রাজীবের দুই ভাইয়ের শিক্ষার দায়িত্ব নেবে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়
সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেছেন, সড়ক দুর্ঘটনায় সদ্যপ্রয়াত রাজীবের দুই ভাইয়ের শিক্ষার দায়িত্ব নিতে চায় তার মন্ত্রণালয়। এ জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা রাজীবের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করছে।
‘যদি তার পরিবার রাজি হয় তাহলে তাদের মিরপুরের শিশুপল্লীতে রেখে শিক্ষার ব্যবস্থা করা হবে’ বলেন মন্ত্রী।
বুধবার সচিবালয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব খন্দকার আতিয়ার রহমান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
রাশেদ খান মেনন বলেন, রাজীব নামের একটি ছেলে অতি কষ্টে লেখাপড়া করে ছোট দুটি ভাইয়ের লেখাপড়ার খরচ জোগাচ্ছিল। কিন্তু দুটি বাসে সংঘর্ষের কারণে এতিম ছেলেটি (রাজীব) হাত হারায়। সবাই আশা করেছিল অন্তত ছেলেটি বেঁচে যাবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী তার চিকিৎসার দায়িত্বও নিয়েছিলেন। কিন্তু আমরা তাকে রক্ষা করতে পারিনি।
তিনি বলেন, ‘আমরা গণমাধ্যমে জানতে পেরেছি যে, তারা দুটি ভাই অসহায় অবস্থায় আছে। আমরা তাদের খোঁজ নিয়েছি। তারা রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর মীর হাজীরবাগের একটি মাদরাসায় লেখাপড়া করছে। ইতোমধ্যে আমাদের সমাজকল্যাণ অধিদফতরের ডিজি তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। আমরা তাদের পরিবারের নিকট আমাদের প্রস্তাব পাঠিয়েছি। তারা যদি সম্মত হন তাহলে আমাদের যে শিশু পরিবারগুলো রয়েছে, মিরপুরে যে শিশু পরিবার রয়েছে সেখানে তাদের আমরা স্থানান্তরিত করব। শুধুমাত্র এসএসসি নয়, এর পরবর্তী লেখাপড়া চালানোর ক্ষেত্রে আমরা দায়িত্ব নেব। পাশাপাশি আমাদের যে বিভিন্ন ট্রেড রয়েছে যেমন কম্পিউটার, দর্জির কাজসহ হাতের অন্যান্য কাজ, সেখানে তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে পনর্বাসিত করব।’
প্রসঙ্গত, গত ৩ এপ্রিল বিআরটিসির একটি দ্বীতল বাসের পেছনের গেটে দাঁড়িয়ে গন্তব্যে যাচ্ছিলেন তিতুমীর কলেজের স্নাতকের (বাণিজ্য) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রাজীব হোসেন (২১)। তার হাতটি সামান্য বাইরে বেরিয়ে ছিল। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে হঠাৎ পেছন থেকে স্বজন পরিবহনের একটি বাস বিআরটিসি বাসটিকে ওভারটেকের জন্য বাম দিকে গা ঘেঁষে এগিয়ে যায়। এতে দুই বাসের চাপে রাজীবের হাত শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পথচারীরা দ্রুত তাকে পান্থপথের শমরিতা হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু চিকিৎসকরা চেষ্টা করেও বিচ্ছিন্ন হাতটি রাজীবের শরীরে আর জুড়ে দিতে পারেননি।
শমরিতা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর রাজীবকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু সাময়িক উন্নতির পর গত সোমবার থেকে তার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। একপর্যায়ে রাজীবের মস্তিষ্ক অসাড় হয়ে যায়। সেই থেকে আর জ্ঞান ফেরেনি তার।
১৩ দিন পর সোমবার রাত ১২টা ৪০ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে মারা যান রাজীব। মঙ্গলবার দুপুরে জোহর নামাজের পর হাইকোর্ট মসজিদে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
পরে ঢাকা থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে মরদেহ পটুয়াখালীর বাউফলে নেয়া হয়। সেখানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।
তিন ভাইয়ের মধ্যে রাজীব সবার বড়। ছোট দুই ভাই বাপ্পি অষ্টম শ্রেণি এবং হৃদয় ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র।
তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় রাজীব তার মা এবং অষ্টম শ্রেণিতে থাকা অবস্থায় বাবাকে হারান। এরপর বড় খালা জাহানারা বেগম বোনের তিন ছেলেকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। ঢাকায় খালার বাড়িতে থেকেই তিন ভাই লেখাপড়া করে আসছিল। ঢাকার মতিঝিলে খালার বাসায় থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করে স্নাতকে ভর্তি হন রাজীব।
পড়ালেখার ফাঁকে একটি কম্পিউটারের দোকানে কাজ করে নিজের আর দুই ভাইয়ের খরচ চালানোর সংগ্রাম করে আসছিলেন আজীবন সংগ্রাম করা এই যুবক।
এমইউএইচ/এসআর/এমএআর/পিআর/জেআইএম