ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

সম্পাদকদের আপত্তি, ‘অনেকাংশই যৌক্তিক’ বললেন আইনমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৪:১৩ পিএম, ১৯ এপ্রিল ২০১৮

প্রস্তাবিত ডিজিটাল সিকিউরিট অ্যাক্টের (ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন) কিছু ধারার বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে জাতীয় দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকদের সংগঠন এডিটরস কাউন্সিল। ‘আপত্তির অনেকাংশই যৌক্তিক’ বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। 

বৃহস্পতিবার এডিটরস কাউন্সিলের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের কাছে এমন মন্তব্য করেন। 

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘ডিজিটাল সিকিউরিট অ্যাক্টের কিছু ধারার বিষয়ে এডিটরস কাউন্সিল আপত্তি জানিয়েছে। সেগুলো তারা আমাদের সামনে পেশ করেছে। আমাদের মধ্যে অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলাপ-আলোচনা হয়েছে। আলোচনা শেষে আমরা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে, যে আপত্তিগুলো আজ তুলে ধরা হলো সেগুলো অনেকাংশেই যৌক্তিক।’

বৈঠকে এডিটরস কাউন্সিলের সেক্রেটারি জেনারেল ও দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেরর ২১, ২৫, ২৮, ৩১, ৩২ ও ৪৩ ধারার বিষয়ে আপত্তি জানান।

তিনি বলেন, ‘প্রস্তাবিত আইনের ২১, ২৫, ২৮, ৩১, ৩২ ও ৪৩ ধারায় আমাদের আপত্তি। আমরা এ ধারাগুলোকে মনে করেছি বাকস্বাধীনতা ও স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থী। বাংলাদেশে যে স্বাধীন সাংবাদিকতা, সেটা নিয়ে আমরা খুবই গর্ববোধ করি। কিন্তু প্রস্তাবিত আইনের সংশ্লিষ্ট ধারাগুলো স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে গভীরভাবে ব্যাহত করবে। এ বিষয়গুলো আমরা মন্ত্রীদের বুঝিয়েছি এবং তারা বিষয়গুলো সানন্দে গ্রহণ করেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আশা করি, যে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনটি প্রণয়ন হবে, সেটা সত্যিকার অর্থে সাইবার ক্রাইমকেই প্রতিহত করবে। সাংবাদিকতার কোনো স্বাধীনতা খর্ব করবে না। আমরা এটা বিশ্বাস করি যে, বাংলাদেশে সত্যিকার অর্থে একটা সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট প্রয়োজন। কেননা এখন যে ধরনের সাইবার ক্রাইম হচ্ছে, সোসাল মিডিয়া, অনিয়ন্ত্রিত অনলাইন মিডিয়া- এগুলো আমাদের দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে। তাই আইনটি হোক, তবে যেন সেটা সুষ্ঠু হয়; আসলেই সেটা যেন তার পারপাস সার্ভ করতে পারে।’

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার আইন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আইনমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মোহাম্মাদ শহিদুল হক, দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম, দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, নিউজ টু ডে'র সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম, নিউ এজের সম্পাদক নুরুল কবির, কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, নয়াদিগন্তের সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন, বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদসহ বেশ কয়েকটি দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক।

বৈঠক শেষে আইনমন্ত্রী আরও বলেন, প্রস্তাবিত আইনটি এখন আইসিটি মিনিস্ট্রি সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে রয়েছে। আগামী ২২ তারিখে এর ওপর সভা অনুষ্ঠিত হবে। ওই সভায় এডিটরস কাউন্সিলকে যেন ডাকা হয়, এ রকম একটা প্রস্তাব থাকবে। ২২ তারিখের পর যেকোনো একটা সময়, একটা নির্ধারিত তারিখে যে আপত্তি বা উদ্বেগ আজ এডিটরস কাউন্সিল জানিয়েছে সেগুলো লিখিত আকারে উনারা স্থায়ী কমিটিকে দেবেন।’

‘সাইবার ক্রাইম নিয়ন্ত্রণে ডিজিটাল অ্যাক্ট করা হয়েছিল। বাক স্বাধীনতা বা স্বাধীন সাংবাদিকতা বন্ধ করার জন্য নয়। সেই ক্ষেত্রে যদি এ আইনের মধ্যে ত্রুটি থেকে থাকে বা ‍দুর্বলতা থাকে সেগুলো যেন অপসারণ করা যায় সেই আলোকে এডিটরস কাউন্সিলের সঙ্গে এ আলোচনা। আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা দুই পক্ষই আশাবাদ ব্যক্ত করতে পারি যে, তাদের (এডিটরস কাউন্সিল) যে উদ্বেগ সেগুলো দূর করতে পারব।’

এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এমন একটা আইন করতে চাই যেটা শুধু গ্রহণযোগ্য নয়, যুগোপযোগী হবে। সেই ক্ষেত্রে টেলিভিশনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বাসার জন্যও সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে প্রস্তাব দেব।’

আইসিটি আইনের বিতর্কিত ৫৭ ধারা বাতিল করে সেই ধারার বিষয়বস্তুগুলো ঘুরেফিরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রাখা হয়েছে- এমন অভিযোগ ছিল সর্বমহলে। গত জানুয়ারি মাসে প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হওয়ার পর এটি ঘিরে বিতর্ক ও সমালোচনা শুরু হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সরকার আপত্তি ওঠা কিছু ধারা বাদ দেয়ার আশ্বাস দেয়। 

কিন্তু গত ৯ এপ্রিল সোমবার জাতীয় সংসদে আইনটি উত্থাপনের পর দেখা যায়, তেমন কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। এমনকি ‘ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তি’ বিষয়ক ৩২ ধারার মতো আরও কঠিন একটি ধারা জুড়ে দেয়া হয়েছে। সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি বিলটিতে আপত্তি জানায়। পরে সেটি চার সপ্তাহের মধ্যে পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়।

প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কয়েকটি ধারা নিয়ে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত বা তাদের প্রতিনিধিরাও আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন, দেশে সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন ও ইউনিয়ন আইনটির কঠোর ও বিতর্কিত কিছু ধারা বাদ দেয়ার দাবি তোলে। এসব দাবি আমলে না নিয়ে মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পাওয়া খসড়াটিই প্রায় হুবহু গত ৯ এপ্রিল জাতীয় সংসদে বিল আকারে উপস্থাপন করা হয়।

বিলটি সংসদে উত্থাপন করেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেন, বিলটি সংসদীয় কমিটিতে গেলে পর্যালোচনা করে সংযোজন-বিয়োজন করার সুযোগ থাকবে। কোনো উপধারা যুক্ত করতে হলে সেটিও স্থায়ী কমিটির মাধ্যমে সংযোজন সম্ভব হবে।

এমইউএইচ/এমএআর/পিআর

আরও পড়ুন