সংসদে ট্যাবলেট পিসি বিতরণে অনিয়ম : তীব্র ক্ষোভ
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের ১৪৫ জন কর্মকর্তার মধ্যে বিতরণের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে ১৪৫টি ট্যাবলেট পিসি দেওয়া হলেও তালিকাভুক্ত অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা এখনো ট্যাব পাননি। আর কর্মস্থলে না থাকা তালিকাভুক্ত ১৬ কর্মকর্তার ট্যাবের কোনো খোঁজ নেই। ট্যাব বিতরণে এই অনিয়মের ঘটনায় সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসন ও কাজের দীর্ঘ সূত্রতা কমানোর লক্ষ্যে টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় আইসিটি ইনফ্রা নেটওয়ার্ক ফর বাংলাদেশ গর্ভমেন্ট পেজ-২ (ইনফু-সরকার) প্রকল্পের আওতায় সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে ২৫ হাজার ট্যাব বিতরণের কর্মসূচি গ্রহণ করে। এই খাত থেকে জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের জন্য ১৪৫টি ট্যাব বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর আগে গত ৮ ফেব্রুয়ারি সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব এ এস এম হুমায়ুন কবীর স্বাক্ষরিত এক চাহিদাপত্রে ১৪৫ জন কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করে তাদের অনুকূলে ১৪৫টি ট্যাব বরাদ্দের অনুরোধ জানানো হয়। গত ৮ জুলাই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ১৪৫টি ট্যাব স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে হস্তান্তর করেন। স্পিকার ওই দিনই সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে ট্যাব বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।
সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের অভিযোগ, এই ট্যাব বিতরণের ব্যাপক অনিয়ম করা হয়েছে। তালিকার নাম বাদ দিয়ে পছন্দের কর্মকর্তাদের এই ট্যাব দেওয়া হয়েছে। ট্যাব পাওয়ার যোগ্য না হলেও অনেকেই তা পেয়েছেন। কেউ কেউ ব্যক্তিগত কাজে ট্যাব ব্যবহার করছেন। এমনকি তালিকায় থাকা এক কর্মকর্তার মৃত্যু, এক কর্মকর্তা পদত্যাগ, দুই কর্মকর্তা শিক্ষা ছুটিতে, তিন কর্মকর্তা অবসরে এবং ৯ কর্মকর্তা বদলি হলেও তাদের ট্যাবগুলো কি হয়েছে সে বিষয়ে সুনির্দ্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।
মন্ত্রণালয় থেকে ১৪৫টি ট্যাব পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন সংসদ সচিবালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অতিরিক্ত সচিব সুলতান মাহমুদ। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, এই সব অনিয়মের অভিযোগ ভিত্তিহীন। তালিকা অনুযায়ী সকলকে ট্যাব বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সংসদ সচিবালয়ের চাহিদা অনুযায়ী ট্যাবগুলো বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী সকল কর্মকর্তা ট্যাব পাবেন এটাই স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে একজনের নামে বরাদ্দকৃত ট্যাব অন্যকে দেওয়ার সুযোগ নেই। ট্যাব বিতরণে অনিয়মের কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত তালিকা ধরে সংসদ সচিবালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে ট্যাব বিতরণ শেষ হয়েছে বলে দাবি করলেও তালিকাভুক্ত অনেকেই ট্যাব পাননি। তাদের মধ্যে রয়েছেন- সংসদ সচিবালয়ের সহকারী পরিচালক মাসুম বিল্লাহ, বেগম ফারজানা আক্তার, মো. জাহিদুল ইসলাম. নীহার মন্ডল, মৌমিতা নাসরাত রুমা, নীলুফার ইয়াসমিন, মো. সাব্বির মাহমুদ, স্বপন কুমার বিশ্বাস, মো. মিজানুর রহমান, মো. ফখরুল আলম, মোহাম্মদ হাছান, মো. এমাদুল হক, এস এম মনিরুল ইসলাম, জয়ন্তী রানী দাস, মো. আলাউদ্দিন, এইচ এম আলী আকবর, ফ ব ম রুহুল আমিন, আবদুল জব্বার, আব্দুল্লাহ শিবলী সাদিক ও এনামুল হক মজুমদার, গ্রন্থাগারিক বেগম জেব-উন নেসা ও শেখ মো. মহিউদ্দিন, গবেষণা ও শিক্ষা অফিসার শাহীনুর আলম ও মো. আলী আকবর, কম্পিউটার প্রোগ্রামার বেগম লুৎফুন নাহার ও নুসরাত শারমিন মৌরি, টিভি প্রকৌশলী মোহাম্মদ সোহেল রানা, সিস্টেম এনালিস্ট মো. আল-আমিন, প্রটোকল অফিসার মো. আমিনুল ইসলাম ও কফিল উদ্দিন মাহমুদ, অ্যাসাইনমেন্ট অফিসার উত্তম অধিকারী এবং সার্জেন্ট অ্যাট আর্মসের অ্যাসিট্যান্ট মো. মঞ্জুরুল হোসাইন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা জানান, গণসংযোগ শাখার কর্মকর্তাদের জন্য ট্যাব জরুরি হলেও এই শাখার পরিচালক ছাড়া কেউ ট্যাব পাননি। অথচ তালিকায় এই শাখার ১০ জনের নাম রয়েছে। তালিকায় না থাকা সত্ত্বেও কেন ট্যাব দেওয়া হয়নি সে বিষয়ে নানা রকম ব্যাখ্যা দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
তালিকাভুক্ত ৬১ জনকে ট্যাব দেওয়া হয়নি দাবি করে সংসদ সচিবালয়ের রিপোর্টিং শাখার এক কর্মকর্তা বলেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার কারণে তালিকায় নাম না থাকলেও অনেকেই ট্যাব পেয়েছেন। কিছু ট্যাব এখনো বিতরণ করা হয়নি। যে কারণে তালিকাভুক্ত অনেকেই বাদ পড়েছেন। আরো ট্যাব আসলে তখন সকলকে দেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্টরা তাদেরকে জানিয়েছেন।
এইচএস/আরএস/আরআইপি