, ১৯ এপ্রিল ২০১৮

প্রবাসীদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়ার পাশাপাশি তাদেরকে ভোট দেয়ার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া যাদের মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) দেয়া হয়েছে তাদের প্রথমে জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়া ও ভোটার করা হোক।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে সেমিনার উদ্বোধনকালে সিইসি এ কথা বলেন। প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান ও ভোটাধিকার প্রয়োগ শীর্ষক এ সেমিনারের আয়োজন করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ১২০টি দেশের প্রবাসীদের ভোট দেয়ার ব্যবস্থা আছে। এর মধ্যে এশিয়ার আছে ২০টি দেশ। তিনি বলেন, প্রবাসীদের ভোট দেয়ার ব্যাপারে ২০০৮ সালে আইনি কাঠামো করা হয়েছিল। কিন্তু এরপর ৫ বছর এটা নিয়ে আর কাজ করা হয়নি।

তাই আমি নির্বাচন কমিশনকে বলবো, ‘প্রবাসীদের কীভাবে ভোটার করা যায় সেজন্য একটি সেল গঠন করা। সাবেক কূটনীতিক শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, প্রবাসীদের প্রথমে জাতীয় পরিচয়পত্র দিতে হবে। এরপর দেখতে হবে কীভাবে তারা ভোট দিতে পারে। কারণ জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় অনেক প্রবাসীরা জমি ক্রয়-বিক্রয়সহ বিভিন্ন সমস্যায় পড়ে। তারা দেশে এসে বিভিন্ন সেবা পেতে হয়রানির শিকার হয়।

প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমান বলেন, দ্বৈত নাগরিকদের ভোট দেয়া সংবিধান অনুমতি দেয়নি। এজন্য এটা আলোচনা না করাই ভালো। প্রবাসীদের ভোট দেয়ার অধিকার, তাদের কীভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করা যায় সেটা আলোচনা করা দরকার।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মহাপরিচালক কনস্যুলার নাহিদা রহমান সুমনা জানান, প্রবাসীদের সংখ্যা এখন দেড় কোটি। তারা দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখছে। তাদের ভোটের অধিকার দেয়া আমাদের দায়িত্ব। তবে দ্বৈত নাগরিকদের নিয়ে ভাবতে হবে।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নির্বাহী পরিচালক ড. ইয়ামিন আকবরি বলেন, এক কোটি ১৫ লক্ষ আমাদের প্রবাসী। এর ৩০ শতাংশ রয়েছে সৌদি আরবে। দেখা যায় অনেক প্রবাসীদের জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকার কারণে তাদের সেবা দিতে সমস্যা হচ্ছে। তারা ব্যাংকিং সুবিধা, ড্রাইভিং লাইসেন্স না পাওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যায় পড়ছে। অনেক সময় প্রবাসীরা দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয় সে সময় তাদের সহায়তা করতেও আমাদের সমস্যা হয়। বিশেষ করে যারা ২০০০ সালের আগে বিদেশে গিয়েছে তারা। কারণ তাদের বেশিরভাগেরই জাতীয় পরিচয়পত্র নেই।

যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের ডেপুটি মিশন প্রধান মাহবুব হাসান সালেহ বলেন, ডুয়েল সিটিজেনদের যেহেতু নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অধিকার নেই। তাই তিনি ভোটারও হতে পারবে না। প্রথমে যারা দ্বৈত নাগরিক নয় তাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা হোক।

সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ বলেন, প্রবাসীদের প্রথমে প্রয়োজন তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র। এটা কবে দেবেন এর জন্য একটা সময় নির্ধারণ করুন। আমি দেখেছি এনআইডি না থাকার কারণে প্রবাসীদের দেশে টাকা পাঠাতেও সমস্যা হচ্ছে। তারা দেশে এসেও পদে পদে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।

Probashi-2

মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, প্রবাসীদের এনআইডি যেন দেয়া হয় সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশন যেন দ্রুত পদক্ষেপ নেন। যাদের এমআরপি আছে যাদের পরিচয়পত্র দেয়ার প্রস্তাব করেন তিনি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, প্রবাসীদের ভোট দেয়ার সুযোগ তৈরি করতে পারিনি। আমরা কিন্তু প্রবাসীদের টাকা কীভাবে আনবো সেই পদ্ধতি ভালোভাবেই চালু করেছি। কিন্তু আমাদের উচিৎ ছিল টাকা আনার সঙ্গে সঙ্গে তারা যেন ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা করার।

জাতীয় পার্টির (জাপা) কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, পোস্টাল ভোট পদ্ধতিটা প্রথমে আমরা প্রয়োগ করে দেখতে পারি।

প্রবাসী ভোটারধিকারের বৈশ্বিক পরিস্থিতি :

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক সাইদুল ইসলাম সেমিনারে কি নোট পেপারে বলেন, বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের জন্য নিবন্ধন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে দূতাবাসে একটি কক্ষে লোকাল সার্ভার স্থাপন; প্রবাসীদের সংখ্যানুপাতে রেজিস্ট্রেশন টিম তৈরি করে কাজ এগিয়ে নেয়া এবং নিবন্ধন কাজের জন্য যন্ত্রপাতি ও দক্ষ আইটি কর্মকর্তা নিয়োগ করতে হবে।

তিনি বলেন, আলবেনিয়া, কম্বোডিয়া, কিউবা, ইথিওপিয়া, গ্রিস লাইবেরিয়া, উগান্ডাসহ বিভিন্ন দেশে প্রবাসীদের ভোটের বিধান নেই।

ফ্রান্সসহ কয়েকটি দেশ বিদেশে অবস্থানত নাগরিকদের জন্য ভোট চালু করার পর বিলুপ্ত করেছে। দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে ভুটান, ভারত, মালদ্বীপে বিদেশে বসবাসরত নাগরিকদের ভোটের ব্যবস্থা রয়েছে। যুক্তরাজ্যে চালু রয়েছে প্রক্সি ও পোস্টাল ভোট। ১০০ বছর আগে তারা এই ব্যবস্থা চালু করেছে।

অস্ট্রেলিয়ায় ১৯৪৯ সাল থেকে প্রবাসীদের ভোট দেয়ার সুযোগ চালু আছে। বর্তমানে ডাকযোগে ও ব্যক্তিগতভাবে ভোট কেন্দ্রে উপস্তিত হয়ে ভোট দেয়ার বিধান চালু আছে। আফগানিস্তান নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় প্রবাসীদের ভোটের বিধান নেই।

ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা ছাড়াও নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, মো. রফিকুল ইসলাম, বেগম কবিতা খানম, বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

এইচএস/এমআরএম/জেআইএম

আরও পড়ুন